খুলনা: ডিজিটাল প্রদর্শনীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি রোবট দর্শনার্থীদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। প্রথবারের মতো একদল তরুণ প্রকৌশলী মানুষের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে সক্ষম এমন রোবট বানিয়েছে।
এ রোবটের নাম ‘রোবটিক আর্ম’। রোবটটি মানুষের হাতের বিকল্প হিসেবে গৃহাস্থলির কাজ থেকে শুরু করে শিল্পেক্ষেত্রের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ খুব সহজে স্বল্প সময়ে করতে সম। একই কাজ মানুষের জন্য বারবার করা বিরক্তিকর ও কষ্টদায়ক। এমন বিরক্তিকর কাজও খুব সহজে এ রোবট করতে পারদর্শী।
এ রোবট তৈরির তত্ত্বাবধায়ক প্রভাষক মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এটি উন্নতমানের রোবট তৈরির প্রথম ধাপ। এটিকে নানা কাজে ব্যবহার করা যাবে। গৃহাস্থলির কাজ থেকে শুরু করে শিল্পক্ষেত্রের বিভিন্ন বিপজ্জনক কাজও এটি করতে সম।
শিার্থীদের এ উদ্ভাবনকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন শাহ বলেন, এ ধরনের উদ্ভাবন আমাদের দেশে বিরল। এ অর্জনকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশেও উন্নতমানের রোবট তৈরি করা সম্ভব। রোবট শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে মানবসদৃশ যন্ত্র। কল্পনায় আমরা হয়তো দেখি যন্ত্রটি হেঁটে চলেছে কিংবা কথা বলছে। আসলে রোবট কী? রোবট শব্দের উৎপত্তি চেক শব্দ ‘রোবোটা’ থেকে। এর অর্থ ফোরসড লেবার বা মানুষের দাসত্ব কিংবা একঘেয়েমি খাঁটুনি বা পরিশ্রম করতে পারে এমন কিছু।
শিার্থী ফজলুর রহমান তানিম বাংলানিউজকে জানান, রোবটিক আর্ম আবিষ্কারের চিন্তা প্রথমে আসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) ডিসিপ্লিনের প্রভাষক এসকে আলমগীর হোসেনের মাথায়। তাকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন একই ডিসিপ্লিনের প্রভাষক কাজী মাসুদুল আলম।
এ উদ্যোগকে সফল করতে প্রকৌশলী কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল আহসান ও তানভির আহমেদ শুভকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর ছয়মাস পর এসকে আলমগীর হোসেন ও কাজী মাসুদুল আলম কমপিউটার বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে কানাডায় চলে গেলে এ কাজের তত্ত্বাবধায়ন করেন একই ডিসিপ্লিনের প্রভাষক মাসুদুর রহমান এবং শামীমা ইয়াসমিন। দীর্ঘ এক বছর গবেষণার পর তারা এ রোবটিক আর্ম আবিষ্কার করতে সম হন।
আবিষ্কারকরা জানান, এটি আমাদের দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এতে ব্যবহৃত সব যন্ত্রাংশ আমাদের দেশে সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। তাছাড়া এ যন্ত্রের অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি মানুষের কথা মতো কাজ করতে পারে। রোবটিক আর্ম সক্রিয় করতে প্রয়োজন একটি কমপিউটার, বিভিন্ন ড্রাইভার সার্কিট, হেড ফোন এবং রোবটসদৃশ যান্ত্রিক হাত। প্রথমে কমপিউটার, ড্রাইভার সার্কিট ও রোবটিক আর্মকে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিতে হবে এবং হেড ফোনকে কমপিউটারের সঙ্গে যুক্ত করলে ব্যবহারকারী তার কথার মাধ্যমে যন্ত্রটিকে ইচ্ছামতো পরিচালনা করতে পারবেন।
রোবটিক আর্ম সম্পর্কে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, রোবটিক আর্ম হচ্ছে এক ধরনের রোবট যা মানুষের হাতের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে সম। গবেষণাগারে বিভিন্ন বিষাক্ত ও বিপজ্জনক রাসায়নিক বস্তু ব্যবহার মানুষের শরীরের জন্য তিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এসব েেত্র এ যন্ত্র বিনা সংস্পর্শে সফলতার সঙ্গে কাজ সম্পাদন করা যায়।
এ মুহূর্তে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে রোবটের চাহিদা বাড়ছে। রোবটের মাধ্যমে মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে চলেছে। এ ধরনের আবিষ্কার তথ্যপ্রযুক্তির মানোন্নয়নে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত রোবটিক্স অ্যান্ড ইনটেলিজেন্ট সিস্টেম বিষয়ক সেমিনার ও সফটওয়্যার ফেয়ার এবং ঢাকা পরমাণু শক্তিকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক্স সোসাইটির (বিইএস) বার্ষিক সম্মেলনে এ রোবটিক আর্মের কলাকৌশল উপস্থাপন করা হয়।
মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করতে নিত্যনতুন কৌশল ও যন্ত্রপাতি আবিস্কৃত হচ্ছে। মানুষের হাত পা নাড়ানোর ভঙ্গিকে বা পশুপাখির চলা ফেরার ভঙ্গিকে অনুকরণ করে যন্ত্র বানানোর চেষ্টাও মানুষের অনেক দিনের। এ চেষ্টারই ফসল রোবট।
এ রোবট এখন বাংলাদেশের তরুণরাও তৈরি করতে সক্ষম। খুলনা ডিজিটাল প্রদর্শনীতে আগত দর্শনার্থীরাও আগ্রহ নিয়ে দেখছে এ রোবটের নানা কর্মকৌশল।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮৩২, নভেম্বর ২৮, ২০১০