ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ইউটিউব চালুর অপেক্ষায়...

সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১২
ইউটিউব চালুর অপেক্ষায়...

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২। বাংলাদেশে আরো একবার ইউটিউব বন্ধ হলো।

‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামে ঝড় তোলা বিতর্কিত মার্কিন চলচ্চিত্রটির অপপ্রচার আর এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার আশঙ্কায় বাংলাদেশ সরকার বিটিআরসির মাধ্যমে বাংলাদেশে ইউটিউব সম্প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়।

বিশ্বের অনলাইন  র‌্যাংকিং প্রস্তুতকারক অ্যালেক্সায় ডটকমের হিসাবে বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ জনপ্রিয় সাইট ইউটিউব। ইন্টারনেটে ধীরগতি সত্ত্বেও তথ্য আর ঘটনার অনুসন্ধানে বাংলাদেশে ইন্টারনেটপ্রেমীদের কাছে এ সাইট অল্প দিনেই দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

প্রসঙ্গত, নিউ মিডিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সক্রিয় গণমাধ্যম হিসেবে ইউটিউবকে এখন আর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি সরকারের জন্যও এটি একটি অনন্য শক্তিশালী মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে।

ইউটিউবে বাংলাদেশের শিল্প, সংস্কৃতি, উন্নয়ন, ভালো উদ্যোগ, সম্ভাবনা, অর্জন এবং সমস্যার সচিত্র ভিডিও স্থান পেয়েছে। অর্থাৎ ইউটিউবের কল্যাণে প্রবাসী বাঙালি এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ সমাদৃত হয়েছে। প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকেও হাজারো তথ্যচিত্র ইউটিউবে তুলে ধরা হয়।

তবে এটা ঠিক, রাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয় এমনসব অপপ্রচারে সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ একান্ত প্রত্যাশিত। আর এটা সরকারের দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে। তবে এমনটা করতে গিয়ে আরেকটি গণমাধ্যম-বিমুখ হওয়াও সরকারের জন্য কতটা ইতিবাচক এমন প্রশ্নও উঠে আসে।

এরই মধ্যে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ সরকার ইউটিউব সম্প্রচার বন্ধ রেখেছে। ফলে বৈশ্বিক সচিত্র ঘটনার প্রত্যক্ষ করতে পারছে না বাংলাদেশিরা। এর ফলে সরকারের প্রতি এক ধরনের বিরূপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে দেশের প্রযুক্তিমনা, মুক্তবুদ্ধির নাগরিকদের মনে।

মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হবে এমন ভাবনা থেকে এখন সরে আসার সময় হয়েছে। সরকার এ ধরনের সহিংস অপপ্রচারকে কারিগরি দক্ষতার সঙ্গেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। ফলে জনগণ সরকার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করত না।

২০১০ সালের ২৯ মে বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ করা হয়। বাংলাদেশে ফেসবুক হচ্ছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় সাইট। ফেসবের্কাসের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারীর সংখ্যা প্রায় নয় লাখ। এর মধ্যে সাড়ে ছয় লাখ পুরুষ। বাকি আড়াই লাখ নারী। বাংলাদেশে প্রতিমাসে ৫০ হাজার করে ফেসবুক ভক্ত বাড়ছে। ফলে এ গণমাধ্যম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও অবশেষে তা খুলে দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সিপিবি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ফেসবুকভিত্তিক ফ্যানক্লাব এবং ফ্যানপেজ আছে। এসব সাইটে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য এবং যুদ্ধপরাধীদের বিচার দাবিতে হাজার হাজার ফেসবুক গ্রাহক প্রত্যক্ষ মতামত এবং সত্য উন্মোচনে সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, অনুষ্ঠেয় মার্কিন নির্বাচনে জনমত যাচাইয়ে নিউ মিডিয়ার সবক`টি প্রচারণাকে গুরুত্ব দিচ্ছে মার্কিন সরকার। তবে মার্কিন সরকার নির্বাচনী অপপ্রচার নিয়ন্ত্রণেও সোচ্চার। এ ছাড়াও দক্ষ কারিগরি দলকে এ কাজে নিযুক্ত করেছে মার্কিন প্রশাসন। ফলে প্রকৃত জনমত, নাগরিকের প্রত্যাশা, সফলতা আর ব্যর্থতার চিত্র সবার কাছে উন্মোচিত হবে। এমন প্রত্যক্ষ জনমত দেশ এবং সরকার উভয়ের জন্যই সুস্থ রাজনৈতিক আবহ তৈরি করতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।

তাই সরকারের কাছে গণমানুষের প্রত্যাশা অনেক। বলতে গেলে সীমাহীন। এ থেকে জনগণকে নিরাশ না করে বরং সহযোগিতা করা অনেক বেশি গণবান্ধব উদ্যোগ হতে পারে। প্রযুক্তিবান্ধব নাগরিক দেশের প্রগতিশীল শক্তি। এদের সঠিক কাজে উৎসাহিত করাও সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

দীর্ঘদিন মতামতহীন অবস্থা গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য শুভ নয়। তাই অচিরেই প্রকৃত এবং নীতিগত নিয়ন্ত্রণ সুনিশ্চিত করে বাংলাদেশ সরকার ইউটিউবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেবেন। আর ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে অবাধ তথ্য প্রবাহকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে উন্মুক্ত রাখতে সব ধরনের কার্যকর উদ্যোগ নেবেন। সরকারের কাছে এমন প্রত্যাশাই করেন প্রগতিশীল নাগরিকেরা।

প্রসঙ্গত, বিকল্প (প্রক্সি) সার্ভার ব্যবহার করে কিংবা ব্যাকলিঙ্ক দিয়ে অনায়াসে ইউটিউবে প্রবেশ করা সম্ভব। অর্থাৎ শুধু একটি নির্দিষ্ট সাইট বন্ধ করে কখনোই বিতর্কিত বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। অথচ এ ধরনের উদ্যোগের কারণে সরকারকে সমালোচনার তোপ সামলাতেই হয়। অথচ বিষয়টিকে ভিন্নভাবেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ বিষয়ে সরকার আরো প্রগতিশীল ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারেন।

প্রসঙ্গত, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউব বাংলাদেশে বন্ধ হয়েছে অনেকদিন। কিন্তু এ সাইট বন্ধ করার ফলে ইউটিউবের সঙ্গে যুক্ত অনেক ওয়েবসাইটের লিঙ্ক পেজেও প্রবেশ করা যাচ্ছে না। অনেকবার চেষ্টা করেও এসব সাইটে কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাচ্ছে না।

এর মধ্যে গুগল সার্চ ইঞ্জিন (গুগল ডটকম) এবং জিমেইল অন্যতম। এ ছাড়াও বিশ্বের খ্যাতনামা কিছু সংবাদমাধ্যমেও প্রবেশ করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে অনলাইন ভোক্তাদের জন্য বিরক্তিকর অবস্থার তৈরি হয়েছে।

বাংলানিউজের পাঠকেরা ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাইছেন। প্রসঙ্গত, ইউটিউব যুক্ত আছে এমন সাইটের কিছু জাভা স্ক্রিপ্ট পৃষ্ঠা বিন্যাসে সমস্যা থাকায় এমনটা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অনলাইন বিশেষজ্ঞ জানান, ইউটিউব বন্ধ করার ফলে অনেক জাভাস্ক্রিপ্ট লিঙ্কপৃষ্ঠা ব্রাউজ করা যাচ্ছে না। ওই পৃষ্ঠাগুলোতে ইউটিউব থাকায় এমনটা হচ্ছে। ফলে ওই পৃষ্ঠাগুলো লোড হতেও ডাউনটাইম বেশি লাগছে।

এদিকে গত কদিন ধরে গ্রামীণফোনের মোবাইল সিমভিত্তিক ইন্টারনেট থেকেও জিমেইল খোলা যাচ্ছে না। খুলতে গেলেই ‘সার্ভার এরর’ বার্তা আসছে। পর্দায় ভেসে উঠছে ‘উই আর ওয়ার্কিং টু ফিক্স দ্য প্রবলেম’। আবার কিছুক্ষণ পর প্রবেশ করতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

স্টারহোস্ট আইটির প্রধান নির্বাহী কাজী জাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, আসলে ইউটিউব যুক্ত যেসব ওয়েবসাইট আছে সেগুলোতেই প্রবেশে মূলত এ সমস্যা হচ্ছে। সাইট তৈরির প্রযুক্তিগত বিন্যাস ঠিক থাকলে এ সমস্যা হতো না। তবে ইউটিউব যুক্ত আছে এমন সাইটগুলোতে প্রবেশ করতে বাংলাদেশ থেকেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে এটা সাময়িক।

এ ছাড়াও গুগল সার্চ ইঞ্জিন এবং জিমেইল অনেক সেবার ক্ষেত্রে ইউটিউবের সঙ্গে যুক্ত সার্ভার ব্যবহার করায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ ইউটিউবের লিঙ্ক আছে এমন সাইটগুলো ব্রাউজ করতে মূলত সমস্যা হচ্ছে।

ইনোসেন্স অব মুসলিম ভিডিও প্রচারে ইউটিউব এখন আইনি ঝামেলায় পড়েছে। গুগলের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এখন ইউটিউব। তাই দায়টা গুগলেরও। এরই মধ্যে ব্রাজিলের আদালতে আইনি মামলায় হেরে ইউটিউব ভিডিও বন্ধের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছে গুগল। সংবাদমাধ্যম সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এরই মধ্যে নির্বাচনবিরোধী উদ্দেশ্যপূর্ণ ভিডিওচিত্র আপলোড করায় ব্রাজিলের এক মেয়র গুগলের শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। ফলে এ বিতর্কে নতুন সুর আসে।

ব্রাজিলের গুগল পরিচালক ফাবিও কোয়েলহো জানান, ব্রাজিলে বিতর্কিত ভিডিও বন্ধের নির্দেশ দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। এমনিতেই ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ ভিডিওচিত্রের কারণে পুরো মুসলিমবিশ্বই উত্তাল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।

এ কারণে ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ খ্যাত বহুল আলোচিত ভিডিওচিত্রের সব ধরনের ফুটেজ ইউটিউব থেকে মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে ব্রাজিলের আদালত। অর্থাৎ বিষয়টি শুধু একটি অনুরোধ নয়, কিংবা একটি প্রচেষ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আইনি দৃষ্টিতেও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা সম্ভব। এজন্য জনগণ সরকার সংশ্লিষ্টদের আরো ধারাবাহিক, সক্রিয়, স্বচ্ছ এবং টেকসই ভূমিকা প্রত্যাশা করছে।

বাংলাদেশ সময় ১২৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১২
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।