ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

তিন দেশের অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে ভারত

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২২
তিন দেশের অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে ভারত

কলকাতা: প্রতিবেশী পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে আগত অ-মুসলমানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণা দিল ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

চলতি বছরের শেষ দিকেই ভারতের গুজরাট রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন।

কয়েকদিনের মধ্যে দেশটির নির্বাচন কমিশন গুজরাট বিধানসভা ভোটের তফসিল ঘোষণা করবে। তার আগেই এমন ঘোষণা এলো।  

সোমবার (৩১ অক্টোবর) ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। আপাতত গুজরাটের দুই জেলা- মেহসানা ও আনন্দেই এই নাগরিকত্ব প্রদান কার্যকর হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মেহসানা ও আনন্দ জেলার জেলাশাসক কর্তাদের কাছে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, তারা পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে এই দুই জেলায় আগত (২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রিস্টান ও পার্শিদের আবেদনের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে তারাই আবেদন করতে পারবে যারা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে এসেছে।  

কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ১৬ নম্বর ধারা ও ২০০৯ সালের নিয়ম অনুসারে, এই নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। ১৯৫৫ নাগরিকত্ব আইনের অধীনে ৬ নং ধারা অনুযায়ী নাগরিকরা সংশাপত্র পাবেন। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সংখ্যালঘু অমুসলিম অর্থাৎ ৬ সম্প্রদায়ের মানুষ -হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি এবং খ্রিস্টান যারা ভারতের গুজরাট রাজ্যের আনন্দ এবং মেহসানা জেলায় বসবাসকারী, তাদের ওই দুই জেলার কালেক্টররা নাগরিকত্ব প্রদান করবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে কিছু নিয়মের কথাও বলা হয়েছে। যেমন- আবেদন অনলাইনে করতে হবে। আবেদনকারীর আবেদন যাচাই করবেন জেলাস্তরে কালেক্টররা। অনলাইন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যে সব আবেদন যোগ্য মনে করা হবে তাদেরই জেলা কালেক্টর নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা নেবে। যদিও গুজরাট নির্বাচন বলেই বিষয়টা বড়ভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

এর আগে চলতি বছর আগস্টে, দেশটির গুজরাট রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাঙ্ঘভির নেতৃত্বে আমেদাবাদ কালেক্টরেটে ৪০ জন পাকিস্তানি হিন্দুকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল। সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ২০১৭ সাল থেকে, জেলা কালেক্টর কর্তৃক মোট ১০৩২ জন পাকিস্তানিকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ এবং ২০১৮ সালের এক বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, আহমেদাবাদ, গান্ধীনগর এবং কচ্ছের রান জেলা প্রশাসনের হাত দিয়ে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে বসবাসকারী হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি এবং খ্রিস্টান-সহ সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালে, এখনও পর্যন্ত ১০৭ পাকিস্তানি হিন্দুকে আহমেদাবাদ জেলা ভারতীয় নাগরিকত্ব দিয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রতিবেশী দেশ- বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের জন্য ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু এখনই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন(সিএএ) কার্যকর হচ্ছে না। মোদী সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে সিএএ কার্যকর করার সময়সীমার মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

তবে তিন দেশের সংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত পশ্চিমবেঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) জানিয়েছেন, এক যাত্রায় পৃথক ফল হবে না। গুজরাটের পর পশ্চিমবঙ্গেও সিএএ প্রয়োগ হবে। এতে মতুয়া সম্প্রদায়ের সুবিধা হবে।  

অর্থাৎ ধারনা করা হচ্ছে ভারতে লোকসভা ভোটের আগে ১৯৫৫ বা তারপর সংশোধিত ২০১৯ এর নাগরিকত্ব আইন পশ্চিবঙ্গেও কার্য়কর হতে পারে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গে মতুয়াদের এতদিন ভিসা বা চাকরির জন্য বলা হত ৭১ সালের আগের নথি দেখানোর কথা। সেই সমস্যা আর হবে না।

নাগরিকত্ব ইস্যুতে শুভেন্দু অধিকারীর দাবি নিয়ে সোচ্চার তৃণমূলের মুখপত্র কুণাল ঘোষ। এদিন কুনাল বলেছেন, দ্বিচারিতা করছে মোদী সরকার ও শুভেন্দু। গুজরাটের সেতু বিপর্যয় ও কেন্দ্রের নানা দুর্নীতি থেকে মুখ ঘোরাতেই এই ধরনের হাওয়া ছড়াচ্ছে ওরা। শুভেন্দুই তো এক সময় সিএএ কার্যকর করতে দেবে না বলে সরব হয়েছিলেন। এবার অন্য কথা বলতে হচ্ছে কারণ ওর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাই বাঁচতে এসব কথা বলছেন। প্রসঙ্গত, শুভেন্দু তৃণমূলে থাকাকালীন সিএএর বিরোধিতা করেছিলেন।

প্রতিবাদ করেছে বাম ও কংগ্রেসও। সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, শুভেন্দু সিএএ নিয়ে যা বলছেন তার সঙ্গে সংবিধানের কোনও সম্পর্ক নেই। কেনো সিএএর আইন কার্যকর হল না? কারণ সিএএ প্রয়োগ এত সোজা নয়। জোর করে সিএএ কার্যকর করতে গেলে ঠেলা বিজেপি বুঝবে।

পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী এদিন বলেছেন, গুজরাট ভোট নিয়ে মোদীজিরা চিন্তায় রয়েছেন। তাই ভোটের আগে বিভাজনের রাজনীতি শুরু করলেন। ভোট এলেই সিএএ, এনআরসি আসে। এতে বিজেপির গুজরাটে এবং পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতের আগে দিদির (মমতা) লাভ হবে।

কলকাতার এক আইনজীবী শুভদীপ চট্টোপাধ্যায় সহজ ভাষায় বলেন, ১৯৫৫ সাল থেকে ভারতে নাগরিকত্ব আইন ছিল। সেই ধারা অনুয়ায়ী ধর্মীয় নিপীড়িত কমপক্ষে ভারতে তাদের ১১ বছর থাকতে হতো। মোদী সরকার এসে তা ৫ বছর করেছে। অর্থাৎ ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বা তার আগে যারা ভারতে অবস্থান করছে তারই এই আইনের আওতায় পড়বে। অর্থাৎ কেউ যদি ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি আবেদন করেন তা ধার্য হবে না। আইন অনুযায়ী, এটাই এখন আছে। এর সাথে আরও ছোট ছোট পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে মূল এটাই। তবে ২০১৯ সংশোধিত আইন (সিএএ) এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই ১৯৫৫ সালের আইন কার্যকর করা হচ্ছে। এটাই আপাতত কেন্দ্রীয় গেজেটে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২২
ভিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।