ঢাকা, শনিবার, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১ শাবান ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

শমী-তমাল ঘনিষ্ঠরা স্বপদে, ই-কমার্স খাতের নিয়ন্ত্রণে পুরনো চক্র

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫
শমী-তমাল ঘনিষ্ঠরা স্বপদে, ই-কমার্স খাতের নিয়ন্ত্রণে পুরনো চক্র

ডিজিটাল কমার্স খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) নিয়োগকৃত প্রশাসক মুহাম্মদ সাইদ আলীর কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে সংগঠনটির কর্মীদের মধ্যে। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে শমী-তমাল ঘনিষ্ঠ ই-ক্যাব সেক্রেটারিয়েটের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভনকে স্বপদে বহাল রাখার বিষয়ে প্রশাসক একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন।

ই-ক্যাবের তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখার প্রয়োজনে শোভনকে অপসারণের দাবি করা হলেও তা না মেনে উল্টো তাঁর পক্ষ নিয়েছেন প্রশাসক সাঈদ আলী। ফলে সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ই-ক্যাব সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে প্রশাসক সাঈদ আলী ও সেক্রেটারিয়েটের নির্বাহী পরিচালক শোভনকে অপসারণ করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানান সাইফুল। অভিযোগে বলা হয়, দেশের ই-কমার্স খাতের দ্রুত বিকাশ ও উন্নয়নকল্পে সমন্বিত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাণিজ্য সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও দেশে যখন বৈষম্য-দুর্নীতি-অপশাসন বিরোধী বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, তখনই এই সংগঠনটির ঘাড়ে চেপে বসেন ওই দুই ব্যক্তি। তাঁরা বিগত সময়ের সুবিধাভোগী ও দুর্নীতিবাজদের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষার পাশাপাশি অপকৌশলের অংশ হিসেবে ই-ক্যাবকেন্দ্রিক গঠিত সিন্ডিকেট কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে সংগঠনটিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলছেন।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ই-ক্যাবের সাবেক সভাপতি শমী কায়সার গত বছর ১৩ আগস্ট পদত্যাগ করেন। এর কয়েক দিন পর গোটা পরিচালনা পরিষদই পদত্যাগ করে। এরপর গত ১০ সেপ্টেম্বর ই-ক্যাবের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের উপসচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলীকে। প্রশাসক ই-ক্যাবে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার প্রস্তুতির জন্য গত ২০ নভেম্বর সদস্যদের পক্ষ থেকে ১৫ জনকে নিয়ে একটি সহায়ক কমিটি গঠন করেন।

ওই কমিটি গত ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় সেক্রেটারিয়েটের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভনকে অপসারণের দাবি জানায়। কিন্তু প্রশাসক ওই দাবি মানতে নানা ধরনের অজুহাত দেখাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে সহায়ক কমিটিতে তিনি আরো অনেক বেশি সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। সেখানে তাঁর পক্ষে কাজ করবেন এমন সদস্যদের নিয়ে গত ১৪ জানুয়ারি ৩৬ সদস্যবিশিষ্ট সহায়ক কমিটি গঠন করেন। এত বড় সহায়ক কমিটি এর আগে কখনো দেখা যায়নি। ই-ক্যাবের নির্বাহী কমিটির আকারই সর্বোচ্চ ১১ সদস্য নিয়ে হয়।

এ বিষয়টি উল্লেখ করে অভিযোগকারী জানান, আগের ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, দুর্নীতিবাজদের পুনর্বাসন করার উদ্দেশেই এভাবে কমিটিতে নিজের পক্ষের লোকদের দিয়ে দল ভারী করেছেন প্রশাসক।

সহায়ক কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রশাসক নিজেই প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি কমিটি বড় করছেন সদস্যদের নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল করার জন্য। তিনি বলেন, পুনর্গঠিত কমিটিতে প্রশাসক এমন সদস্যদের জায়গা দিয়েছেন, যাঁরা কোনো মানদণ্ডে ই-ক্যাবের নেতৃস্থানীয় হওয়ার যোগ্য নন। এমনকি তাঁদের কেউ কেউ ই-ক্যাবের অফিসও আগে চিনতেন না। সহায়ক কমিটিতে জায়গা পাওয়ার পর তাঁরা প্রথমবারের মতো ই-ক্যাব অফিসে এসেছেন। ই-ক্যাবে প্রশাসক নিয়োগের ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা ছিল। সে লক্ষ্যে একটি প্রাথমিক ভোটার তালিকা করার কাজ করছিল সহায়ক কমিটি। সেই কার্যক্রমও ভণ্ডুল করতে চেষ্টা চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী।

জানা গেছে, সাইদ আলী বিসিএস বন ক্যাডার থেকে আওয়ামী সরকারের এমপি মির্জা আজমের বিশেষ সুপারিশে উপসচিব হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত হন। নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম নিজের স্বার্থ হাসিলের অংশ হিসেবে কুচক্রী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় প্রজেক্টভিত্তিক কার্যক্রমে অনিয়ম, নিজেদের নামীয় ও বেনামীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যাবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা, আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ অডিট রিপোর্ট করা, নিয়মবহির্ভূতভাবে সাব-কমিটি গঠন ও সুবিধা হাসিলের নিমিত্তে কার্য-বণ্টনসহ অসংখ্য অনিয়ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগপত্রে তুলে ধরা হয়।

সৌজন্যে কালের কণ্ঠ

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৫
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।