ঢাকা: রাশিয়ার ক্যাসপারস্কি ল্যাব বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানি হিসেবে পরিচিত হলেও বাংলাদেশের গ্রাহকদের হয়রানিতে তারা পিছিয়ে নেই। শুধু তাই নয় তাদেরই নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তাদের বাংলাদেশে কাস্টমার কেয়ারের কোন সেকশন নেই, নেই নিজস্ব কোন অফিস। এক্সট্রাক্টস.কম নামের একটি কোম্পানির মাধ্যমে তারা ব্যবসা চালাচ্ছে। কোম্পানিটি চালানো হচ্ছে ভারতের হায়দ্রাবাদ থেকে।
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, গতমাসে ক্যাসপারস্কি ইন্টারনেট সিকিউরিটি এন্ট্রি ভাইরাস কিনেছি ১১’শ টাকা দিয়ে। আমার ডেস্কটপে এটি অ্যাকটিভ করতে গিয়ে দেখি বারবার সেট আপ দেবার পরেও অ্যাকটিভ হচ্ছে না। এলিফ্যান্ট রোডের দোকানে গেলে দোকানদার তখন জানিয়েছিলেন এটি ইনভ্যালিড সফটওয়্যার। তখন সেটি পাল্টিয়ে আনি। এরপর অ্যাকটিভ হয়। ক্যাসপারস্কি এসব সমস্যা সমাধানে কোন বিশেষজ্ঞ বা এক্সপার্ট না রাখায় আমাদের হয়রানিতে পড়তে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, ক্যাসপারস্কি আমাদের সাথে প্রতারণা করে। কারণ তাদের কম্পিউটার সিকিউরিটি কিনলে আবার ইন্টারনেট সিকিউরিটি আলাদা কিনতে হয়। তারা একই সমস্যা সমাধানে ২বার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব কোম্পানি কি সিকিউরিটি দেবে, তাদের নিজস্ব কোন অফিসই নেই। সে হিসেবে তাদের কোম্পানিরই তো কোন সিকিউরিটি নেই।
ক্যাসপারস্কির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে ৩’শ মিলিয়নের বেশি মানুষকে তারা সেবা দিচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে। সেইসাথে বিশ্বে ১২০ টি গ্লোবাল পার্টনার আছে বলে দাবি করে। বাংলাদেশে তারা নানা ধরনের প্রচার, প্রপাগাণ্ডা ও বিজ্ঞাপন দিয়ে পণ্যকে পরিচিত করাচ্ছে।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ক্যাসপারস্কির বড় বড় বিলবোর্ড চোখে পড়ে। এতকিছু করলেও গ্রাহকদের জন্য তেমন কিছুই করছে না এ কোম্পানিটি। বাংলাদেশ ও এই দেশের মানুষের প্রতি কোম্পানিটির কোন দায়বদ্ধতার প্রমাণও পাওয়া যায় না।
বহুজাতিক কোম্পানি ক্যাসপারস্কি ২০০৬ সালে বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও কোন সিএসআর (কর্পোরেট স্যোসাল রেসপন্সিবিলিটি) কার্যক্রম করছে না। অথচ তারা কোটি কোটি ডলার মুনাফা নিয়ে যাচ্ছে নিজ দেশে। যে দেশে তারা ব্যবসা করছে, সেদেশের জনগণের জন্য এসব বহুজাতিক কোম্পানি কি করছে? তারা কার কাছে জবাবদিহিতা করছে? নাকি এসব বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই?
বাংলানিউজের পাঠকরা সরকারের কাছে এমন প্রশ্ন করেছেন।
ক্যাসপারস্কি ভারতের বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার, বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম, বাংলাদেশ স্কাউটসের নাম ভাঙিয়ে এবং নিজেদের পণ্য পরিচিত করাতে সেমিনারের নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে।
ক্যাসপারস্কির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের জন্য আলাদা কোন পেজ নেই। এমনকি সার্চ অপশনে খুঁজেও বাংলাদেশের নাম পাওয়া যায় না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্যাসপারস্কির লোকাল অফিস থাকলেও বাংলাদেশে তাদের নিজস্ব কোন অফিস নেই।
এশিয়ার মধ্যে ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, হংকং, চীনে এবং কোরিয়াতে তাদের লোকাল অফিস আছে। ভারতের হায়দ্রাবাদের হাইটেক সিটিতে তাদের লোকাল অফিস আছে। অথচ বাংলাদেশ থেকে তারা কোটি কোটি টাকা আয় করেও এ দেশবাসীর জন্য কোন লোকাল অফিসের প্রয়োজনীয়তা পর্যন্ত মনে করেনি কোম্পানিটি।
বাংলাদেশ ও ভূটানে ক্যাসপারস্কির ডিস্ট্রিবিউটর অফিস এক্সট্রাক্টস.কম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। টেকনিক গ্রুপ নামের একটি কোম্পানি অফিস এক্সট্রাক্টস.কম চালায়। এই গ্রুপের আর কোন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানা যায়নি। ওয়েবসাইটে কোম্পানিটির অফিস বি ১১২ মসজিদ রোড, মহাখালী ডিওএইসএস লেখা আছে। এরকম অখ্যাত এক কোম্পানি দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে বাংলাদেশ থেকে ক্যাসপারস্কি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
অফিস এক্সট্রাক্টস.কমের কর্পোরেট সাপোর্ট টিমের ডেপুটি ম্যানেজার জামিল বাংলানিউজকে বলেন, আমি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে পারবো না। আমি শুধু ব্যবসায়ীক কথা বলবো আর কর্পোরেট সাপোর্ট দেব।
এটি কোন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি টেকনিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। বারাকোডা নামে আমাদের কিছু হার্ডওয়ার প্রোডাক্ট সাপ্লাইয়ের ব্যবসা আছে।
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের এক কম্পিউটার ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, অন্যান্য এন্টি ভাইরাস কোম্পানি সহজে পণ্য দেয়, ভালো ব্যবহার করে। তারা ব্রিক্রেতা ও গ্রাহক ফ্রেন্ডলি। ক্যাসপারস্কি দাম অন্যদের থেকে বেশি রাখে। ফলে আমাদের লাভ কম হয়। তাদের কোন পণ্যে সমস্যা হলে সেসব ফেরত নিতে বা বদলে দিতে অনেক হয়রানি করে।
দেশে নিজস্ব অফিস না রেখে মধ্যস্বত্বভোগী দালালদের মাধ্যমে ক্যাসপারস্কি চলছে বলে ক্ষোভও প্রকাশ করেন তিনি।
ক্যাসপারস্কি ও এক্সট্রাক্টস.কম সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথ্যপ্রযুক্তি সংসদ ( ডিইউআইটিএস) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাসপারস্কি বাংলাদেশে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। কিন্ত তাদের কোন সামাজিক কাজ চোখে পড়ে না। তারা বাংলাদেশে কোন নিজস্ব অফিস না খুলে এদেশবাসীকে অবহেলার চোখে দেখেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথ্যপ্রযুক্তির এই কর্মী আরও বলেন, ক্যাসপারস্কি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো রক্তচোষা। এরা শুধু ব্যবসা করে। এদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। এদের শোষণের প্রতিবাদ করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আছে এটি কম্পিউটার স্লো করে। কিছু সাইটকে অটোম্যাটিক ব্ল্যাক করে দেয়। কম্পিউটারের অনেক প্রয়োজনীয় সফটওয়ারকে ভাইরাস হিসেবে দেখাচ্ছে। কাস্টমারদের সেবা দেবার জন্য কোন ব্যবস্থা রাখেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১২
এমআইআর/সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর