ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২ মহররম ১৪৪৭

তথ্যপ্রযুক্তি

‘টাকা বাঁচাতে, বিটিসিএলকে টেকাতে’ দুদকের শরণাপন্ন হন বিশেষ সহকারী  

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৪৮, জুলাই ৭, ২০২৫
‘টাকা বাঁচাতে, বিটিসিএলকে টেকাতে’ দুদকের শরণাপন্ন হন বিশেষ সহকারী   সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ২৯০ কোটি টাকা বাঁচাতে এবং বিটিসিএলের ফাইবার নেটওয়ার্ককে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকিয়ে রাখতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শরণাপন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিটিসিএলের ফাইভজি রেডিনেন্স প্রকল্পের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠির বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

 

বিশেষ সহকারী বলেন, সম্প্রতি বিটিসিএল নিয়ে একটা আলোচনা এসেছে, আমি সেটা অ্যাড্রেস করতে চাই। আপনারা জানেন, বাংলাদেশে যে ইন্টারনেটের ফুটপ্রিন্ট সেটার রিয়েল ইন্টারনেট ফুটট্রিন্ট হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ টেরাবাইট। আমরা যখন ইন্টারনেট বলি, আসলে আমরা যা দেখি ফেসবুকে বা মোবাইলে; এটার সামান্য একটা অংশ রিয়েল ইন্টারনেট বাকিটা আসলে ক্যাশ।

তিনি বলেন, বিটিসিএল যখন তার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের দায়িত্ব নেয় তখন তারা বলেছিল এই ক্যাপাসিটি ২৬ টেরাবাইট হবে। সেই স্পেসিফিকেশনে ক্যাশ ইন্টারনেট এবং রিডানডেন্সি মিস করা হয়েছিল। বুয়েট একটা স্ট্যাডি করে দেখিয়েছে ২০৩০ সালের পর ইন্টারনেট লাগবে ১০০ টেরাবাইটের বেশি। আমরা আজকের হিসেব দেখি, তাহলে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ফুটপ্রিন্ট ৩৫-৩৬ টেরাবাইট। বৈশ্বিক ইন্টারনেটের গ্রোথ রেট হচ্ছে ২৮ শতাংশ। আর উন্নয়নশীল দেশ যেখানে ইন্টারনেট এখনো পৌঁছায়নি সেখানে এই স্তর অনেক বেশি। সেটি হচ্ছে আফ্রিকার মত দেশে ৩৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশের মতো দেশে ৪৫ শতাংশ। আমরা যদি আমাদের ৩৫ টেরাবাইটের সঙ্গে বছরে বছরে ৩৪-৪৫ শতাংশ একটা হিসাব যোগ করি, তাহলে এই প্রবৃদ্ধি আজ থেকে ১২ বছর পরে দাঁড়ায় প্রায় পৌনে দুইশ টেরাবাইট। যদি একটি দেশে ৪০ শতাংশ বা তার আশেপাশের হারে ইন্টারনেট প্রবৃদ্ধি না হয় তাহলে বুঝতে হবে সেই দেশে ইন্টারনেট ইনফ্রাস্ট্রাকচারে সমস্যা আছে।

‘আমরা এজন্য বলেছি বিটিসিএল ফাইবার নেটওয়ার্ক বর্ধিতকরণের জন্য যে প্রকল্প বিগত সরকারের আমলে নিয়েছে এবং টেন্ডার বিগত সরকারের সময়ে হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার প্রক্রিয়ার কাজগুলো বিগত সরকারের সময়ে হয়েছিল। সেখানে একটা এলসি করা হয়েছিল, আমি এবং নাহিদ ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার আগে ২৯০ কোটি টাকা অফেরতযোগ্য এলসি পরিশোধ করা হয়েছে। ’

তিনি বলেন, এই সবকিছু আমলে নিয়ে আমরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি নিজে ওনার অফিসে গেছি। আমি বলেছি যে, যেহেতু ২৯০ কোটি টাকা চলে গেছে এবং যেহেতু এটা সর্বনিম্ন দরদাতা এবং ক্যাপাসিটি নিয়ে যে অপতথ্য এসেছিল সেটা যেহেতু বুয়েট ক্লারিফাই করেছে, আমরা একটা কমিটি করে দেব, সেই কমিটির মাধ্যমে যে ইকুপমেন্টগুলো তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এই ইকুপমেন্টগুলো বিটিসিএলের যে ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের বেসরকারি খাতে ব্যাপক আকারে স্থাপিত হচ্ছে। কিছু বিশেষ কোম্পানি বিটিসিএলকে এই মার্কেট থেকে আউট করে দিতে চায়। আমরা এই বক্তব্য যখন তুলে ধরেছি, তখন বলা হয়েছে আমাদের বিস্তারিত জানানো হোক। সেই রেফারেন্সে আমি মাননীয় দুদক চেয়ারম্যানকে একটা চিঠি লিখি।

‘সেই চিঠিতে আমি মূলত আমার যুক্তিগুলো তুলে ধরি যে, যেহেতু টাকাটা চলে গেছে, আমাদের ক্যাপাসিটি দরকার (বর্তমানে যে ক্যাপাসিটি সেটি জেলা পর্যায়ে মাত্র ১ জিবিপিএস), এটা দিয়ে বেটার কোয়ালিটির ইন্টারনেট সেবাদান অসম্ভব। এখন এই মুহূর্তে যদি বিটিসিএল নেটওয়ার্ক আপডেট না করে তাহলে খুব দ্রুত মার্কেট আউট হতে পারে। এখন যেহেতু তার প্রতিদ্বন্দ্বীগুলো নেটওয়ার্ক আপডেট করছে এবং বিটিসিএল বিভিন্ন ঝামেলার কারণে, যেগুলো সাবেক সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ এবং বিভিন্ন কারণে এই কাজটা বন্ধ হয়ে আছে, সেজন্য ফাইবার নেটওয়ার্ক বিস্তার করা যাচ্ছে না। বিটিসিএলের মোট প্রকল্পের মধ্যে দুটি বিষয় আছে- আইপি নেটওয়ার্ক এবং ফাইবার ডিডব্লিউডিএম নেটওয়ার্ক। আইপি নেটওয়ার্কের কাজ ৭০-৮০ শতাংশ হয়ে গেছে। কিন্তু সেই ৩০০ কোটি টাকা কোনো কাজেই আসছে না। কারণ সেই নেটওয়ার্কের যে সার্ভার বসানো হয়েছে সেই সার্ভারগুলো সংযোগ করার জন্য ডিডব্লিউডিএম নেটওয়ার্ক দরকার। সেজন্য আমরা যুক্তি উপস্থাপন করেছি যে যেহেতু টাকা চলে গেছে আমাদের কাজটা করতে দেওয়া হোক। আর যেহেতু ইকুপমেন্টটা বর্তমানে বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত ইকুপমেন্ট, আমরা একটা কমিটি করে দেব যে কমিটি নিশ্চিত করবে যে প্রতিশ্রুত ইকপুমেন্ট আসবে। ’

বিশেষ সহকারী বলেন, এটাকে অপব্যাখ্যা করে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে, আমার মিনিস্ট্রি এবং আমাদের সরকারকে চরিত্রহননের একটা চেষ্টা আপনারা মিডিয়াতে দেখেছেন। আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমি এবং আমার মন্ত্রণালয়ে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা আছি তারা কোনো ধরনের কোনো দুর্নীতিতে জড়িত নই। এখানে যত ধরনের কাজ হয়েছে প্রত্যেকটা কাজ আগের সরকারের সময়ে হয়েছে। আমরা শুধু কিছু চিঠি আদান-প্রদান করে আমাদের মতামত ব্যক্ত করেছি। চিঠির শেষ লাইনে দুদক চেয়ারম্যানের আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি। আর এই প্রকল্পে দুদকের পর্যবেক্ষণ ছাড়া কোনো ধরনের কোনো মামলা নেই। আমরা বলছি ৬০০ কোটি টাকা গচ্ছা যাবে এবং বিটিসিএল ডিডাব্লিউডিএম বাজারে দুর্বল হয়ে মার্কেট আউট হয়ে যাবার আশঙ্কা আছে।

এমআইএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তথ্যপ্রযুক্তি এর সর্বশেষ