ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

‘দেশে ডিজিটাল শিক্ষার চাহিদা তৈরি হচ্ছে’

সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৩
‘দেশে ডিজিটাল শিক্ষার চাহিদা তৈরি হচ্ছে’

ঢাকা: ১৯৯৩ সালে মাত্র ৫ লাখ টাকা নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন মোহাম্মদ আবদুল হাকিম। এখন তিনি ইউনিক বিজনেস সিস্টেমের (ইউবিএসএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এ মুহূর্তে তার প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভার শতকোটি টাকারও বেশি।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ থেকে ২০১৩ সাল, এ সুদীর্ঘ ব্যবসায়িক পথচলাটা তার জন্য মোটেই সহজ ছিল না। বহু চড়াই-উতরাই পেড়িয়েই ইউবিএস আজ তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায় সুপরিচিত নাম। হিটাচি নিয়ে কাজ শুরু করলেও এখন তার প্রতিষ্ঠানের সফলতার মুকুটে আছে ১৭টি জনপ্রিয় ব্রান্ডের পালক।

বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ এবং মানোন্নয়ন নিয়ে অনেক তথ্যই তুলে ধরেন আবদুল হাকিম।

তার প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পণ্যের আছে নিজস্ব বাজার মূল্য আর ব্যবসায়িক কৌশল। ১৯৯৩ সালে প্রজেক্টর চেনা মানুষের সংখ্যা যতটা কম ছিল, তার চেয়েও কম ছিল এ পণ্যের ব্যবহারকারী। ব্যবহারিক উপযোগিতা ছিল একেবারেই অজানা। এমনই চ্যালেঞ্জিং পণ্যের ব্যবসায় নিজেকে নিবেদিত করে সফলতা অর্জন করাও খুব একটা সহজ ছিল না।

গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ৮ বছর প্রবাসে কাজ করে মাটির টানে আর দেশের শিক্ষাখাতের মানোন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে দেশে ফিরে আসেন আবদুল হাকিম।

দেশের উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষার গুরুত্ব তার কাছে ছিল অগ্রগণ্য। বিশ্বাস করতেন শিক্ষাই পারে দেশের দারিদ্র্য ও ভাগ্য পরিবর্তনে হাতিয়ার হতে। আর শিক্ষাখাতে প্রযুক্তি প্রয়োগই এর গতিকে ত্বরান্বিত করবে। বাড়াবে গুণগত মান।

ওভারহেড প্রজেক্টর দিয়ে শুরু করে এখন ইন্টারঅ্যাকটিভ হোয়াইট বোর্ড ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রযুক্তিপণ্য বিপণনে ইউবিএসের নাম আজ সুবিবেচিত। গ্রাহক তালিকায় বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ছাড়াও আছে গ্রামীণফোন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পিজি হাসপাতাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও স্কুল কলেজ।

এ পথচলা আর অভিজ্ঞতা আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যে কোনো উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীর জন্য অনুসারিত এবং অনুপ্রাণিত। তারই হাত ধরে তার ব্যবস্থাপনায় এখন কাজ করছেন কন্যা হাবিবা নাসরিন রিতা (ডিরেক্টর অপারেশন)। আর হামজা বিন হাকিম আছেন ডিরেক্টর প্ল্যানিংয়ের দায়িত্বে। ২০ বছরের এ দীর্ঘ পথ চলার অভিজ্ঞতার গল্প ভবিষ্যতের তরুণ উদ্যোক্তাদের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠতে পারে।

২০ বৎসর আগে প্রযুক্তিপণ্য হিসেবে প্রজেক্টর সম্পূর্ণ নতুন এক ধারণা। এ পণ্যের বিপণনে কি ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছিলেন? আর তা কিভাবে সমাধান করেছেন?

এটা সত্যি ১৯৯২-৯৩ সময়ে এ দেশে কম্পিউটারই বা কজন জানত। প্রজেক্টর তখন একেবারেই নতুন। তবে নতুন কিছু নিয়ে কাজ করার মানসিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা ছিল শুরু থেকেই।

এখানে পণ্যের বাজার তৈরিই ছিল প্রধান কাজ। তাই পণ্যের বিক্রির চেয়ে ব্যবহার উপযোগিতা বোঝানোর চেষ্টাই ছিল প্রথম শর্ত। কেননা এর উপযোগিতাই এর চাহিদা তৈরি করবে। এটি সাহায্য করবে বিক্রিতে। এ মন্ত্রই ছিল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার হাতিয়ার।

কাজটি সহজ ছিল না। শিক্ষকদের গতানুগতিক শিক্ষা উপকরণে ব্যবহারের পরিবর্তে প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারে শিক্ষাকে আরও উপযোগী ও মজার করে তোলার বিষয়টি জনে জনে গিয়ে বোঝাতে হয়। ওভারহেড আর মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের বাজার তৈরিই ছিল চ্যালেঞ্জ।

ব্যবসা তাহলে পুরোপুরি সফল?

সফলতা কতটুকু তা ইন্ডাস্ট্রি বলতে পারবে। আমার দৃষ্টিতে ব্যবসায়িক মুনাফার চেয়ে এর বাজার তৈরি বা মানুষকে এ পণ্যের প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর চেষ্টার সফলতায় আমি সন্তুষ্ট। আজ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এ একই পণ্যের বা ভিন্ন ব্রান্ডের পণ্যের ব্যবসা করছে। এ বাজার তৈরিতে ভূমিকাই সফলতা বা অর্জন।

এখন ব্যবসায় প্রতিযোগিতাকে কিভাবে দেখছেন?

প্রতিযোগিতা বাজার বাড়াতে এবং পণ্যের মান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় সারা বিশ্বে হিটাচির ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং পণ্যের প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ ক্রেতাদের বিশ্বসেরা পণ্যটি অফার করছি। প্রতিযোগিতায় দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সুনাম এবং ক্রেতা সন্তুষ্টিই মুখ্য। আর তা ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

হিটাচি পণ্যের ব্যবসায়িক সফলতায় আপনার প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পণ্য বিপণন প্রতিষ্ঠানের স্বর্ণপদক পেয়েছে। এ অর্জনে কোন যোগ্যতাকে বিবেচনা করা হয়েছে?

কোন অর্জন বা সফলতা একদিনে যেমন হয় না। তেমনি ভালো ব্যবসা বা সত্যিকারের ব্যবসায়ী তার ব্যবসা একদিনের জন্য করে না। সব সময় স্থিরতা এবং গ্রাহকসেবা ও সন্তুষ্টির কথা মাথায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। যেহেতু এ ব্যবসার পথপ্রদর্শক ছিলাম তাই দায়িত্বও ছিল অনেক। ব্র্যান্ড হিসাবে হিটাচিকে সফল করার পেছনে আছে পণ্যের নিজস্ব ব্র্যান্ড ভ্যালু। দেশীয় বাজারে আমাদের গ্রাহক সন্তুষ্টি ও দক্ষ বাজার ব্যবস্থাই এ অর্জনের যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত।

ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জনে গ্রাহকসেবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে গ্রাহক সেবায় পেশাগত দক্ষতা প্রয়োজন। তা কিভাবে নিশ্চিত করেছেন?

আঞ্চলিকভাবে ইউবিএস এর কেন্দ্রীয় অফিস সিঙ্গাপুরে। তবুও গ্রাহকসেবা নিশ্চিতে আছে দক্ষ জনবল। তাদের ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণে উদ্যোগ নিয়ে থাকি। কাজের প্রয়োজনে হিটাচির প্রধান কার্যালয় বা ভারতে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়াও হিটাচি থেকেই বছরে ২ থেকে ৩ বার দক্ষ কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা তো আছেই।

হিটাচি ছাড়াও বোস, ইন্টেল, এমএসআই, এভারমিডিয়া ছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ড পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। এগুলোর বাজার কেমন?

হিটাচি ছাড়াও জনপ্রিয় পণ্য অপটোমা, অ্যাপলো, এমএসআই ছাড়াও বিভিন্ন সাউন্ড সিস্টেম এবং ব্যাংক ইকুইপমেন্ট ছাড়াও বোস, ইন্টেল পণ্যের বাজারে মুনাফা ও প্রসার সন্তোষজনক। মূলত অ্যাপলোও ব্যাংকিং ইকুইপমেন্টগুলো সেগমেন্টেড এবং প্রতিটি পণ্যের বাজার অবস্থান ভালো।

শিক্ষা পণ্যের অনেক বড় ক্রেতা হচ্ছে সরকার নিজেই। এক্ষেত্রে পণ্য দরপত্রের ঝামেলা কেমন বা নেতিবাচক কোনো অভিজ্ঞতা?

আসলে সরকারি কাজের কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। যেমন পণ্যের দরপত্রে কারিগরী দিকের পর আর্থিক বিষয়টি বিবেচিত। শুধু পণ্যের দাম কম হলেই কেউ কাজটি পেয়ে যাবেন এমন নয়। সঙ্গে কারিগরি দক্ষতার বিষয়টিও বিবেচিত। তবে সূচনাকারী হিসেবে একটা বাড়তি সুবিধা তো পাওয়াই যায়। এ খাতে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা নেই। তবে সরকার পণ্যের ওপর যে কর আরোপ করে তা আরও সহনীয় হতে পারে।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার প্রজেক্টরকে আইটি পণ্য বা কম্পিউটার সহযোগী পণ্য হিসাবে বিবেচনা করছে না। এর ভিডিও সুবিধার কারণে একে ঘরোয়া ইলেকট্রিক্যাল পণ্য হিসেবে করারোপ করছে। সব মিলিয়ে এটা ৩২ ভাগের মত। যা পণ্যের দামের বৃদ্ধিতে এবং ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে যদি সরকারের উদারতা পাওয়া যায়, তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার সহায়ক হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষা খাতে প্রযুক্তিপণ্য, প্রজেক্টর এবং হোয়াইট বোর্ড ব্যবহারের বিকল্প নেই।

বর্তমান সরকার ২০ হাজার ৫০০টি বিদ্যালয়কে ডিজিটাল শ্রেণীতে রুপান্তর করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর সফলতা শিক্ষক প্রশিক্ষণের ওপর নির্ভরশীল।

এ ব্যাপারে কোনো কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন?

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এবং ঢাকা চেম্বারের সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে সরকারি বৈঠকে এটা তুলে ধরেছেন। তবে এখনও ফলপ্রসূ কিছু হয়নি।

২০ বছর তথ্যপ্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তন বা উন্নয়নকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

অনেক কারণে নিত্যনতুন পণ্য নিয়ে আমরা কাজ করতে আগ্রহী। দেশে ট্যাব, স্মার্টফোনের গ্রাহক কিন্তু নেহাৎ কম নয়। তবে ইন্ডাস্ট্রি বা সঠিক উন্নয়নে এখনও তা অপ্রতুল। গুণগত পরিবর্তন বাজারকে সুপ্রসারিত করে।

গুণগত পরিবর্তনে কি প্রয়োজন?

সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতায় সরকারি ও বেসরকারি অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে। এ ছাড়া প্রযুক্তিপণ্যের ক্ষেত্রে সচেতনতাও প্রয়োজন। আর প্রয়োজন পরিশ্রম, নিষ্ঠা আর সততা। সঙ্গে নিজের প্রতি বিশ্বাস ও দূরদর্শিতা। একটি বাস্তব পরিকল্পনা আর সুদূরপ্রসারী ব্যবসায়িক চিন্তা ও কর্মচেষ্টাই সফলতার চাবিকাঠি।

এমনটাই বাংলানিউজকে জানালেন আইসিটি অঙ্গনের সুপরিচিত ব্যক্তি আবদুল হাকিম।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৩
সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।