ঢাকা: মোবাইল ফোন এখন মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। তাই কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ সময়ই এ যন্ত্রটি মানুষের শরীরের সংস্পর্শে বা খুব কাছেই থাকে।
এ যন্ত্র চালু থাকা অবস্থায় বেতার তরঙ্গ বা বিকিরণ নির্গত হয়। একে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বা আরএফ বলা হয়। মোবাইল ফোনসেট ছাড়া এর টাওয়ারগুলো থেকেও একই রকম বিকিরণ নিগর্ত হয়।
হ্যান্ডসেট ও টাওয়ারের নির্দিষ্ট পরিধির মধ্যে থাকলে এ বিকিরণ কমবেশি মানুষের শরীরে শোষিত হয়। অবশ্য এ বিকিরণ শোষণ মানব দেহের ওপর বিরূপ স্বাস্থ্যগত প্রভাব ফেলে কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে মোবাইল ফোনের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির অতিরিক্ত শোষণে শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না গবেষকরা।
এ আশঙ্কা থেকেই বিশ্বের অনেক দেশেই মোবাইল হ্যান্ডসেট এবং টাওয়ারগুলো থেকে নিগর্ত বিকিরণের একটি নির্দিষ্ট নিরাপদ মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। যদিও বিভিন্ন দেশে এ নির্ধারিত মাত্রার ভিন্নতা আছে।
অন্যান্য দেশ বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর অনুসরণে সম্প্রতি মানবদেহে মোবাইল ফোনের বিকিরণের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে কড়া আইন করেছে ভারত সরকার। এ সংক্রান্ত তাদের আগের একটি নীতিমালা থাকলেও নতুন আইনকে আগের চেয়ে অনেক কঠোর বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, মোবাইল ফোনের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেক বিতরণ টাওয়ার থেকে ‘আরএফ’ বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি একটি নির্ধারিত মাত্রার বেশি বিকিরিত হতে পারবে না।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী সারা ভারতের সব মোবাইল টাওয়ারকে তাদের বর্তমানের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিকে পূর্বের থেকে এক দশমাংশে নামিয়ে আনতে হবে।
শুধু তাই নয়, মোবাইল ফোনের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেই যাচাই করতে হবে তাদের প্রত্যেক টাওয়ারের বিকিরণ মাত্রা সরকার নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে আছে কি না।
এর পাশাপাশি মনিটরিং দল এবং এসব টাওয়ারের বিকিরণের মাত্রা ঠিক আছে কি না তা যাচাই করতে নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রম চালাবে।
কোনো প্রতিষ্ঠান এসব নিয়মকানুন ভঙ্গ করলে অভিযুক্তকে তাদের প্রত্যেক টাওয়ারের জন্য ৫ লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে বলে নতুন আইনে বলা হয়েছে।
টাওয়ারের পাশাপাশি মোবাইল হ্যান্ডসেট থেকে নির্গত বিকিরণের জন্যও পৃথক নীতিমালা করা হয়েছে। ভারতে প্রস্তুত হ্যান্ডসেট থেকে শুরু করে আমদানি করা হ্যান্ডসেটগুলোর জন্য এ আইন প্রযোজ্য হবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, হ্যান্ডসেটের এসএআর বা ‘স্পেসিফিক অ্যাবসর্বশন রেট’ (বিকিরণের নির্দিষ্ট শোষণ হার) নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ১ গ্রাম মানব টিস্যুতে ১.৬ ওয়াট/কেজি । এর আগে এ হার ছিলো প্রতি ১০ গ্রাম মানব টিস্যুতে ২ ওয়াট/কেজি।
উল্লেখ্য, এসএআর হলো মানব শরীরের টিস্যু কর্তৃক রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বা আরএফ শোষণের হার। ‘এসএআর’ এর একক হলো ওয়াট/কিলোগ্রাম।
মোবাইল সেটের এ বিকিরণ মাত্রা বা এসএআর’র হার সাধারণত হ্যান্ডসেটের সঙ্গে থাকা ব্যবহারবিধিতে উল্লেখ থাকে। না থাকলে ব্যবহারকারীরা সংশ্লিষ্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।
ভারত সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যবহৃত যেসব হ্যান্ডসেটে এসএআরের হার নির্ধারিত হারের থেকে বেশি সেগুলো সর্বোচ্চ ২০১৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।
পাশাপাশি প্রত্যেক মোবাইল হ্যান্ডসেটেই এসএআর প্রদর্শনের সুযোগ থাকতে হবে। নির্দেশনা মোতাবেক মোবাইল হ্যান্ড সেটের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুয়িপমেন্ট আইডেন্টিটি) নাম্বার দেখার মতই এসএআর মাত্রাও সেটে প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
পাশাপাশি সরকার মোবাইল হ্যান্ডসেটের এসএআর মাত্রা পরীক্ষার জন্য ভারতের টেলিকম ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টার বা টিইসিতে একটি টেস্ট ল্যাবেরটরি স্থাপন করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের নিকটতম প্রতিবেশি বাংলাদেশে এখনও এ ধরনের কোনো আইন করা হয়নি। তবে জনস্বার্থে সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়অ জরুরি বলে মনে করেন তথ্যাভিজ্ঞ মহল।
বাংলাদেশে সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১২
সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর; আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর