ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

বছর পেরিয়েও স্টিভ শূন্যতা

সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১২
বছর পেরিয়েও স্টিভ শূন্যতা

অ্যাপল গুরু স্টিভ জবস নেই বছর পেরিয়ে গেল। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে (১৯৫৫-২০১১) জটিল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন স্টিভ।

আইপ্যাড এবং আইফোন উদ্ভাবনার মাধ্যমে স্টিভ জবস বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সাল থেকে অগ্ন্যাশয়ের জটিল ক্যান্সারে ভুগছিলেন স্টিভ জবস।

এভাবেই একের পর এক উদ্ভাবনায় নিজেকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিলেন স্টিভ

তথ্যপ্রযুক্তির আকাশজুড়ে আজো কালো মেঘের ঘনঘটা। কমপিউটার বিশ্বের মহাগুরু এবং অ্যাপলের কর্ণধার স্টিভ জবস অকালেই চলে গেছেন।

এ মুহূর্তে পুরো অনলাইন বিশ্বজুড়ে শুধুই স্টিভ জবসের শোকবার্তা। বিশ্বব্যাপী অ্যাপল ভক্তরা স্টিভের এ প্রস্থান মেনে নিতে পারেননি। তাই সামাজিক মাধ্যম টুইটার, ফেসুবক এবং গুগল প্লাসে লাখ লাখ শোকবার্তায় আরো একবার মুখর হয়ে উঠেছে সামাজিক নেটওয়ার্কগুলো। আইটি বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে, এ প্রস্থান একেবারেই অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্খিত। ফলে তথ্যপ্রযুক্তির বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বাজার বিশেষজ্ঞ কলিন গিলিস জানান, এ মুহূর্তে আইসিটি বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে স্টিভ জবসের মতো নির্বাহীর বিকল্প পাওয়া খুব কঠিন। তবে তিনি আমরণ অ্যাপল উদ্ভাবনার প্রাণ সঞ্চালক হিসেবে নেপথ্যেই প্রেরণা দিয়ে যাবেন বলে অ্যাপল ভক্তরা বিশ্বাস করেন।

এ মুহূর্তে অ্যাপলে সিইও পদের দায়িত্বে আছেন টিম কুক। শেষ দিনগুলোতে স্টিভের সবচেয়ে ঘনিষ্ট সহযোগী হিসেবে তার নামটিই এসেছে সবার আগে। অ্যাপলের আকাশচুম্বি সাফল্যের পেছনে টিম কুকের অবদানও নেহাত কম নয়।

অ্যাপল স্টোর, ম্যাক, আইপড, আইফোন, আইপ্যাড, আইটিউনস এসবেরই স্বপ্নদ্রষ্টা স্টিভ

সুদীর্ঘ রোডম্যাপ আর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে অ্যাপলকে শীর্ষে উঠিয়ে এনেছেন স্টিভ। তারপরও স্টিভের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে মাঝেমধ্যেই তিনি কুকের অবদান বর্ণনা করেছেন। এ অর্থে টিম কুকই এখন হবে অ্যাপল প্রাণকর্ত‍া।

প্রতিটি উদ্ভাবনা নিয়ে স্টিভের সুমিষ্ঠ পণ্য উদ্বোধনী বক্তব্যে অ্যাপলের পণ্য বিক্রিতে জাদুকরি প্রভাব বিস্তার করেছে বলে বিপণন সংশ্লিষ্টরা জানান। এ কারণেই শুরু থেকেই অ্যাপল অন্য সব প্রযুক্তিনির্মাতাদের তুলনায় কয়েক কয়েক ধাপ এগিয়ে ছিল।

অ্যাপল ভক্তরা এটা জানতেন স্টিভ তাদের জন্য সময়ের সেরা পণ্যটিই বাজারে প্রকাশ করেন। তাই নতুন কোনো অ্যাপল পণ্য প্রকাশের কথা থাকলেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের মুখপাত্র গারটেনবার্গ জানান, অ্যাপল মানেই সময়ের সব চাহিদা পূরণের সামর্থ্য। কেননা এসব ডিজিটাল পণ্যের মান নির্ণয়ে কাজ করেছেন প্রযুক্তিগুরু স্টিভ জবস। শত শত কোটি মানুষের এ মহাবিশ্বের জীবনমান এবং ব্যবসা উন্নয়নে স্টিভ দিয়েছেন অসংখ্য উদ্ভাবনা আর বিপণন তত্ত্ব। এর মধ্যে আইফোন৪ আর আইপ্যাড সব কিছুকেই ছাড়িয়ে গেছে।

আইপড, তারপর আইফোন, এরপর আইপ্যাড সবশেষ মৃত্যুকে স্টিভের অ‍ালিঙ্গন

স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট পিসির প্রবক্তা স্টিভ জবস বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি ভক্তদের কাছে মহাউদ্ভাবক হিসেবে একনামে সুপরিচিত।

গত কয়েকটি বছরে এ দুটি পণ্য পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশের দৃশ্যপট পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।

বিল গেটসের কমপিউটার আবিস্কারের সময় যেমন প্রযুক্তিবিস্কোরণ ঘটেছিল, ঠিক তেমন চিত্রই ফুটে ওঠে অ্যাপলের স্মার্টফোন আর ট্যাবলেট পিসির আর্বিভাবে।


স্টিভ ছিলেন মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠায় বিল গেটসের অন্যতম কাছের বন্ধু এবং সহযোগী। এক মতবিরোধের মধ্যে দিয়ে স্টিভ মাইক্রোসফট ছেড়ে অ্যাপল প্রতিষ্ঠা করেন।

কমপিউটার শিল্প অঙ্গনে স্টিভের তুলনা তিনি নিজেই। ভবিষ্যৎ চাহিদাকে সময়ের অনেক আগেই কল্পনা করতে পারদর্শী ছিলেন স্টিভ। ছিলেন একজন সফল স্বপ্নদ্রষ্টা। আর নিরলস পরিশ্রম ও কর্মদক্ষতার শক্তি দিয়ে তিনি তা বাস্তবায়নও করতে পারতেন। এমনটাই জানিয়েছিলেন নকিয়ার প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ইলোপ।

বিশ্বের প্রযুক্তিগুরু স্টিভ জবস প্রথমে ছাড়লেন অ্যাপলের সিইও পদ। এরপর এত দ্রুত তিনি সব কিছুর উর্দ্ধে চলে যাবেন তা কেউই স্বপ্নেও ভাবেননি। এ যেন হঠাৎই দমকা হাওয়া।

কিন্তু এখনও অ্যাপলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্ভাবনী ভাবনা থেকে তিনি চলে যাননি। এ কথা অ্যাপল ভক্তরাও বিশ্বাস করেন। যতদিন অ্যাপল থাকবে ততদিন স্টিভ নিজেকে স্বমহিমায় নিত্যনতুন উদ্ভবনার মাধ্যমে ভক্তদের সামনে হাজির হবেন। এমন প্রত্যাশাই বিশ্বের কোটি কোটি অ্যাপল ভক্তের।

স্টিভ জবস ছিলেন মাইক্রোসফটের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং বিল গেটসের প্রাণপ্রিয় বন্ধু। বন্ধুর অকাল প্রয়াণের শোকবার্তায় বিল গেটস বলেন, হৃদয়ের গভীর থেকেই স্টিভকে মিস করছি। আমি সৌভাগ্যবান বলেই স্টিভের মতো এমন বহুগুণী এবং ভবিষৎদ্রষ্টার সঙ্গে কাজ করার সুয়োগ পেয়েছি।

জীবনের শেষ দিনগুলোতে এমনই নির্বিকার ছিলেন স্টিভ

পুরো আট বছর একান্তেই জটিল ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন স্টিভ। কিন্তু তাঁর উদ্ভাবনী শক্তিকে মোটেও দমিয়ে রাখতে পারেনি ক্যান্সার। অদম্য সাহস আর ধৈর্য্য নিয়ে তিনি আটটি বছর অ্যাপলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। বিশ্বকে দিয়েছেন একের পর চমক।

বিশ্বের ব্যবসা এবং অভ্যাস পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে তাঁকে এ কালের ‘লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি’ উপাধীও দেওয়া হয়। এরই মধ্যে স্টিভের চলে যাওয়ার বর্ষপূর্তিতে পুরো বিশ্বপ্রযুক্তি অঙ্গনে আরো একবার নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। কেউই যেন স্টিভের এ অকাল শূন্যতাকে মেনে নিতেই পারছেন না।

বিশ্বের কোটি কোটি অ্যাপল ভক্তকে চোখের জলে ভাসিয়ে স্টিভ এখন স্মৃতির মনিকোঠায়। কারণ স্টিভ শুধু অ্যাপলের সম্পদ ছিলেন না। তিনি বিশ্ব ইতিহাসের এক অমূল্য রত্ন।

পুরো বিশ্বই (৫ অক্টোবর, ২০১১) এদিনে বিশ্বপ্রযুক্তির অপূরণীয় মহানায়ককে হারিয়েছেন।

মৃত্যুকালে স্টিভ জবস স্ত্রী, এক ছেলে এবং দুই কন্যা রেখে গেছেন।

অ্যাপলের গুরুদায়িত্ব থেকে সপ্রণোদিত হয়ে ইস্তফা নিয়েছিলেন স্টিভ। এরপর অ্যাপলকে সামলে নেওয়ার দায়িত্ব দেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী টিম কুকের কাঁধে।

বাংলাদেশ সময় ১৭৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।