বাংলাদেশ সফরে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান ওডেস্কের সহসভাপতি ম্যাট কুপার। এ মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী বিকল্প কর্মসংস্থানের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ‘আউটসোর্সিং’।
এ সাক্ষাৎকার গ্রহণে বাংলানিউজের পক্ষে সার্বিক সহযোগিতা করেন হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন এবং ওয়েব এডিটর জিকরুল আহ্সান। আর ছবি তুলেছেন ফটো করেসপন্ডেন্ট শোয়েব মিথুন।
এখন বিশ্বের তরুণ সমাজের কাছে স্বাধীন, সম্মানজনক কিন্তু দক্ষতানির্ভর চাকরি মানেই আউটসোর্সিং। এ উন্মাদনা ছড়িয়েছে বাংলাদেশেও। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার বাড়ছে ক্রমেই। মেধাবী তরুণরা ক্রমেই হতাশায় ডুবে যাচ্ছে। এ সময়ে আউটসোর্সিং নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে। তবে এ নিয়ে অনেক প্রশ্নেরই তৈরি হয়েছে।
আউটসোর্সিয়ের জন্য বাংলাদেশের তরুণরা কতটা প্রস্তুত। কিংবা অবকাঠামোগত সুবিধা-অসুবিধাগুলো কি অবস্থায় আছে এ প্রশ্নে ম্যাট কুপার বাংলানিউজকে বলেন, এ দেশের তরুণরা দ্রুতই আউটসোর্সিংকে আয়ত্ব করেছে। আর আয়ও করতে শুরু করেছে। এটা সুবিধার দিক।
অন্যদিকে অসুবিধার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বিদ্যুৎ শক্তি। অনলাইন সংস্কৃতির জন্য বিদ্যুৎ শক্তি অপরিহার্য। এর কোনো বিকল্প মাধ্যম থাকলেও তা ব্যয়বহুল। তাই এ অবস্থার সুরাহা না হলে আউটসোর্সিং সম্ভাবনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে।
এ ছাড়াও ইন্টারনেট গতি মোটেও সন্তোষজনক অবস্থায় নেই। এ সময় কুপার ইউনিভার্সেল ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ডকে (ইউডব্লিউবি) বাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। বিশ্বের অন্য সব দেশে আউটসোর্সিংয়ে এ ইন্টারনেট ব্যবহার হয়।
এ প্রসঙ্গে কুপার উদাহরণ টেনে বলেন, এ দুটি বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকার পরও বাংলাদেশের ওডেস্ক কন্ট্রাক্টররা অপ্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন করেছে। ভবিষ্যতেও এ খাতে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন এবং অ্যানড্রইয়ের অ্যাপস ও আইওএস এর ব্যাপক চাহিদা। বাংলাদেশের খুদে প্রযুক্তিবিদেরা এ খাতে নিজেদের আরও দক্ষ করে তুলতে ওডেস্ক তাদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। এতে আয় এবং আউটসোর্সিং র্যাঙ্কে বাংলাদেশ আরও উচ্চতায় চলে আসবে।
বাংলাদেশের তরুণরা যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সিলিকন ভ্যালিতেও প্রকল্পভিত্তিক কাজের যোগ্যতা রাখে। শুধু প্রয়োজন কাজের ধরন বুঝে কাজের অর্ডার নেওয়া। আর সঠিক সময়ে দক্ষতার সঙ্গে পার্টির কাজ সুসম্পন্ন করা। গত ৩ বছরে বাংলাদেশ আউটসোর্সিংয়ে ভালোই দক্ষতা অর্জন করেছে। আর ভবিষ্যতেও এ খাত বাংলাদেশের জন্য বিপুল সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করছে।
আর দক্ষতা অর্জনে বাংলাদেশের আউটসোর্সিং কন্ট্রাক্টররা ওডেস্কের কর্মীদের সঙ্গে স্কাইপি চ্যাটের সহযোগিতা নিতে পারে। আর সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (এসইএম) দারুণ কাজের সুযোগ তৈরি করেছে। এ খাতে বাংলাদেশের তরুণদের আয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
এক্ষেত্রে কমপিউটার সায়েন্সের তুলনায় অভিজ্ঞ এবং উদ্ভাবনী (আইডিয়া) জ্ঞান আছে এমন কর্মীদের বাজার চাহিদা এবং কদর দুটোই বেশি। বাংলাদেশে এ ধরনের আউটসোর্সিং কন্ট্রাকটরদের সংখ্যা অনেক বেশি। আর দক্ষতা আর আগ্রহের কমতি নেই। এ শক্তিকে কাজে পরিণত করতে পারলে একটা বিপ্লবও হয়ে যেতে পারে। একে ‘ইয়াঙ্গ অ্যানর্জি বিপ্লব’ বললে মোটেও ভুল হবে না।
এ ছাড়াও ওয়েব রিসার্চ (ডব্লিউআর) নিয়েও কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বিশ্বের কোটি কোটি সাইটের জন্য গবেষণা এবং উন্নয়নে কাজ করতে পারলে ভালো কাজের সুযোগ আছে। এমনকি ওয়েবসাইটে পিআর (পাবলিক রিলেশন) করেও এখন ভালোই আয় করছে বাংলাদেশিরা।
এ মুহূর্তে ওয়েব ডেলেপমন্টে, রাইটিং অ্যান্ড ট্যানসেলেশন, কাস্টোমার সার্ভিস, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সাপোর্ট, নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম, ডিজাইন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া এবং বিজনেস সার্ভিসেস এ কয়েকটি বিভাগে আউটসোর্সিং কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে ওডেস্ক।
সব মিলিয়ে নিজের যোগ্যতা আর দক্ষতার সঙ্গে নিয়মিত ইংরেজি চর্চা করলে আউটসোর্সিং হয়ে উঠতে পারে চাকরির বিকল্প কর্মসংস্থান। এ জন্য অফিস কোনো মুখ্য বিষয় নয়। সঠিক সময়ে জব রেন্টারের কাজ দিতে পারলেই আয়ের পথটা আরও সুনিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশ সময় ২০৩০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১২