ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

অনলাইনেই গণতান্ত্রিক চর্চা সম্ভব

আইসিটি রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১২
অনলাইনেই গণতান্ত্রিক চর্চা সম্ভব

গণতান্ত্রিক সমাজে মুক্ত চর্চা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিকল্প নেই। ইন্টারনেটে বা অনলাইনে তথ্য বিনিময়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চারকে সুরক্ষিত করা জরুরি।



জনগণের মত প্রকাশের অধিকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন ধরনের কোন নীতিমালা প্রণয়ন বা বাস্তবায়ন করা আদৌ কাম্য নয়। ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার ২০১২ উন্নয়ন গবেষণা সংগঠনের (ভয়েস) উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারনেটে মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদের সঞ্চলনায় এ মতবিনিময় সভায় আলোচক হিসেবে  বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের নির্বাহী সম্পাদক আফসান চৌধুরী, প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আইএসপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আক্তারুজ্জামান মঞ্জু, আর্টিকেল-১৯ এর দক্ষিণ এশীয় প্রতিনিধি তাহমিনা রহমান, সাপ্তাহিকের সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা এবং সাংবাদিক সেলিম সামাদ উপস্থিত ছিলেন।

এ সভায় মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তার ওপর সংবিধানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ নং ধারায় সুস্পষ্টভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রায় লক্ষাধিক নীতিমালা, বিধি ও আইন থাকলেও এসবের প্রয়োগ খুব কম। এসব আইনের সঙ্গে সব সময় জনগণের কোনো যোগাযোগ থাকে না। প্রস্তাবিত অনলাইন নীতিমালা প্রসঙ্গে মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এ নীতিমালা নিয়ন্ত্রণমূলক। ফলে ইন্টারনেটে মত প্রকাশ মাধ্যম বাধাগ্রস্ত হবে।

জাতিসংঘের বিশেষ রেপোর্টিয়ার ফ্রাঙ্ক লা রুয়ের মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, ইন্টারনেট স্বাধীনতায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। নাগরিক ও নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারনেট স্বাধীনতার কারণে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠি অযথা হয়রানির শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে।

আফসান চৌধুরী প্রস্তাবিত অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার প্রসঙ্গে বলেন, এ নীতিমালা সুশাসন ও গণতন্ত্রের আন্দোলনকে কয়েক ধাপ পিছিয়ে দেবে। অন্যান্য দেশ যখন তথ্যপ্রযুক্তি শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন ও মানুষের মত প্রকাশের অধিকার চর্চাকে নিশ্চিত করছে, সেখানে বাংলাদেশেরও পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। আইন ও নীতিমালার ওপর গুরুত্বারোপের চেয়ে তিনি ব্যক্তি ও সমাজের সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক রুচি ও শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন।

সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে ইন্টারনেটের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে মোস্তফা জব্বার বলেন, প্রযুক্তিগত উন্নতির কথা বিবেচনা করেই যেকোনো মাধ্যমেই ব্যক্তির মত ও চিন্তা প্রকাশের অধিকারকে উন্মুক্ত রাখা উচিত। আর তাই সরকার এমন কোনো নীতিমালা করবে না যা জনগণের মত প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ১৫ ভাগ ভ্যাট দিতে হয়। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ১৫ ভাগ ভ্যাট তুলে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান মোস্তাফা জব্বার।

এদিকে সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় অধিকার ছাড়াও মত প্রকাশের অধিকার জনগণের মৌলিক অধিকার। এ অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’ এর ২০১১-১২ সালের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, মত প্রকাশের এমন নাজুক অবস্থার মধ্যেও যদি নতুন করে বাক স্বাধীনতা রুখবার নীতিমালা করা হয়, তাহলে অনলাইননির্ভর সংবাদ এজেন্সি ও সাইটগুলো এ নীতিমালার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ও বৈষম্যের শিকার হবে।

ইসপাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান মঞ্জু বলেন, দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ইন্টারনেট সেবাভুক্ত করা উচিত। প্রতিমাসেই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছে গ্রাহকদের রেকর্ড জমা দিতে হয়। এমনকি সরকারের অনুরোধে তারা ব্যবহারকারীর তথ্য প্রকাশ করেন। এটি ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ। যেকোনো নিয়ন্ত্রণ ইন্টারনেট সেবার পথে অন্যতম বাধা।

তাহমিনা রহমান বলেন, ন্যায়, শান্তি, সমতা ও মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলনে ও জনগণকে সংগঠিত করতে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও ইন্টারনেটের মুক্ত ব্যবহার একটি সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা করবে।

তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের ১৯ নম্বর ধারা উল্লেখ করে বলেন, প্রতিটি মানুষের মত ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। ইন্টারনেট এ অধিকার বাস্তবায়নে এক ধাপ এগিয়ে আছে। অনলাইন বিষয়ক কোনো নীতিমালা করতে গেলে, ইন্টারনেট যারা ব্যবহার করে তাদের নিয়েই করা উচিত। নীতিমালা করার আগে জনগণের মতামতকে গুরুত্বে সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

সেলিম সামাদ বলেন, সম্প্রতি প্রস্তাবিত ‘অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালা ২০১২’ বর্তমান প্রস্তাবনা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হলে তা মতপ্রকাশের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করবে। গুটি কয়েক মুনাফালোভী করপোরেট বাণিজ্যের কাছে বিμি হয়ে যাবে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা।

দেশব্যাপী যেসব তরুণ উদ্যোক্তারা বেশ কিছু নিউজ এবং ভিউজ সাইট পরিচালনা করছেন, তাদের সাইটগুলো এ নীতিমালার কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। প্রস্তাবিত নীতিমালা যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে তা মত প্রকাশের বাধা হিসেবেই দাঁড়াবে।

এ নীতিমালায় অনলাইন গণমাধ্যমের কোনো সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। কি কি বৈশিষ্ট্য থাকলে অনলাইন গণমাধ্যম হিসেবে ধরা হবে তাও সুস্পষ্ট নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শুধু গণমাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই এ নীতিমালা খসড়া তৈরি করেছে বলে মনে করেন সেলিম সামাদ।

এ সেমিনারের উদ্যোক্তা আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, কোন নীতি বা আইন যদি কোনো কারণে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বাধীন মত প্রকাশকে ক্ষুন্ন করে, তাহলে আলোচনা সাপেক্ষে এ নীতি ও আইন পুনরায় প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিবর্ধন করতে হবে।

নীতিমালা হবে অংশগ্রহণমূলক ও জনবান্ধব। এমন কোনো নীতিমালা জারি করা উচিত নয় যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে। জাতীয় নিরাপত্তা, জনস্বার্থ রক্ষা, কোনো ব্যক্তির সম্মান রক্ষার্থে যদি মত প্রকাশের অধিকার সীমিত করার প্রয়োজন হয় এবং আইনি পদক্ষেপ নিতে হয়, সেক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন সংস্থা নিয়োগ করার দাবিসহ ৯ দফা দাবির উল্লেখ করেন আহমেদ স্বপন মাহমুদ।

বাংলাদেশ সময় ১৬৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।