ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

জাতীয় জরুরি টেলিযোগাযোগ সিস্টেম স্থাপনের উদ্যোগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২২

ঢাকা: বন্যাসহ দুর্যোগকালীন দূর্গত এলাকায় টেলিযোগাযোগ সেবা সচল রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
 
দুর্যোগকালীন দুর্গত এলাকায় টেলিযোগাযোগ সেবা সচল রাখতে সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) ‘জাতীয় জরুরি টেলিযোগাযোগ সিস্টেম’ স্থাপন বিষয়ক কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়।


 
বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কক্ষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি‌র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এন ওয়াদুদ, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশেনর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ মশিউর রহমান। কর্মশালায় সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণলায় ও সংস্থার প্রতিনিধি, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং এনজিওর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
 
দুর্যোগকালীন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতে সরকারি টেলিকম সংস্থাসমূহ এবং সশস্ত্র বাহিনীসহ সরকারি বাহিনীসমূহের বর্তমান সক্ষমতা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কর্মশালায় আলোচনা করা হয়।
 
এ সম্পর্কিত সুপারিশমালায় অংশগ্রহণকারীরা দুর্যোগকালীন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চতে জাতীয় দুর্যোগ টেলিকম নীতিমালা প্রণয়ন, সাইক্লোন সেন্টারসমূহে টেকসই টেলিকম সংযোগ স্থাপন এবং দুর্যোগকালীন বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ সক্ষমতা তথা সেলুলার মোবাইল, ভিস্যাট, স্যাটেলাইট ফোন, ব্রডব্যান্ড ও ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক, পিএমআর (ওয়াকিটকি), কমিউনিটি রেডিও, অ্যামেচার রেডিও, এনটিটিএন পপ, বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারের ব্যবহারের বিষয়টি উপস্থাপন করেন।
 
দুর্গত এলাকায় টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতে জাতীয় জরুরি টেলিযোগাযোগ সিস্টেম স্থাপনে আধুনিক টেলিকম নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি বিষয়ক প্রস্তাবনা করেন অংশগ্রহণকারীরা।
 
এ নিয়ে সুপারিশমালায় অংশগ্রহণকারীরা বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি উন্নয়য়নে পাশাপাশি উদ্ধার কার্যক্রমে এইচএফ, ভিএইচএফ প্রযুক্তি, ভিস্যাট ও ওয়াকিটকির ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং জনসচেতনায় মোবাইল নেটওয়ার্ক, পাবলিক ওয়াইফাই ও কমিউনিটি রেডিওর ব্যবহার এবং জাতীয় জরুরি টেলিযোগাযোগ সিস্টেম স্থাপনের জন্য দুর্যোগপ্রবণ এলাকা চিহ্নিতকরণ, একটিভ টাওয়ার শেয়ারিং, অপটিক্যাল ফাইবার, মাইক্রোওয়েভ ও ভিস্যাটের ব্যবহার এবং টেকসই পাওয়ার তথা ব্যাটারি, সোলার বা জেনারেটর ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের সুপারিশ করেন।
 
প্রস্তাবিত জরুরি টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহের চ্যালেঞ্জসমূহ ও উত্তরণের উপায় নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা জানান, যে সব স্থাপনা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয় সেখানে যথাযথ নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে টেলিকম স্থাপনা নির্মাণে সুনিদিষ্ট বিধান অন্তর্ভূক্ত করা, আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা প্রবর্তন, সরকারি সব স্থাপনা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আশ্রয়কেন্দ্র সোলার স্থাপন, দুর্যোগের ধরন অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক রিসোর্স এলোকেশন এবং মবিলাইজেশন প্ল্যান নির্ধারণের সুপারিশ করেন। এছাড়া, দুর্যোগকালীন মোবাইল অপারেটরদের ক্ষতিগ্রস্ত নেটওয়ার্ক মেরামত, বিকল্প মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু, এনটিটিএন নেটওয়ার্ক পুনঃনির্মাণ, টাওয়ারে দ্রুততম সময়ে পোর্টেবল জেনারেটর বা এক্সট্রা ব্যাটারি সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন বিষযটিও উল্লেখ করনে তারা।
 
দুর্যোগকালীন জরুরি টেলিযোগাযোগ সেবা পরিচালনাকারী সংস্থাসমূহ নির্ধারণ এবং তাদের কার্যপরিধি নির্ণয় নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলকে দুর্যোগকালীন প্রধান সমন্বয়কারী রাখার সুপারিশ করেন এবং দুর্যোগকালীন উক্ত সংস্থাকে সহায়তা প্রদান করবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এছাড়া, দুর্যোগকালীন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের জন্য বিটিআরসিতে আলাদা একটি সেল গঠন এবং দুর্যোগকালীন দ্রুততম সময়ে লো অরবিট স্যাটেলাইট ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিকম সেবা সচল রাখারও সুপারিশ করে তারা।  
 
স্বাগত বক্তব্যে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, তথ্য প্রযুক্তির যুগে টেলিযোগাযোগ মানুষের জীবনমান বাড়ানোর পাশাপাশি কমিয়েছে ধনী-দরিদ্রের ডিজিটাল বিভাজন। জরুরি টেলিযোগাযোগ সেবা স্থাপনে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত মতামত প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন এবং মানসম্মত ইন্টারনেট ও ভয়েস কল সেবা নিশ্চিতে বিটিআরসি কাজ করে যাচ্ছে।
 
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ।  

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য দিয়ে তিনি জানান, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের গড় বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতি জিডিপির প্রায় ১.৩২ শতাংশ এবং টাকার হিসাবে যা ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। এছাড়া, বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তিন কোটি ৪১ লাখ মানুষ। বাসস্থান এবং অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৩ হাজার ২৩১ কোটি টাকা।  

তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বন্যার কারণে মোবাইল অপারেটরদের প্রায় ৪৫ ভাগের বেশি বিটিএস সাইট (টাওয়ার) ডাউন তথা অচল হয়ে যায়।
 
সাম্প্রতিককালে দুর্যোগে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহ ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশংসনীয় উল্লেখ করে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কর্মশালায় উপস্থাপিত সুপারিশমালা জাতীয় জরুরি টেলিযোগাযোগ সিস্টেম বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এন আহমেদ বলেন, মানসম্মত ও উন্নত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা হ্রাস করবে এবং দুর্যোগ সহনশীলতা অর্জনে প্রযুক্তিগত অবকাঠামো স্থাপন এবং সমন্বিত জরুরি টেলিযোগাযোগ নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
 
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের মহাপরিচালক হোসেন মোহাম্মদ মশিউর রহমান দুর্যোগ সহনশীলতা অর্জনের জন্য একটি আধুনিক ও প্রযুক্তিগত টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেন।  
 
দুর্যোগকালীন দুর্গত এলাকায় জরুরি টেলিকম সেবা স্থাপন অপরিহার্য উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব খলিলুর রহমান বলেন, দুর্যোগের পূর্বাভাস, দুর্যোগ চলাকালে তথ্য ও দুর্যোগ পরবর্র্তী উদ্যোগের বিষয়টি সমন্বিতভাবে করা গেলে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস হওয়ার পাশাপাশি পুনবার্সন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যার মত পরিস্থিতি যাতে ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য টেকসই টেলিযোগাযোগ সিস্টেম স্থাপনে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
 
জাতীয় দুর্যোগে টেলিযোগাযোগের গুরুত্ব অপরিসীম এবং কর্মশালার সুপারিশমালা জাতীয় জরুরি টেলিযোগাযোগ সিস্টেম বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।  
 
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ‘এক দেশ এক রেট’ বাস্তবায়নের পর মোবাইল ইন্টারেনটের ক্ষেত্রে একটি গ্রহণযোগ্য মূল্য নির্ধারণের কাজ চলছে বলে জানান মন্ত্রী।
 
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসাইন, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এহসানুল কবীর, লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২২
এমআইএইচ/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।