কলকাতা: বিশ্ব পরিচিত ভারতের শহর কলকাতা। যাকে বলা হয় সংস্কৃতির পীঠস্থান।
শহর থেকে গ্রামের অলিগলি জুড়ে বঙ্গবাসী এখন মাতৃ আরাধনায় ব্যস্ত। উমার ঘরে ফেরার পালা। শহর কলকাতার অন্যান্য পুজোগুলোর মধ্যে এবারও কিন্তু ব্যস্ততা মধ্য কলকাতার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। সড়কটি ভারতেন রাজনৈতিক দল, সিপিআইএমের সদর দফতর হিসেবেই পরিচিত। সেখানেই ফুটে উঠেছে ধর্মীয় সম্প্রীতি। সেই মহল্লায় ৯৬০ মুসলিম পরিবারের মধ্যে মাত্র একটি হিন্দু পরিবারের বাস। সেই পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে দুর্গাপূজার সমস্ত আয়োজন করেছেন স্থানীয় মুসলিমরা। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওই অঞ্চলের বাসিন্দা মহম্মদ তৌসিফ রহমান।
সামাজিক সেবায় তৌসিফ এখন কলকাতায় পরিচিত নাম। রমজানের কাঠফাটা রোদ্দুরে নিজ খরচায় সড়কে বসিয়েছিলেন রেফ্রিজারেটর। বিনামূল্যে ঠাণ্ডা পানির স্বাদ পেয়েছিল পথ চলতি শহরবাসী। তৌসিফের অভিনব ভাবনায় কলকাতায় প্রথম গড়ে উঠেছে বাসস্টপ লাইব্রেরি। সেই তৌসিফ, প্রতিবেশীর জন্য দুর্গাপূজার আয়োজন করেছেন। অবাঙালি হলেও তৌসিফের জন্ম, বেড়ে ওঠা কলকাতায়। এখন তিনি নিজেকে কোনোভাবেই অবাঙালি মনে করেন না। তার পরিচয় তিনি বাঙালি।
তৌসিফ বলেন, এই পূজামণ্ডপ থেকে শান্তি, সম্প্রীতি এবং একতার বার্তা দিতে চাই। আমাদের কলকাতার একটা সংস্কৃতি আছে, ঐতিহ্য আছে। আমাদের বাঙালিদের একটা কালচার আছে। আপনি হিন্দু হতে পারেন মুসলমান হতে পারেন -আমরা বাঙালি। আপনি হিন্দু বাঙালি, আমি মুসলিম বাঙালি।
তৌসিফের অভিমত, আপনি যদি আমার ঈদ, আমার কোরবানি ঈদ, আমার ইফতার, শবে বরাত প্রতিটি ফেস্টিভ্যালে শামিল হতে পারেন, তাহলে আজ যখন দুর্গা মায়ের ভোগ হবে কেন তা আমি আনন্দ করে খেতে পারব না? আমার নবী আমাদেরকে বলেছেন, আমি যদি সত্যিকারের মুসলমান হই, আমাকে অন্য ধর্মকেও রেসপেক্ট করতে হবে। সেটাই তো করছি।
যেই পরিবারের উদ্দেশ্যে ওই অঞ্চলে দুর্গাপূজা হয়ে থাকে সেই পরিবারের সদস্য সায়ন্তন মুখার্জি বলেন, আমাদের মধ্যে ম্যাটার করে না কে হিন্দু, কে মুসলমান। ওটা আমাদের কাছে সেকেন্ডারি। আমাদের এই পাড়া একটা পরিবার, উই আর ফ্যামিলি। এখানে দুর্গাপূজা হবে, ঈদ হবে আর তা আমরা একসাথে পালন করে আসছি, আগামী দিনেও করব। আমাদের বাবা, দাদারা করেছেন, আমরা করছি, আশা করি পরবর্তী প্রজন্মও করবে।
সায়ন্তনের মা বলেন, এই পূজার চাঁদা বা অর্থ সংগ্রহ আমরা করি না। এখানে আমাদের কাজ হল পুজোর রীতি রেওয়াজ পালন করা। বাকি সমস্ত আয়োজন চাঁদা তোলা থেকে মণ্ডপ সজ্জা, প্রতিমা কেনা সমস্ত কিছু আমার এই প্রতিবেশীরাই করে থাকেন। আবার রমজানে আমি ও আমার পরিবার ইফতারে জোগাড় করি। এটাই পাড়ার রীতি। এটাই কলকাতার সংস্কৃতি।
প্রাচীন শহর কলকাতা। সম্প্রীতির এ শহরে ঈদের সেমাই যেমন প্রতিবেশীর মধ্যে বিলি করা হয় তেমনি বিতরণ করা হয় দুর্গাপূজার প্রসাদ। এ শহরে, উৎসবের ভীড়ে মিশে যায় সব সম্প্রদায়ের রঙ। আর তৌসিফ, সায়ন্তনের মত যুবসমাজ সব সম্প্রদায়ে আছে বলে গর্ব করে বলা হয়, সম্প্রীতির শহর কলকাতা।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২২
ভিএস