ময়মনসিংহঃ গত ক’দিন ধরে রাতে ময়মনসিংহ শহরে নামে পায়ে হাঁটা মানুষজনের (কামলাদের) দীর্ঘ মিছিল। মানুষের এ ক্ষণস্থায়ী স্রোত গ্রাম থেকে শহরমুখী।
শহরের গাঙ্গিনারপাড় মোড়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা আসছে শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরের উপজেলা মুক্তাগাছা থেকে। তাদের কারও গন্তব্য মোহনগঞ্জ। কেউ কেউ যাবে ভৈরব।
বৃহস্পতিবার বিকেলের দৃশ্য হঠাৎ চমকে যাবার মতো। এক সঙ্গে অনেক লোক। সবার মাথায় বাঁশের লাঠি। ব্যাপার কী? কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে যেতেই শহরের মিন্টু কলেজের সামনে কথা হল হান্নান (২৫) নামে একজনের সঙ্গে।
তার কাঁধেও ‘ভারবাঁশ’। যাবেন কুমিল্লার দিকে। তিনি মিন্টু কলেজের সামনে এক মনিহারী দোকানিকে প্রশ্ন করলেন ঠিক এইভাবে ‘এ যে ভাই স্টেশনডা কুনদিহে। ’ হান্নানের সঙ্গে তার ভাই মতিনের (২২) কাছে জানতে চাইলাম কী করেন? উত্তর এলো ‘জনখাটি’।
ময়মনসিংহে এটাকে ‘কামলা’ বা ‘চুক্তি কামলা’ বলে। মাঠে-ঘাটে কাম করে।
ময়মনসিংহ কৃষি উদ্বৃত্ত জেলা। এখানে জোতদার কৃষকের সঙ্গে রয়েছে ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক চাষী। আরও বেশিসংখ্যক বর্গাচাষী, ভূমিহীন ক্ষেতমজুর।
বোরো মৌসুমে বিপুলসংখ্যক কামলা প্রতি বছর ময়মনসিংহ ছাড়ে। তারা বৈশাখী ধান কাটতে হাওরে বা দক্ষিণে যায়। অনেকে ৫০ থেকে ৬০ দিন বাইরে থাকে। বর্ষার আগে ধান মাড়াই, খড়ের গাদা ঠিক করে ঘরে ফিরে।
ময়মনসিংহ জেলা থেকে বছরে কমপক্ষে এক লাখ কামলা বাইরের জেলায় গিয়ে ধান কাটে। এটি কৃষি মৌসুমের মানবসম্পদ।
বৃহস্পতিবার রাতে যে কামলাদের সঙ্গে মিনিট দশেক আলাপচারিতা হয় তারা জানান, গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা সম্বল নিয়ে তারা ঘর ছেড়েছেন। ওই কামলাদের একজন রতন (৪০) ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় জানান, ‘দুঃখের কথা কী কইবাম। বউ সমিতি থাইক্যা দুই হাজার টাকা কর্জা নিছে। ৬ জনের সংসার ১৮০০ টাকা দিয়া আইছি। আল্লাই চালাইবো। কিস্তি কিবা দিবো এ চিন্তাই করতাছি। ’
এসব কামলারা জানান, বাড়তি আয়ের আশাতেই এসব মানুষ যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। প্রায় মাস দুয়েক নিজের শ্রম বিনিয়োগ করবে। বিনিময়ে মালিক দেবে দুবেলা ভাত। খোরাকি। এতে অবশ্য উপার্জনটা ভালোই হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১২
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর