ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

আর্জেন্টিনার হারে কলকাতায় হতাশা!

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২২
আর্জেন্টিনার হারে কলকাতায় হতাশা!

কলকাতা: শুরুতেই অঘটন। সৌদি আরবের কাছে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই হেরে বসলো আর্জেন্টিনা।

দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসি পেনাল্টিতে গোল করলেন ঠিকই। কিন্তু, তাঁর দলকে ২-১ গোলের পরাজয় বরণ করে নিতে হলো। আর তাই শেষ বাঁশি বাজার পর মেসির মুখ ছিল অভিব্যক্তিহীন। সকলের সাথে করমর্দন করলেন। কিন্তু, মঙ্গলবার তা ছিল শুধু পেশাদারি সৌজন্য বিনিময়। ক্যামের ঠিকভাবে তাকে ধরলে দেখা যেত তাঁর চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুবিন্দু! আজ তাঁর শূন্যদৃষ্টি কি জানান দিচ্ছিল সবকিছু শেষ?

খেলা হচ্ছে কাতারে। নিশ্চয়ই আজ মন বিষণ্ন থাকবে আর্জেন্টিনাবাসীর। তবে সেই দেশ থেকে সাত সমুদ্দুর দূরে কলকাতা। সেখানেও বাকরুদ্ধ মেসিপ্রেমীরা। কিছুতেই মানতে পারছেন না বিশ্বকাপের মাত্র তৃতীয় দিনেই প্রিয়দলের এত বড় অঘটন। বিষণ্ন শুধু কলকাতাবাসী নয়, বিষণ্ন আর্জেন্টিনার বাংলাদেশি সমর্থকরাও।

কলকাতায় এই মুহূর্তে অবস্থানরত আর্জেন্টিনাপ্রেমী বাংলাদেশির সংখ্যা কম নয়। আজ তারা চিকিৎসা, শপিং সব বাদ দিয়ে স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটের আগে হোটেলবন্দি করে রেখেছিলেন নিজেদের। কিন্তু খেলা শেষ হতেই সব যেন শেষ—এরকম একটা মনোভাব।

পথচারী সাজ্জাত, যিনি আর্জেন্টিনার সমর্থক তা মুহূর্তেই বোঝা গেলো। তার সঙ্গে থাকা ছোট্ট মেয়ের বায়না, ‘আব্বু বের হলে চকলেট খাওয়াইবা কইছিলা? কই দাও’। পাশ থেকে মায়ের ধমক, ‘এখন না, পরে’। স্ত্রীর প্রশ্ন, 'সাজ্জাদ, টাকা ভাঙাবে না?‘ মুখভার বাবার চাহনিটাও অনেকটা মেসির মেতো শূন্যদৃষ্টি! কানে ফোন নিয়ে, স্ত্রীকে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়েই কাকে যেন বলছেন, ‘দোস্তো এটা কোনো খেলা হইলো? মনে হয় আর পারবে না!’

কলকাতার বাড়ি বাড়ি আর্জেন্টিনা সমর্থকদের হয়ত এই হাল! তবে এখনই এই হাল ছাড়তে রাজি নন কলকাতার সমর্থকেরা। পাড়ার চায়ের দোকানে খেলার বিশ্লেষণ করছেন বিক্রম। হা, করে শুনছেন বাকিরা। ‘ম্যাচ হেরেও মেসিরা কি নকআউট পর্বে যেতে পারে?’ আরে কী বলেন, ‘আলবাত পারবে!’

‘আগামী ২৭ নভেম্বর আর্জেন্টিনা খেলবে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে, তৃতীয় ম্যাচ হবে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১ ডিসেম্বর। ব্যাক-টু-ব্যাক ম্যাচ জিতে মেসিদের তুলে নিতে হবে ছয় পয়েন্ট। এর ফলে মেসিরা গ্রুপ্রে দ্বিতীয়স্থানে শেষ করেও চলে যাবে নক আউটে। ’

বিক্রম আরও বলেই চলেন, ‘তবে মেসিদের আগামী দুই ম্যাচে শুধু জিতলেই হবে না। গ্রুপ সি-তে তিনটি দলেরই ছয় পয়েন্ট নিয়ে শেষ করার সম্ভাবনা প্রবল। সে ক্ষেত্রে একটি দলকে বিদায় নিতেই হবে। তখন দেখা হবে গোল পার্থক্য। যার মানে দাঁড়াচ্ছে যে, আর্জেন্টিনাকে আগামী দুই ম্যাচেই জিততে হবে বড় ব্যবধানে। ’

কলকাতাকে বলা হয় ফুটবলের তীর্থস্থান। এ  শহরে ‘ফুটবল-জ্বর’ সবচেয়ে বেশি। তবে বাঙালির ফুটবল মাতোয়ারা এ শহর এখনও সেজে ওঠেনি। এখনও পথেঘাটে, বাড়ির ছাদে সমর্থকদের ওড়ানো পতাকা নজরে আসেনি। বিগত বছরগুলোর মতো এখনও বিশ্বকাপে সেজে ওঠেনি কলকাতা। অবশ্য সবে তো শুরু। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার ছন্দপতন। সমর্থকদের যতটা না খারাপ লাগেছে প্রিয় দল হারায়, তারচেয়ে বেশি গাত্রদাহ ধরাচ্ছে ব্রাজিল ও জার্মানি সমর্থদের টিপ্পনি। এমনই সব ছবি আর্জেন্টিনা হারায় ভেসে উঠছে কলকাতার পথে পথে।

দেখা গিয়েছির টসের সময় মেসির পেছন থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ট্রফির বিশাল প্রতিকৃতি। প্রথম ম্যাচের পর মেসির কাছ থেকে সত্যিই কি আরও দূরে চলে গেল বিশ্বকাপ? চোখে অবিশ্বাস, শরীরে ক্লান্তি নিয়ে মাঠ ছাড়লেন মেসি। ততটাই হতাশ সমর্থকেরাও। বয়সের ভারে মেসি কি হারিয়েছেন গতি? কমেছে পায়ের ধার? প্রশ্ন, কলকাতার মেসি-সমর্থকদের।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।