ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

নানামুখী বিতর্কে বেসিস নির্বাচন সম্পন্ন

আইসিটি রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১২
নানামুখী বিতর্কে বেসিস নির্বাচন সম্পন্ন

এরই মধ্যে দেশের সফটওয়্যার খাতের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের দু বছর মেয়াদী কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ নির্বাচনে মোট দুটি প্যানেল অংশগ্রহণ করে।

তবে নির্বাচনের আগে এ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সৃষ্টি হয় নানামুখী বিতর্ক।

এসব বিতর্কের মধ্যে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি এবং ব্যক্তিগত ব্যবসায় সংগঠনের প্রভাব খাটানোর বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত। এ ছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক সদস্যই সংগঠনের নেতাদের বিদেশ সফর নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। বিদেশ সফরে পাওয়া সম্ভাব্য কাজগুলোকে নিজের পরিচিত প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বেসিস অংশগ্রহণ করলে নামেমাত্র একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি মিডিয়ার জন্য বরাদ্দ হয়। তথ্য জানতে চাইলে ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কথা বলে শীর্ষ নেতারা তা এড়িয়ে যান। অথচ প্রতিটি বিদেশ সফর শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এ সফরের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

এদিকে, কারওয়ানবাজারে অবস্থিত বিডিবিএল ভবনে আইসিটি ইনকিউবেটরে অফিস বরাদ্দ নিয়েও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। এক একটি প্রতিষ্ঠান আইসিটি ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে অফিস সাজিয়ে বসেছে।

আইসিটি খাতের ইএফ ফান্ড বরাদ্দ নিয়ে সংগঠনটির সদস্যদের অভিযোগ আছে। সব মিলিয়ে এবারের দুটি প্যানেলে নিরঙ্কুশ জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে বেশির ভাগ সদস্য অভিমত দিয়েছেন। এরই মধ্যে জনতা টাওয়ার টেকনোলজি পার্কের জায়গা কিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। অনেকে আবার হতাশাও ব্যক্ত করেছেন।

এরই মধ্যে ব্লগ, ফেসবুক এবং টুইটারের বিভিন্ন লিঙ্কে বেসিস নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নানামুখী মন্তব্য লিখতে শুরু করেছেন। প্রতি বছরের নিয়মিত আয়োজন সফটএক্সপো ছাড়া সংগঠনটির কর্মকাণ্ড খুব বেশি মিডিয়ার সামনে আসে না। প্রতিটি বিদেশ সফরের অর্জন-ব্যর্থতার কোনো চিত্রই কখনও সুস্পষ্ট করা হয় না। প্রেস বিজ্ঞপ্তিই এক্ষেত্রে তথ্য পাওয়ার সর্বোচ্চ মাধ্যম।

নির্বাচনের আগে আইসিটি খাতের অন্য সব সংগঠনের নেতারাও বেসিসের অস্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি নিয়ে তথ্য দিয়েছেন।   এ দুর্নীতর পেছনে সুনির্দিষ্ট প্রমাণও আছে বলে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা দাবি করছেন। ব্লগগুলোতে এসব নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে গত কসপ্তাহ ধরে।
 
তবে নির্বাচন এলেই অংশগ্রহণকারী নেতারা অঙ্গীকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হয়ে ওঠেন। এবারও তার ব্যক্তিক্রম হয়নি। তবে প্রশ্ন প্যানেলভিত্তিক নিরঙ্কুশ বিজয় না এলে সংগঠনটিকে এবার ভিন্নমুখী চাপে পড়তে হবে।

সব মিলিয়ে দেশের সফটওয়্যার ব্যবসার প্রসার এবং মানোন্নয়নে বেসিস কাছে সংগঠনের সদস্য এবং এ খাতের পেশাজীবীদের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। তাই সংগঠনের কাজে আরও বেশি স্বচ্ছতা না আনতে পারলে বেসিসকে দারুণ সংকটে পড়তে হবে। এমনটাই বলছেন এ খাতের শীর্ষ ক‘জন নেতা।
      
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে পরিচিত বেসিসের দ্বিবার্ষিক মেয়াদের এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুটি প্যানেল একটি অন্যটির ঠিক বিপরীত।

একটি প্যানেল (৩৬০ ডিগ্রি) একেবারেই তারুণ্যনির্ভর। আরেক প্যানেল অ্যাকশন টিম প্রবীণনির্ভর। দুটি প্যানেলই বেসিস এবং দেশি সফটওয়্যার খাতকে সমৃদ্ধ করার কথা বলেছেন। তবে নির্বাচন নিয়ে অনলাইনমাধ্যমে চলছে নানামুখী তর্ক-বিতর্ক।

কারওয়ানবাজারস্থ বিডিবিএল ভবনের পঞ্চম তলায় ২ জুলাই সোমবার বেসিস অডিটোরিয়ামে সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। তা বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে।

স্বদেশ রঞ্জন সাহাকে চেয়ারম্যান, কে. আতিক-ই-রাব্বানী এবং বীরেন অধিকারীকে সদস্য করে গঠিত বোর্ড নির্বাচন এবং ভোটগ্রহণ পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া নির্বাচন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে এ তৌহিদ এবং সদস্য হিসেবে কামরুল ইসলাম এবং এ সবুর খান দায়িত্ব পালন করছেন।

স্বদেশ রঞ্জন সাহা বাংলানিউজকে বলেন, এবারের নির্বাচনে দুটি প্যানেলে বিভক্ত। প্রতি প্যানেলে নয়জন সদস্য। এ মুহূর্তে বেসিসের সাধারণ সদস্য সংখ্যা ৩১০ জন। অ্যাসোসিয়েট সদস্য ১০৮ জন। সবমোট ৪১৪ জন ভোটার এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এদের প্রত্যক্ষ ভোটেই আগামী দুবছরের মেয়াদে বেসিসের নির্বাহী পরিচালনা কমিটি গঠিত হবে।

৩৬০ ডিগ্রি প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একেএম ফাহিম মাশরুর। এ প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন শামীম আহসান, রাসেল টি আহমেদ, নাভিদ-উল-হক, শাহ ইমরুল কায়েস, এম রশীদুল হাসান, এবিএম রিয়াজুদ্দিন মোশারফ, সৈয়দ আলমাস কবীর এবং উত্তম কুমার পাল।

এদিকে অ্যাকশন টিম প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এস কবির আহমেদ। এ প্যানেলের সদস্যরা হলেন শাফকাত হায়দার, শেখ এ শহীদ, কাজী হাসান মুজাহিদ, সাইদুল ইসলাম মজুমদার, ইমতিয়াজ আহমেদ খান, রফিকুল ইসলাম, কাজী জাহিদুল আলম এবং আরিফ আহমেদ চৌধুরী।

একটিমাত্র সহযোগী সদস্য শ্রেণীভূক্ত পদে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এরা হলেন উত্তম কুমার পাল, শফিউল আলম, আরিফ আহমেদ চৌধুরী এবং রফিউল আলম।

এ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুটি প্যানেলই সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একই রকমের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ ছাড়াও দেশি সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশে সমস্যা-সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথাও ইশতেহারে উল্লেখ করেন। তবে নির্বাচনে জয়ী হলে এসব অঙ্গীকারের কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়।  
 
বাংলাদেশ সময় ২২০০ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১২
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।