বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম বাড়ছে। ইদানিং এ নিয়ে নানামুখি অভিযোগও শোনা যাচ্ছে।
আর এ অভিযোগ তুলছে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীরা। অজ্ঞতা, অতিআগ্রহ আর ভুল সহযোগীদের খপ্পড়ে পড়ে এসব সাইবার ক্রাইমের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন নারীদের অচেতনতাও এ জন্য অনেকাংশে দায়ী।
গত জানুয়ারি থেকে ‘বাংলাদেশ কমপিউটার সিকিউরিটি ইন্সিডেন্ট রেসপন্স’ নামে একটি দল সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। ইউটিউব, ইমেইল এবং সাইট হ্যাকিংয়ের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত এবং সমাধানমূলক কাজ করে এ বিশেষ কমিটি।
দেশে ফেসবুকভিত্তিক সাইবার ক্রাইমের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে গ্রহণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিতে এ কমিটি সক্রিয় ভূমিকা রাখে। তবে এসবের মধ্যে ভিডিও শেয়ারিং সাইটের অভিযোগই বেশি আসে। তখন কর্তৃপক্ষের কাছে এসব অভিযুক্ত সাইট, ভিডিও এবং লিঙ্ক মুছে ফেলার অনুরোধ করা হয়। এতেও কাজ না হলে দেশীয়ভাবে তা বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে এ সমস্যার যথাযথ সমাধান হলে ব্লকটি উঠিয়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে ইউটিউব বন্ধ আছে। মুসলিম বিতর্কিত একটি ভিডিও সম্প্রচার ইউটিউবে বন্ধের জন্য গুগলকে অনুরোধ করা হলে। গুগল কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় আপাতত বাংলাদেশে ইউটিউব বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ বিশেষ সাইবার ক্রাইম সেলটি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় অনলাইন কনটেন্ট পর্যবেক্ষণে কাজ করে। ভুয়া এবং নারী চরিত্রের ছদ্মবেশে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে এসব সাইবার প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয় সুকৌশলে। সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞেরা এমন তথ্যই দিয়েছে।
অভিযোগকারী নারীদের অনেকেই বলেন, ছদ্মনামে তাদের ছবি এবং ব্যবহৃত সেলফোন নম্বর ব্যবহার করে এসব সাইবার ক্রাইমে অজান্তেই তারা চিহ্নিত হয়ে পড়ে। এসব অভিযোগের পরে সত্যতাও পাওয়া যায়।
পরে এ অভিযোগের ভিত্তিতে ছবি, নাম এবং অ্যাকাউন্ট আইডির সুনির্দিষ্ট তথ্য বিবেচনায় প্রকৃত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে ফেসুবক কর্তৃপক্ষের কাছে ভুয়া অ্যাকাউন্টটি মুছে ফেলার জন্য অনুরোধ করা হয়। এ প্রক্রিয়ার দু থেকে তিন সপ্তাহ সময় লেগে যায়।
ফেসবুক প্রতারণার স্বীকার অথচ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই এমন অভিযোগকারীদের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ভিত্তিতে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করা যাবে। পরে এ সাইবার ক্রাইম তা তদন্তের ভিত্তিতে শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
তবে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এসব নারীদের অভিযোগ তদন্তে তাদের নিজেদের দোষও ধরা পড়ে। নিছক কৌতুহল কিংবা মজা করতে গিয়েই এসব ফাঁদে পড়ছেন দেশের নারী সমাজ। এক্ষেত্রে ব্যক্তি সচেতনতাকে অনেক বেশি বিবেচনায় নেওয়া উচিত বলে মনে করেন সাইবার ক্রাইম বিশ্লেষকেরা।
একান্ত ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং স্পর্শকাতর ছবি প্রথমে মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয়। পরে তা ফেসবুক এবং ইউটিউবের মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অনেকাংশে তদন্তে বেড়িয়ে আছে অভিযোগকারীর পরিচিতদের নাম।
প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা তাদের সহপাঠী, সহযোগী, আত্মীয় পরিজন এবং অফিস কর্মকর্তাদের থেকে সচেতনভাবে চলাফেরা করলে অনেকাংশে এসব থেকে দূরে থাকা সম্ভব। বিভিন্ন সামাজিক সাইট যেমন ফেসুবক কিংবা ইউটিউবে নিজের ছবি, মোবাইল নম্বর এবং ভিডিও আপলোড করে রাখলে তা যেকোনো সময় অসৎ উদ্দেশ্য ব্যবহার হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই ভালো পন্থা। এমনটাই জানালেন সাইবার ক্রাইম বিশ্লেষকেরা।
এ মুহূর্তে চেকফেসবুক ডটকম বলছে, বাংলাদেশে ১৬ লাখ সক্রিয় ফেসুবক গ্রাহক আছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ নারী। সব মিলিয়ে শুধু ক্রাইম তৎপর না হয়ে ব্যক্তি সচেতনতাকেও কাজে লাগানো তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকেরা।
বাংলাদেশ সময় ২২১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১২