কলকাতা: দুই বাংলার মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাব। ‘সীমানা পেরিয়ে আমরা বাঙালি’ শিরোনামে শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রেসক্লাবটি।
অতিথিদের সংবর্ধনা জানানো হয় এবং মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী রথীন ঘোষ ও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস।
আরও উপস্থিত ছিলেন জয়া আহাসান, চঞ্চল চৌধুরী, মোশারফ করিমসহ দুই বাংলার শিল্পীরা। উপস্থিত ছিলেন দুই বাংলার প্রথম সারির গণমাধ্যমের সম্পাদকরাও।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের পরিচয় করিয়ে দেন ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাবের কনভেনর ভাস্কর সরদার। এরপর অতিথিদের সামনে ভিডিওচিত্রে তুলে ধরা হয় ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাবের নানান কর্মকাণ্ড। সংবর্ধনা জানানোর আগে দুই বাংলার দুই মন্ত্রীর জীবনীভিত্তিক ভিডিওচিত্র তুলে ধরা হয়।
এরপর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর। উত্তরীয় দিয়ে সম্মান জানান ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সত্যজিৎ চক্রবর্তী। তথ্যমন্ত্রীর হাতে শুভেচ্ছাপত্র তুলে দেন মেন্টর পরিতোষ পাল এবং নামাঙ্কিত স্মারক তুলে দেন অপর মেন্টর তপন রায়। কলকাতার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি তুলে দেন প্রেসক্লাবের সদস্য দীপক মুখার্জি।
একইভাবে পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রীকে ফুল, উত্তরীয়, শুভেচ্ছাপত্র ও মিষ্টি তুলে দেন ইন্দো-বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্যরা। পাশপাপাশি সংবর্ধনা জানানো হয় কক্সবাজার-৩ এর সাংসদ সদস্য সাইমুম সারোয়ার কমল, বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস এবং ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তীকে। এরপর প্রেসক্লাবের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন দুই মন্ত্রী।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমি ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাব গঠিত হওয়ায় ক্লাবের সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানাই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আপনারা এই প্রেসক্লাবের মাধ্যমে শুধু দুই দেশের গণমাধ্যমের মধ্যে নৈকট্য বাড়াবেন, শুধু তা নয়, দুই দেশের মানুষের মধ্যে নৈকট্য আরও সুদৃঢ় করতে এই প্রেসক্লাব আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রাজনৈতিক সীমারেখা আমাদের পৃথক করে দিলেও কাঁটাতারের বেড়া আমাদের ভাষা, শিল্প, সংস্কৃতি, আবেগ, উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসাকে বিভক্ত করতে পারেনি। আমরা একই ভাষায় কথা বলি, আমরা রবীন্দ্রনাথের গান গাই, নজরুলের গান গাই। আমরা একই পাখির কলতান শুনি, আমরা একই নদীর কলতানে গড়ে উঠেছি। সুতরাং রাজনৈতিক সীমানা বা কাঁটাতারের তৈরি বেড়া প্রতিবন্ধকতা হলেও আমাদের মধ্যে ভালোবাসার একাট্টায় বাধা নেই। আমি মনে করি সেই ভালোবাসাকে আরও গভীরে গ্রথিত করার ক্ষেত্রে ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাব বড় ভূমিকা রাখবে।
মন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটা মধুর সম্পর্ক আছে। মমতা তাঁকে দিদি বলে সম্বোধন করেন। তেমনি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মধ্যেও একটা গভীরতর সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিনিধিদের উচিত সেই সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কলকাতার বঙ্গবন্ধু গবেষক সৌগত। রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. কঙ্কনা মিত্র। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ছিল সাংবাদিক এবং অতিথিদের প্রশ্নোত্তর পর্ব।
‘সীমানা পেরিয়ে আমরা বাঙালি’ এমন শিরোনাম প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বলেন, যেমন মাছ, পাখি, পানি ও বাতাসের সীমানা হয় না। তেমনি বাঙালির শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং বাংলা ভাষারও কোনো সীমানা হয় না। মানুষকে কাঁটাতারের বেড়াজালে আটকে রাখা যায় কিন্তু সীমানা বেঁধে রাখতে পারে না বাঙালি সত্তা এবং বাঙালিয়ানা। দুই পারের বিশিষ্ট বাঙালি একত্রিত হওয়া এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ