ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

দেশে লাশ আনায় বিপাকে স্বজনরা, পাশে দাঁড়ালো ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২
দেশে লাশ আনায় বিপাকে স্বজনরা, পাশে দাঁড়ালো ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাব

কলকাতা: শারদীয় দুর্গা পূজার আগে চিকিৎসা এবং ভ্রমণের উদ্দেশে ভারতে পৌঁছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে শ্রীমন্ত কর্মকার নামে (৫০) এক বাংলাদেশির। কিন্তু তার মরদেহ দেশে নিয়ে আসতে গেলেই দেখা দেয় নানা বিপত্তি।

স্থানীয় হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি পত্র নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে থাকতে হয় স্বজনদের। ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা জানান সঠিক অনুমতি না থাকায় সীমান্ত পার করা যাবে না।

বহু কাকুতি মিনতি করেও কাজ না হওয়ায় সীমান্ত থেকে ফের হাসপাতালে ফিরে আসতে হয় স্বজনদের। বিষয়টি জানতে পেরেই ওই মরদেহ নিজ দেশে নিয়ে আসার ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় কলকাতায় অবস্থিত ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাব। তারা কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপরই উপ-হাইকমিশনের উদ্যোগে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র মেলে।

জানা গেছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মালদহ আসেন বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বেনিচক গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমন্ত কর্মকার ও সন্তোষ কর্মকার নামে দুই ব্যাক্তি।

আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়ানো এবং কলকাতায় চিকিৎসা- এই দুই উদ্দেশ্য নিয়ে তারা ১৬ সেপ্টেম্বর ভারতে যান এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার মঙ্গলবাড়ী খইহাট্টা গ্রামে এক আত্মীয়র বাড়িতে ওঠেন শ্রীমন্ত। এরপর গত  বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) মালদা শহরের বুড়াবুড়িতলা এলাকায় অন্য এক আত্মীয় বাড়িতে যান। কিন্তু সেখানে এসেই অসুস্থ হয়ে পড়েন শ্রীমন্ত কর্মকার নামে ওই বাংলাদেশি। এরপর দ্রুত তাকে মালদা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হলে জানা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার। মরদেহ ময়নাতদন্তও করা হয়।

এরপর হাসপাতাল এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন শ্রীমন্ত কর্মকারের স্বজনরা। কিন্তু হিলি সীমান্তে পৌঁছালে কিছু আইনি জটিলতার কারণে তাদের ফের মালদা হাসপাতালে ফিরে আসতে হয়। এমন অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে তাদের আর্জি, মরদেহ যেন বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

শ্রীমন্ত কর্মকারের চাচাতো ভাই লিটন কর্মকার জানান, বাংলাদেশ মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে লিখিত আনা হয়। কিন্তু সেই মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি আন্তর্জাতিক সীমান্তে আসলে ইমিগ্রশনের পক্ষ থেকে আটকে দেওয়া হয়। তাদের বলা হয়, মরদেহ নিজ দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিয়ে আসতে হবে। যা দেবে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন।

উপায় না দেখে ফের সেই মরদেহ সীমান্ত থেকে ঘুরিয়ে মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মর্গের সামনে রাখা হয়। এরইমধ্যে ওই মরদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কার্যত নিরুপায় হয়ে তারা মেডিক্যাল কলেজে চত্ত্বরে বসে থাকেন। মরদেহ কিভাবে তারা বাংলাদেশে নিয়ে যাবে তা ভেবেই অকুল কিনারায় পড়েন তারা। যদিও বিশেষ অনুরোধের পর ওই মরদেহ ফের হাসপাতালের মর্গের ভিতরে রাখা হয়।

খবর পাওয়া মাত্র সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় কলকাতার ইন্দো বাংলা প্রেসক্লাব। ফোনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মো. বশির উদ্দিনকেও বিষয়টি জানানো হয়। তিনি আশ্বাস দেন মিশনের তরফ থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ করা হবে।

এরপর শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে উপ-দূতাবাসে পৌঁছন শ্রীমন্ত কর্মকারের আত্মীয় সন্তোষ কর্মকার। প্রয়োজনীয় নথী দেখে দ্রুত মরদেহ বাংলাদেশে নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেন বশির উদ্দিন।

এ ব্যাপারে সন্তোষ কর্মকার জানান, ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাবের সহযোগিতা এবং কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের তৎপরতায় খুব দ্রুত কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। ধন্যবাদ জানাই ক্লাব কর্তৃপক্ষকে। ওনারা না থাকলে জানি না কতদিনে বাংলাদেশে যেতে পারতাম।

ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাবের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মিশনের কর্মকর্তা বসির উদ্দীন (ভিসা প্রধান) জানান, ক্লাবের তরফ থেকে আমরা জানতে পারি যে বাংলাদেশের এক নাগরিক মালদায় মারা গেছেন এবং তাকে সীমান্তে দিয়ে পার করা যাচ্ছে না। এরপরই তার আত্মীয়-স্বজনদের উপ-হাইকমিশনে আসতে বলা হয়। এরপর উপ-হাইকমিশনের পক্ষে ফরেনার রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে (এফআরও) যোগাযোগ করে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) শ্রীমন্তের মরদেহ বাংলাদেশে নেওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, ২৩ সেপ্টম্বর ২০২২
ভিএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।