ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

প্রযুক্তিপণ্যে বিস্মিত, বিমুগ্ধ প্রতিবন্ধীরা

সিজারাজ জাহান মিমি, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১২
প্রযুক্তিপণ্যে বিস্মিত, বিমুগ্ধ প্রতিবন্ধীরা

ঢাকা: শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের কল্পনাতেও কখনো আসেনি যে, তাদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক প্রযুক্তিপণ্য কেউ উদ্ভাবন করেছে। ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি এমন সব পণ্য দেখে তারা বিস্মিত, উল্লসিত।

আর এসব পণ্যের ‍আশ্রয়ে সমাজের অবহেলা থেকে মুক্তি পাওয়ার স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছেন অনেকেই। শুধু একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায়।

দেশে প্রযুক্তিপণ্যগুলো একেবারেই নতুন হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য সেসব নতুন নয়।

সম্প্রতি ধানমন্ডির প্রিন্স প্লাজায় অনুষ্ঠিত প্রতিবন্ধীদের জন্য আন্তর্জাতিক এক প্রদর্শনীতে সেইসব প্রযুক্তি পণ্য প্রদর্শিত হয়। প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখানে রকমারি পণ্য নিয়ে এসেছিল। সাভারের সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) থেকে এসেছিল ১৩ জনের একটি দল।

শুধু জন্মগতভাবেই পায়নি শরীরের পূর্ণ ক্ষমতা। আবার অনেকেই দুর্ভাগ্যবশত পৃথিবীতে আসার পর শরীরের ক্ষমতা হারিয়ে প্রতিবন্ধী হয়েছে। বাংলানিউজের সঙ্গে অনেকের আলাপচারিতায় সমাজের অবহেলা ও নিচু চোখে দেখার বিষয়গুলো নিয়ে আক্ষেপ ঝরে পড়ল।

প্রতিবন্ধী বলে হেয়ালি করা একেবারে ঠিক নয়, কারণ তাদের অনেক ভাবনা-চিন্তাগুলো সক্ষম মানুষকেও হার মানায়। অনেক বাধা পেরিয়ে তাদের কেউ এসএসএসি ও কেউ এইচএসসি পাশ করেছে বলে জানা যায়। আর শিক্ষাজীবন এখানেই থামিয়ে দিতে চান না তারা। এ মুহূর্তে তারা সাভারের সিআরপিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

কুষ্টিয়ার মেহেরপুর থেকে আসা তাদের একজন অসাধারণভাবে নিজের ভাবনা-চিন্তা ও অনুভূতির কথা বলছিলেন। আগে কখনও এমন কম্পিউটার প্রদর্শনী দেখেনি এই প্রথম। “আমরা কখনও কল্পনাও করিনি আমাদের জন্য এত ভালো ভালো প্রযুক্তিপণ্য ও সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে। ” তাছাড়া পণ্যগুলোর ব্যবহার সর্ম্পকে যারা বোঝাচ্ছিল তাদের আচরণে সন্তুষ্ট হয়ে বলেন, “সবাই যদি আমাদের এমনি করে মেনে নিত তবে মনে আরো শক্তি আসত। ” মেহেরপুরের স্থানীয় একটি কলেজ থেকে তিনি মানবিক বিভাগে জিপিএ ৪.২০ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।
মূলত কম্পিউটার শেখার উদ্দেশ্যে ঢাকার সিআরপিতে আসেন।

প্রশিক্ষণ অগ্রগতি সম্পর্কে জানান, এখন পর্যন্ত মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট আর এক্সেলের কাজ শেখা শেষ হয়েছে। আরো কিছু বিষয় আছে যেগুলো ভালোভাবে শেষ করার ইচ্ছা আছে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, ঢাকাতে ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে নিজ গ্রামের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তে হবে তাকে।

আর যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়ে যাবে একটি কম্পিউটার। কারণ চর্চার অভাবে একসময় কম্পিউটার জ্ঞান হারাতে হতে পারে। তাই যে কোনভাবেই একটা কম্পিউটার কিনই হবে। ভবিষ্যত স্বপ্ন একটি চাকরির। তার মতো অসহায়দের জন্য করণীয় সম্পর্কে বলে যা করব নিস্বার্থভাবে টাকা পয়সার কোনো সম্পর্ক থাকবে না।

ঢাকা শহরে তো প্রায়ই প্রযুক্তিপণ্য প্রদর্শনী হয়। কিন্তু তাদের অনেকেই বিষয়টি জানেন না। তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিভিন্ন দাতা সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের বিত্তবানরা যদি মাঝেমধ্যে তাদের জন্য নির্দিষ্টভাবে এমন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করত তবে তারা খুবই উপকৃত হত। অন্য একজন বলেন, “দিতীয় দিন জানতে পেরেই আগ্রহ হয়েছে প্রদর্শনীতে আসার কিন্তু অল্প সময় ঘুরতে পারলাম। ”

উল্লেখ্য, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১২

সম্পাদনা: রানা ‍রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।