তথ্যপ্রযুক্তির সুপার হাইওয়েতে প্রবেশ করতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু শহরাঞ্চলেই নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে যাচ্ছে ডিজিটাল ছোঁয়া।
শুধু ২০১০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গনের অর্জনগুলোর দিকে তাকালেই এ চিত্র স্পস্টই ফুটে উঠে। এ এক বছরে দেশের ডিজিটাল আবহে যুক্ত হয়েছে বর্ণিল সব সংযোজন আর অর্জন। এসব সাফল্য নিয়ে লিখেছেন মনোয়ারুল ইসলাম
তথ্য বাতায়ন উদ্বোধন:
গত জানুয়ারি মাসে দেশের ৬৪টি জেলার তথ্য বাতায়ন একযোগে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলাভিত্তিক ইতিহাস, ঐতিহ্য, জেলার পরিচিতি, শিক্ষা, দর্শণীয় স্থান, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার সব ধরনের তথ্য নিয়ে এ ‘জেলা তথ্য বাতায়ন’ বা জেলা পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কারিগরি সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের উদ্যোগে এ তথ্য বাতায়ন তৈরি করা হয়। প্রথম পর্যায়ে সব জেলা পোর্টালে তাৎণিকভাবে প্রাপ্ততথ্যগুলোর সমন্বয় করা হয়। এ মুহূর্তে আরও তথ্য সমন্বয়সহ জেলা পোর্টাল হালনাগাদ করার কাজ এগিয়ে চলছে।
নেটওয়ার্ক সক্ষমতায় বাংলাদেশের ৫ম অবস্থান:
নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স (এনআরআই) এর ২০০৯-১০ প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়, দণি এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্ক সক্ষমতার সূচকে বাংলাদেশ আছে পঞ্চম অবস্থানে। অন্যদিকে ভারত ৪২তম, শ্রীলঙ্কা ৭২তম, পাকিস্তান ৮৭তম এবং নেপাল আছে ১২৪তম স্থানে।
এছাড়া বিশ্বের দেশগুলোর নেটওয়ার্ক সক্ষমতার সূচকে (এনআরআই) বাংলাদেশ আগের অবস্থান থেকে ১২ ধাপ এগিয়েছে। উল্লেখ্য, গত মে মাসে বিশ্ব অর্থনেতিক ফোরামের প্রকাশিত গ্লোবাল ইনফরমেশন টেকনোলজি ২০০৯-১০ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩টি দেশের মধ্যে ১১৮তম।
অন্যদিকে ২০০৮-০৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৪টি দেশের মধ্যে ১৩০তম। উল্লেখ্য, ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে ১২৭টি দেশের মধ্যে এ অবস্থান ছিল ১২৪তম। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সফল ব্যবহার করে প্রতিটি দেশ তাদের সামগ্রিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতার বাড়াতে কতটা সক্ষম হচ্ছে, এ প্রতিবেদন তারই একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে থাকে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সাল থেকে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ধারাবাহিকভাবে এ সূচক সংখ্যা প্রকাশ করে আসছে।
মোবাইল ফোনে পুর্জি পাচ্ছেন আখচাষীরা:
সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন ১৩টি চিনিকলে গত অক্টোবর থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পুর্জি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আখ বিক্রির জন্য কোন দিন চাষীকে কী পরিমাণ আখ চিনিকলে আনতে হবে তা চিনিকলগুলো থেকে মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়।
আগে চিনিকল কর্তৃপ আখচাষীদের কাছে চিরকুট পাঠিয়ে এ বার্তা জানাতো। এ চিরকুট পাঠানোর প্রক্রিয়াটি এখন মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।
এরই মধ্যে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, সেতাবগঞ্জ, রংপুর, শ্যামপুর, রাজশাহী, মহিমাগঞ্জ, জয়পুরহাট, দর্শনা, কুষ্টিয়া, জামালপুর, কালিয়াচাপড়া, নরসিংদী ও পাবনায় পুর্জি ব্যবস্থা ডিজিটাল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্রে এ তথ্য জানানো হয়।
ডিজিটাল মাধ্যমে এসএসসির রেজাল্ট এবং খাতা মূল্যায়নের আবেদন:
এ বছর মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং খাতা পুনরায় মূল্যায়ন আবেদনে ওয়েবসাইট এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ সেবায় প্রত্যেক শিাপ্রতিষ্ঠানে প্রথমবার ইমেইলের মাধ্যমে ফল পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এর সঙ্গে ইমেইলে নিবন্ধন করা শিার্থীকে সব বিষয়ের নম্বর জানিয়ে দেওয়া এবং এসএমএসের মাধ্যমে খাতা মূল্যায়নের আবেদন করার ব্যবস্থাও করা হয়। এ সেবা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত সাড়া পাওয়া যায়।
মাল্টিমিডিয়া মাধ্যমে ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন:
এ বছর প্রথমবার সংসদ অধিবেশনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাজেট পেশ করা হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় আধুনিক এ প্রযুক্তিমাধ্যম ব্যবহার করেন। সংসদ অধিবেশনে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে এ বাজেট পেশ করা হয়। অর্থমন্ত্রী বাজেটের মূল পয়েন্টগুলো বলার পর চারটি বড় পর্দার মাধ্যমে তা উপস্থাপন করা হয়।
সব মিলিয়ে এ বছরে ৬৪টি জেলাভিত্তিক তথ্য বাতায়নের উদ্বোধন, নেটওয়ার্ক সক্ষমতার সূচকে বাংলাদেশের পঞ্চম অবস্থান অর্জন, আখচাষীদের জন্য মোবাইল ফোনে পুর্জি ব্যবস্থা চালু, এসএসসির ফলাফল প্রকাশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার এবং জাতীয় বাজেট উপস্থাপনায় ডিজিটাল পদ্ধতি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথ অনেকটাই সুগম করেছে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৬১৮, ডিসেম্বর ১১, ২০১০