কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিল, যারা অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন, পরিবারের কথা ভেবে তাদের যেন বঞ্চিত না করা হয়। যারা বঞ্চিত, এসএসসি তাদের জন্য কিছু শূন্যপদ তৈরি করছে।
এদিন হাইকোর্টে হাজিরা দিয়েই কার্যত বোমা ফাটালেন শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নির্দেশেই অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়েছিল। মণীশ জৈনের কথায় ভরা আদালতে চূড়ান্ত বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
এরপরই বিচারকের প্রশ্ন, শিক্ষামন্ত্রী যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তার কোনো নোট দেখাতে পারবেন? আপনার (মণীশ জৈন) কি মনে হয় অবৈধদের চাকরি বাঁচানোর জন্য কোনো মন্ত্রিসভা বৈঠক করতে পারে? এটি কি একটি রাজ্যের শাসন পদ্ধতি? না, আমি বোঝার চেষ্টা করছি যে, রাজ্যের মন্ত্রিসভা কিভাবে অবৈধ চাকরিপ্রাপকদের চাকরি রক্ষা করতে পারে? এমনকি এ নিয়ে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে মন্ত্রীসভায়? মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত কি ভারতীয় সংবিধানযোগ্য? বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাকে জানতেই হবে। শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য নয়, এরকম সিদ্ধান্ত পুরো ভারতের জন্য বিপজ্জনক। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি যদি সঠিক ব্যক্তির হাতে না যায়, তবে তার উন্নতি সম্ভব নয়।
বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষাসচিব আবারও বলেন, উপযুক্ত স্তর থেকেই আমাদের কাছে নির্দেশ এসেছিল। শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি এ বিষয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথাও বলেছিলেন। আইন দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। এমনকি এসএসসির চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা হয়। মুখ্যসচিবকে জানিয়ে ক্যাবিনেটে নোট পাঠানো হয়েছিল।
বিচারক অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এবার আমি ক্যাবিনেটকে পার্টি করে দেব, সবাইকে এসে উত্তর দিতে হবে। আমি বিস্মিত হচ্ছি, কীভাবে ক্যাবিনেটে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়? ক্যাবিনেটকে প্রকাশ্যে বলতে হবে যে তারা অযোগ্যদের পাশে নেই।
চলতি বছরের ১৯ মে মাসে রাজ্য সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ৬ হাজার ৮২১টি শূন্যপদ তৈরি করা হচ্ছে। এই পদগুলোতে গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি, নবম-দশমের শারীর শিক্ষা ও কর্মশিক্ষার যোগ্য বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আদালতের নির্দেশ ও সব রকম নিয়ম মেনে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি আদালতে আবেদন জানিয়েছিল, যারা অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন তাদের পরিবারের কথা ভেবে যেন তাদের বঞ্চিত না করা হয়। যারা বঞ্চিত, এসএসসি তাদের জন্য কিছু শূন্যপদ তৈরি করছে। এসএসসি-র সেই আবেদনে ১৭ নভেম্বর চটেছিলেন বিচারক। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাসচিবকে তলব করা হয়।
পরে অবস্থান বদল করে এসএসসি। বিচারপতির অসন্তোষ প্রকাশের পর এসএসসির আইনজীবী আদালতকে জানান, সংস্থাটির চেয়ারম্যান লিখিত বার্তা দিয়েছেন। তাই তারা বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের পুনর্বহালের জন্য আর কোনও আবেদন করবেন না আদালতে। গত বুধবার সেই মামলা ওঠে বিচারক অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। আবেদন প্রত্যাহার করার অনুমতি চায় এসএসসি। তাতেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারক গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, আমি কিছু দালালদের নাম বলতে পারি, যারা মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত এবং কিছু মন্ত্রীর নাম বলতে পারি, যারা প্রকাশ্যে বলেছেন কারও চাকরি যাবে না।
কিন্তু শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) মামলটি ফের কলকাতা হাইকোর্টে উঠতেই নাটকীয় মোড় নেয়। ভরা আদালতে রাজ্যের শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন জানিয়ে দেন, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নির্দেশেই অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়েছিল, যা নিয়ে চূড়ান্ত বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য রাজ্যের মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের নোট হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে সুরক্ষিতভাবে গচ্ছিত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, ২৫ নভেম্বর ২০২২
ভিএস/আরএইচ