ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প

ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা ‘পরিদর্শন’ তদারকি করবে বিজিএমইএ

ইয়াসির আরাফাত রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯
ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা ‘পরিদর্শন’ তদারকি করবে বিজিএমইএ

ঢাকা: সাভারের রানাপ্লাজা ধসের পর পোশাক শিল্প কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স চাপে রেখেছিলো বাংলাদেশকে। কিন্তু দীর্ঘ চার বছরের বেশি সময়ের পর উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ ও ভালো পদক্ষেপের কারণে দুই ক্রেতা জোটের চাপের মুখে আটকে যায়নি তৈরি পোশাক খাত। এ সময়ে সুনাম কুড়িয়েছে দেশ, বেড়েছে দেশের রফতানি।

গত ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ায় ইতিমধ্যে অ্যালায়েন্স কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়ে দেশ ছেড়েছে। অ্যাকর্ডেরও মেয়াদ শেষ, তারাও বিদায় নেবার পথে।

পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ রক্ষায় অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার, বিজিএমইএ ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় রিমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেন্স সেল (আরসিসি)। ক্রেতাজোট দু’টির পরিপূরক হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা পরিদর্শন ও ছাড়পত্র দেবে এ সংস্থা।

তবে পোশাক শিল্পের ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা পরিদর্শনে মনিটরিংয়ের কাজ করবে তৈরি পোশাক মালিক রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। কিন্তু বিজিএমইর মনিটরিং নিয়ে আবারও ক্রেতাজোট বাধ সাধতে পারে এমন আশঙ্কা বিশিষ্টজনদের। তাদের মতে, আরসিসি স্বাধীনভাবে কাজ করলে আরো ভালো অবস্থানে যাবে পোশাক খাত।

পোশাক শিল্পে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ‘রানাপ্লাজা ধস’ নামে এক কলঙ্ক নেমে আসে। এ ঘটনায় নিহত হন ১১শ’ শ্রমিক। এরপর পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ উন্নত করতে উত্তর আমেরিকা ক্রেতাজোট অ্যালায়েন্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড গঠন করা হয়। তারা  কারখানা পরিদর্শন করে ও ত্রুটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। কর্মপরিবেশের উন্নতি না হওয়ায় তিন শতাধিকের বেশি কারখানার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তাদের কাজ-কর্মে অনেক বিতর্ক তৈরি হয় দেশে।

পরে তাদের মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকার, বিজিএমইএ ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় রিমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেন্স সেল বা সংস্কার সমন্বয়ক সেল (আরসিসি)।
প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতা জোট দু’টির পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। আর এ কাজের মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করবে বিজিএমইএ।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, রানাপ্লাজা ধসের পর ইমেজ সংকট কাটিয়ে উঠেছে পোশাক খাত। উন্নত হয়েছে কারখানা ও কর্মপরিবেশ। বিশ্বের ১০টি প্লাটিনাম কারখানার ৭টি বাংলাদেশে। ৮০টি গ্রিন কনসেপ্ট কারখানা উৎপাদনে আছে। আরো অনেকগুলো কারখানা উৎপাদনের অপেক্ষায়। সব কারখানায় সরকার ঘোষিত বেতন কার্যকর করা হয়েছে।
অন্যদিকে রানাপ্লাজা ধসের পর কেন্দ্রীয়ভাবে সব শ্রমিককে তথ্যভাণ্ডারে নিতে কাজ শুরু করে বিজিএমইএ। এখন পর্যন্ত ৩০ লাখ শ্রমিককে যুক্ত করা হয়েছে তথ্যভাণ্ডারে। দেড় হাজার বন্ধ কারখানা উৎপাদনে নিতে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি রক্ষায় বিজিএমইএ, বিকেএমইএকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। খুঁজতে হবে নতুন নতুন ক্রেতা দেশ। অন্যদিকে দেশের স্বার্থে, দেশের শিল্পের স্বার্থে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে আরসিসিকে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আলী নূর বাংলানিউজকে বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপের ক্রেতাজোট নিজেদের খরচে কাজ করতো। তারা স্বউদ্যোগে কারখানার কর্মপরিবেশ পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে অনেক কারখানাকে তাদের তালিকায় এনেছেন, অনেককে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এখন সবার সমন্বয়ে আরসিসি গঠন করা হয়েছে। তারা পরিদর্শন ও ছাড়পত্র দেবে এটা ভালো উদ্যোগ। তবে বিজিএমইএ যদি মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকে তাহলে এ কাজে বাধা আসতে পারে।  

স্বচ্ছতার সঙ্গে আরসিসি’কে কাজ করার তাগিদ দেন অধ্যাপক আলী নূর। পাশাপাশি রফতানি বাড়াতে বিজিএমইএকে নতুন নতুন ক্রেতা দেশ খুঁজতে পরামর্শ দেন তিনি।

বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা পরিদর্শন ও ছাড়পত্র দেবে আরসিসি। আমরা (বিজিএমইএ) শুধু মনিটরিংয়ে থাকবো। তবে সব কাজ স্বাধীনভাবে করবে আরসিসি।  

তিনি বলেন, অনেক কারখানা এখন উৎপাদনে নেই। আমরা নিজেরা উদ্যোগ নেব তাদের জন্য, পোশাক শিল্পের বিকাশে। সবাই মিলে দেশের শিল্পকে এগিয়ে নিতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮
ইএআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।