হাজারো মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রথমবারের মতো হাফ ম্যারাথনে দৌড়াল একঝাঁক মানবসদৃশ রোবট। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের রাস্তায় স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে এ দৃশ্য দেখা যায়, যা প্রযুক্তির জগতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
বেইজিংয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষিত হাই-টেক জোন ‘ই-টাউন’ এলাকায় আয়োজিত ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দৌড় প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাস্তব পরিবেশে দুই পায়ে চলা রোবটগুলোর কর্মক্ষমতা ও সক্ষমতা মূল্যায়ন করা।
দৌড় শুরুর সময় চীনা পপ সংগীত ‘আই বিলিভ’ পরিবেশে উৎসবমুখর আবহ তৈরি করে। রোবটগুলো একসারি হয়ে এগোতে থাকে, আর সাধারণ দর্শনার্থীরা মোবাইল ক্যামেরা তাক করে বন্দি করতে থাকেন অভিনব এই দৃশ্য।
দৌড়ের সময় একটি ছোট রোবট হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়, কিন্তু কিছুক্ষণ পর নিজেই উঠে দাঁড়ায়। মুহূর্তেই দর্শকদের করতালিতে গর্জে ওঠে পুরো এলাকা। অন্যদিকে, দেখতে ‘ট্রান্সফরমার’-এর মতো একটি প্রপেলারচালিত রোবট শুরুতেই রেলিংয়ে ধাক্কা খেয়ে এক প্রকৌশলীর গায়ে পড়ে যায়।
ইভেন্টের ভেন্যু ই-টাউনের ব্যবস্থাপনা কমিটির উপ-পরিচালক লিয়াং লিয়াং বলেন, মানুষের কাছে এটি হয়তো ছোট এক কদম মনে হতে পারে, কিন্তু হিউম্যানয়েড রোবটের জন্য এটি বিশাল এক অগ্রগতি। তিনি জানান, এই আয়োজন রোবট শিল্পায়নের পথে আরেকটি মাইলফলক ছুঁয়ে দিয়েছে।
প্রযুক্তির জয়রথ
চীনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত প্রায় ২০টি দল এই ব্যতিক্রমী দৌড়ে অংশ নেয়। রোবটগুলোর উচ্চতা ছিল ৭৫ থেকে ১৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত, ওজন সর্বোচ্চ ৮৮ কেজি। কিছু রোবট সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে দৌড়ায়, আবার কিছু ছিল রিমোটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। দৌড়ের জন্য মানুষের ও রোবটের জন্য আলাদা ট্র্যাক বরাদ্দ ছিল। প্রকৌশলীরা জানায়, কে আগে শেষ করল সেটা মুখ্য নয়, বরং লক্ষ্য ছিল রোবটের নির্ভরযোগ্যতা ও স্থিতিশীলতা যাচাই করা।
নোয়েটিক্স রোবটিকসের ২৮ বছর বয়সী প্রকৌশলী ছুই ওয়েনহাও বলেন, আমার মনে হয়, এটি পুরো রোবটিকস খাতের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা। প্রতিদিন একটি রোবট হাফ ম্যারাথনের অনুশীলন করেছে এবং প্রতি কিলোমিটার দৌড়াতে সময় নিয়েছে সাত মিনিটের মতো। তবুও আমরা একটি ব্যাকআপ রোবট প্রস্তুত রেখেছিলাম।
ড্রয়েডআপ কোম্পানির ২৫ বছর বয়সী প্রকৌশলী কং ইচ্যাং বলেন, এই আয়োজন ভবিষ্যতের রোবটভিত্তিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তি গড়ে দেবে এবং মানব সমাজে রোবটের বাস্তব একীকরণের পথে বড় পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন দীর্ঘদিন ধরেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবট প্রযুক্তিতে বিশ্ব নেতৃত্বের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটির একটি স্টার্টআপ ‘ডিপসিক’ দাবি করে, তারা এমন একটি চ্যাটবট তৈরি করেছে যা মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। অন্যদিকে, চীনা নববর্ষের আয়োজনে রোবটের নৃত্য পরিবেশনা দর্শকদের মাঝে দারুণ সাড়া ফেলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
এমজে