ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় কলকাতায় ডেঙ্গুর হার বেশি, মৃত ৩

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২২
পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় কলকাতায় ডেঙ্গুর হার বেশি, মৃত ৩

কলকাতা: বাংলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ। বিগত দিনের করোনাকালীন অবস্থার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে ডেঙ্গু সংক্রমণ।

প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, সঙ্গে মৃত্যুও। গোট বাংলার তুলনায় কলকাতায় পজিটিভি রেট দ্বিগুণ। আবার শহরের নিরিখে দক্ষিণ কলকাতায় সংক্রমণের হার ৮৫ শতাংশ।  

সোমবার (৭ নভেম্বর) স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে শহরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২,৮০০ জন। গোটা রাজ্যের সংখ্যাটা ২৫ হাজারের কাছাকাছি। যদিও বিরোধীদের মত, শহর এবং রাজ্য দুইস্থানে সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি।  

তবে কলকাতা যে ডেঙ্গুর আঁতুড় ঘর তা অস্বীকার করছে না স্বয়ং পুরসভা প্রশাসকরাও। দুদিন আগেই কলকাতায় ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সহকারী প্রধান অনির্বাণ হাজরা (৪২), করোনায় সময় তার অবদান এখন ভোলেননি শহরবাসী। বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতেও সমানতালে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ফাইট করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু করোনা তাকে কেড়ে না নিলেও ডেঙ্গু থেকে শেষরক্ষা পেলেন না।

সোমবার (৭ নভেম্বর) আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতায় পার্কসার্কাস এলাকায় বাসিন্দা ছিলেন বুবাই হাজরা। সরকারি নীলরতন (এনআরএস) হাসপাতালে সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ করতেন বুবাই (৩০)। যে হাসপাতালে চাকরি করতেন, গত সোমবার (৩১ অক্টোবর) থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন সেই হাসপাতালেই। এদিন মৃত্যু হয় তার। সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন সোমনাথ দে (৫০)। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনিও।

এদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল দমদমের নাগেরবাজার এলাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের পরিজনরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পৌঁছয়। দীর্ঘক্ষণ পুলিশ মোতায়েন ছিল সেখানে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম শিল্পী সাহা (৫৪)। তিনি দক্ষিণ দমদমের তেলিপুকুরের বাসিন্দা।

তথ্য মতে শহরে, শেষ মাসের চার সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ছিল ৬০৬, ৫৯৬, ৭৪৫ এবং ৬৮১ জন। পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায় প্রতিদিন কলকাতায় কি হারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি তথ্যই বলছে, গোটা বাংলার মধ্যে কলকাতা করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত এলাকায় ডেঙ্গুর হার সব চাইতে বেশি।

গত শুক্রবার (৪ নভেম্বর) শহরের ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে এক শিশুর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ওই ওয়ার্ডে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তর সংখ্যা। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, চিন্তা বাড়াচ্ছে ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। এরসাথে  ১০১, ১০৬, ১০৭ এবং ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ইএম বাইপাস সংলগ্ন ওয়ার্ডগুলির পরিস্থিতিও খারাপ। পরিস্থিতি ভাল নয় মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ৮২ নম্বর ওয়ার্ডেরও। ওই ওয়ার্ডে শেষ চার সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬৭, ৮৩, ৯৯ এবং ১০১ জন।

এছাড়া  ৮১, ৯৩, ৯৮, ৯৯, ১১৫ ও ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। পুরসভার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, গত তিনমাস ধরে এই সব ওয়ার্ডগুলিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মানুষকে সচেতন হতে অনুরোধ করেও লাভ হচ্ছে না। শীত জাঁকিয়ে না পড়লে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার কমবে না। যদিও অভিযোগ উঠছে, চলতি বছরে মশাবাহিত রোগ দমনে নাগরিকদের সচেতন করতে পুর ও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সদর্থক ভূমিকাই নেওয়া হয়নি।

কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক এবং বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষেদের অভিযোগ, একমাত্র কলকাতা পুরসভারই ভেক্টর কন্ট্রোল (মশা দমন) বিভাগ রয়েছে, যার জন্য বছরে মোটা অর্থ খরচ হয়। অথচ মশাবাহিত রোগের প্রকোপ কমার লক্ষণ নেই কলকাতায়। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, দফতর কী কাজ করছে। তবে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের যুক্তি, মশাবাহিত রোগ সচেতনতায় পুরসভা বছরের শুরু থেকেই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচার চালিয়েছে। মানুষ সচেতন না হলে এই রোগ নির্মূল করা কঠিন।

সাধারণ নাগরিকদের দাবি, সচেতন করার কাজ, নির্দেশিকা জারি এবং লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের। একজন সাধারণ নাগরিক লোকাল ট্রেনে যে ব্যবহার করেন সেই নাগরিকই মেট্রো রেলে বা বিমানে সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায়। কারণ একটাই, সরকারের নজরদারী। বিগত বছরগুলোর মতন চলতি বছর ডেঙ্গু দমনে গাছাড়া মনোভাব প্রশাসনের। কখন জাঁকিয়ে শীত পড়বে আর ডেঙ্গু কমবে তার অপেক্ষায় আছে।

এদিন ‘বাংলার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে’, এই তথ্যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী নেতা, শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি নেতা শুভেন্দুর অভিযোগ, ‘রাজ্য সরকারের অযোগ্যতার কারণেই এই পরিস্থিতি। ’ তিনি রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর অনুরোধ করেছেন। তবে বিরোধী দলনেতার অভিযোগ আমল দিতে নারাজ তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। তিনি বলেছেন, ‘কে চিঠি পাঠালেন, একজন বিশ্বাসঘাতক। যাকে চিঠি পাঠালেন, তারাই তো ভারতে করোনা বাড়িয়েছিল। আর যারা আসবে অর্থাৎ কেন্দ্রীয় টিম! সেই টিম তো কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গুলি হেলনে কাজ করে!

বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২২
ভিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।