ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২৬ জিলহজ ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

‘ড্রোন-ম্যান’ নাবিলের স্বপ্নযাত্রা

সাব্বির আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৪
‘ড্রোন-ম্যান’ নাবিলের স্বপ্নযাত্রা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: কেউ তাকে খেলনা কিনে দিলে দু’দিন পরে তা ভেঙ্গে ফেলতেন। তারপর এর ভেতরে কি আছে খুঁজে দেখতেন।

বাসার রেডিও, টিভি, টেলিফোন--এমন যন্ত্র নেই যা তিনি ভাঙ্গেননি। সব ভেঙ্গেচুরে ভেতরের ডিভাইস খুলে দেখা তার চাই-ই চাই।

বাড়ির পাশের ঈদগাহ মাঠে প্রায় সময় এসে হেলিকপ্টার নামতো। তখনই দিতেন ছুট। হেলিকপ্টারের ওঠা- নামা তাকে ভাবিয়ে তুলতো। এই দুরন্ত আগ্রহ দেখে তার মামা একদিন বললেন: ‘তোমাকে অনেক বড় একটি হেলিপ্টার কিনে দেবো’। কিন্তু তিনি তাতে রাজি নন।   তার আবদার:‘বড় না, আমাকে একটি ছোট হেলিকপ্টার কিনে দাও। ’

তার ধারণা ছিলো আকাশে যে হেলিকপ্টার ওড়ে সেটা খুব ছোট।

স্কুলে যাওয়া যখন শুরুই হয়নি তখনও এভাবে আকাশে ওড়ার যন্ত্র আর কৌশল নিয়ে ভাবনায় ডুবে থাকতেন দিনমান।

বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে এসে সেই ছেলেটি এখন সত্যি সত্যিই আকাশে উড়িয়ে দিলেন এক আজব যন্ত্র। শুধু উড়িয়েই ক্ষান্ত হননি। দূরে কোথাও উড়ে গিয়ে একটি মিশন সম্পন্ন করে আসার মত যন্ত্র তৈরির কাজেও মেতে আছেন। যা এখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে। আধুনিক বিশ্বে খুব আলোড়ন তোলা এই যন্ত্রটির নাম ‘ড্রোন’ বা চালকহীন বিমান।  

ছেলেবেলায় একবার কাগজের প্যারাস্যুট নিয়ে লাফিয়ে নামতে চেয়েছিলেন। ছোটভাইকে নিয়ে দু’তলা ভবনের ছাদ থেকে কাগজের প্যারাস্যুট নিয়ে লাফ দেবার আগ মুহূর্তে মায়ের কাছে ধরা পড়ে যান। ‘আম্মু জানার পর কি যে মার মারছিলেন এখনো মনে আছে। ভাগ্য ভাল সেদিন আমাদের প্লানটি সফল হয়নি। ’

 সেই পরিকল্পনা সফল না হলেও এখন যেকোনো স্থানে যন্ত্র পাঠিয়ে তা ইচ্ছেমতো ওঠানো-নামানো আজ আর তার জন্য কোনো ব্যাপারই না।

এতক্ষণ যার কথা বলা হলো, তিনি সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করে অতিসম্প্রতি সেখানকার মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালেয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তবে নাবিলের স্বপ্নের গন্তব্য আরো বহুদূর…
এখনও ব্যস্ততা শাবির ড্রোন প্রজেক্ট নিয়ে। ড্রোন প্রজেক্টের প্রধান সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল । দেশে প্রথমবারের মত শাবিতে একটি পোর্টেবল ‘ড্রোন কন্ট্রোল স্টেশন’ গড়ে তুলে একটি টিম নিয়ে ড্রোন প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এটির নেতৃত্বে আছেন ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। এছাড়াও যৌথভাবে শাবি ও মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেশ কয়েকটি উদ্ভাবনী কাজেও যুক্ত।

‘শাবিতে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্টের কাজ করতে গিয়ে জাফর ইকবাল স্যারের সঙ্গে পরিচয়। হঠাৎ একদিন স্যার বললেন, চলো নাবিল আমরা ড্রোন ওড়াই..।
স্যার যতটা না সিরিয়াসলি বলেছিলেন আমি তার চেয়ে বেশি সিরিয়াসলী নিয়ে এটা শুরু করি। তখন দেখা যায় বাজেট নাই। স্যার নিজের পকেট থেকে ৫০ হাজার বের করে দিয়ে বলেছিলেন, আপাতত একটা ‍কিছু ওড়াও। চারমাসের মধ্যে আকাশে কিছু ওড়াবো এমন টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু করি। যাতে মাত্র ২৬ দিনের মাথায় আমরা ওড়ানো শুরু করে দিতে পারি। এয়ারক্রাফট টাইপ রিমোট কন্ট্রোলড ডিভাইস ওড়ানের একটি যন্ত্র।

তার উদ্ভাবন ‘ট্রেকিং ডিভাইস’ ‘লেজার কন্ট্রোলার’ ‘প্রতিবন্ধীদের চলাচলের ঘড়ি’র এবার ‘ড্রোন’। এছাড়া মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ দেয়ার পর একটি ‘ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন’ (ইভিএম) তৈরি করেছেন। এই  ইভিএম মেশিন থেকে সঙ্গে সঙ্গে ভোট সার্ভারে চলে যাওয়া সম্ভব। ফলে ভোটের সময় এটি কেউ নষ্ট করে ফেললেও এর ফল নষ্ট করতে পারবে না।

নাবিলের সব উদ্ভাবনের খবর সর্বপ্রথম জানিয়েছিল বাংলানিউজ। নাবিলের আকাশে ওড়ার স্বপ্নের পেছনের অনেক লুকানো গল্প আছে যা কেউ জানেন না।

সেই গল্প বলতেই মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ল্যাবে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় মগ্ন হন নাবিল।

বন্ধুত্বের সম্পর্কের কারণে আগে থেকেই আলাপচারিতার বিষয়ে তাকে ইঙ্গিত দিয়ে রাখাই ছিলো।

শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যর্থনাকেন্দ্র থেকে নাবিল ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ল্যাবে নিয়ে যান। সেখানেই শুরু হয় নাবিলের সফলতার গল্প বলা।

নিজের একান্ত বন্ধুরাও জানে না এমন কিছু মজার বিচিত্র ঘটনা আর অভিজ্ঞতা উঠে আসে এসব গল্পে। সেই গল্প আর স্বপ্নের শুরুটা এই প্রথম কোথাও জানাচ্ছেন নাবিল।

খুব ছোট বেলা যখন নাবিলের বয়স চার তখন তাকে স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নাবিলের পরিবার শিক্ষা সচেতন ছিলো বলে তাকে হবিগঞ্জের দি রোজেস কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করা হয়। কিন্তু নাবিল স্কুলের বাঁধাধরা নিয়মে হাঁপিয়ে ওঠেন। তিন-চার মাস পরে তাকে আর সে স্কুলে দেয়া যায়নি।

নাবিলের বাবার তখন ব্যাংকের চাকুরি। এর আট-নয় মাস পরে বদলি হয়ে চলে যান হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানা সদরে। নবিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয় তাকে। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত সেখানেই পড়ালেখা চলে।

এরপর তার বাবা বদলি হয়ে হবিগঞ্জ সদরে চলে এলে নাবিলকে ভর্তি করা হয় হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই ২০০৫ সালে এসএসসি এবং ২০০৭ সালে হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন নাবিল। এরপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়ার সময়  বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ করতে গিয়ে নাবিলের প্রচুর টাকা দরকার হতো। কিন্তু টিউশনি করলে প্রচুর সময় নষ্ট হবে ভেবে নাবিল একটি বুদ্ধি বের করেন।

নাবিল বলেন, আমি কম্পিউটার সার্ভিসিং করতে পারতাম। হার্ডওয়ারের কাজ জানতাম। এজন্য বিভিন্ন লাইব্রেরিতে ঢুকে টেবিলে একটি মোবাইল নাম্বার সহ `কম্পিউটার সার্ভিসিং করা হয়’ কাগজ লিখে ফেলে আসতাম।

ফোনকল পেয়ে লোকের বাসায় গিয়ে কম্পিউটার মেরামত করে যে টাকা পেতাম তা দিয়ে যন্ত্রপাতি কিনতাম।

আবার অনেকেই প্রজেক্ট বা রোবট তৈরি করতেবো আমার ডাক পড়তো। আমি টাকার বিনিময়ে তাদের সেই প্রজেক্ট ও রোবট তৈরি করে দিতাম। কিন্তু শর্ত  থাকতো, রোবটটি যে আমার তৈরি করেছি তা যেন কেউ না জানে। আমি তাদের শর্ত পালন করতাম।

এমনও হয়েছে যে আমার করা প্রজেক্ট রোবোটিক্স প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে। কিন্তু রোবটটি ছুঁয়ে দেখতেও দেয়া হয়নি আমায়। এসব কথা এ কারণেই বলছি যে, টাকার অভাবে কোনো কাজই আসলে আটকে থাকে না। ইচ্ছা ও মনোবল থাকলে সামনে যেভাবেই হোক এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।

নাবিল বলেন, তৃতীয় বর্ষে যখন পড়ি তখন আমি  ‘ঐশী ইলেক্ট্রনিক্স’-এ কাজ করা শুরু করি।

আমার এ পর্যন্ত্ আসার পেছনে ঐশী ইলেকট্রনিক্সের একটি বড় ভূমিকা আছে। কারণ আমার মাইক্রো কন্ট্রোলার শেখাটা তখন জরুরি ছিলো। সিলেটে এমন কেউ ছিলো না যে এটা শেখাবে। আমি যখন এমনটা খুঁজছিলাম তখন ঐশী ইলেক্ট্রনিক্সের সত্য রঞ্জন সাহা স্যার শাবিপ্রবির কিছু ছেলে নিয়ে মাইক্রো কন্ট্রোলার শেখাতে আগ্রহী ছিলেন। ভাগ্যক্রমে আমি সেই খবরটা জেনে যাই। তখন স্যার বলেছিলেন- তোমরা ১০ জন একসাথে এলে আমি ফ্রি শিখিয়ে দেবো। কিন্তু এই ১০ জন যোগাড় করাটা কঠিন ছিলো। অনুরোধ অনুযোগ করে তারপর রেস্টুরেন্টে খাইয়ে দশ বন্ধুকে নিয়ে হাজির হলাম স্যারের কাছে।

নাবিল বলেন, আমার খুব আগ্রহ দেখে আমাকে ল্যাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়। সেখান থেকে প্রফেশনাল কিছু প্রজেক্টে কাজের সুযোগ পেয়ে যাই- যা আমি চেয়েছিলাম। একই সময় জাফর স্যারে সঙ্গে একসাথে বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ শুরু করি।

নাবিলের জীবনের সবচেয়ে বড় অবদান যার তিনি হলেন তার নানা অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আলাউদ্দিন।

‘আমাকে খেলনা কিনে দেয়া হলে খেলনাটা দুদিন খেলে ভেঙ্গে ফেলতাম। আম্মু একটু বকাঝকা করতেন। কিন্তু নানাভাই আরও খেলনা কিনে দিতেন। শত শত খেলনা ভেঙ্গেছি। এমনকি তার রেডিও-টিভিও ভেঙ্গেছি। ভেতরের ডিভাইস চুম্বক, তার সংযোগ সব খুলে বের করে দেখতাম।

একদিনের ঘটনা বলেন নাবিল। যেদিন বাসার টেলিফোন ঠিক করার জন্য একজন মেকানিক আনা হয়। মেকানিক চলে যাবার পর ওই টেলিফোন সেট নাবিল খুলে ফেলেন। ভেতরের যন্ত্রগুলো মেকানিকের মত নাড়াচাড়া শুরু করেন। একপর্যায়ে নাবিল টেলিফোনের পুরো সার্কিট নষ্ট করে ফেলেন। অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে নানাভাই সেটা বুঝতে পারেন। কিন্তু কোন বকাঝকা করেননি।

নাবিলের এই আগ্রহ দেখে তার নানা তাকে বিভিন্ন বিজ্ঞানমেলায় নিয়ে যাওয়া শুরু করেন। নাবিলের আগ্রহ তাতে আরও বেড়ে যায়। নানাভাই নিজেই পড়াতেন তাকে। কিন্তু বেশিসময় পড়াতেন না। প্র্যাকটিক্যাল বিষয় বেশি দেখাতে নিয়ে যেতেন।

ক্লাস ওয়ানে পড়ার সময়ের একটি ঘটনা। নানা তাকে বললেন, তুমি যেদিন দ্বিতীয় শ্রেণী পাশ করবে সেদিন সাইকেল কিনে দেবো। নাবিল প্রথম শ্রেণির অর্ধেক যেতে
না যেতেই দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়া শেষ করে ফেলেন। কথামত তাকে সাইকেল কিনে দেয়া হয়।

তখন ওই সাইকেলের পার্টসগুলো কোথাও ‍পাওয়া যাচ্ছিলো না। নষ্ট হওয়ার পর তার নানা নিজে নিজে সাইকেল ঠিক করার কথা বলতেন। তখন নিজে নিজেই নাবিল সাইকেল ঠিক করে ফেলতেন।

ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় তার তারা নানাভাই মারা যান। এর আগ পর্যন্ত পদার্থ এবং রসায়নের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নাবিলকে শিখিয়েছিলেন তিনি। এক্ষেত্রে নাবিলের ছোট এবং বড় দুই মামার ভূমিকাও ছিলো। বড় মামা ডাক্তার এবং ছোটমামা ছিলেন ব্যবসায়ী।

সেভেনে পড়ার সময়ই বিজ্ঞানমেলায় অংশ নিয়ে সারা দেশে প্রথম হন নাবিল । ওই বয়সে একটি ডিভাইস বানিয়ে সেটা দিয়ে কথা বলিয়েছিলেন।

তখন সে এতো ছোট ছেলে যে এটি উদ্ভাবন করেছে সেটা কেউ বিশ্বাস করছিলো না। বাসাবাড়ির ট্যাংকিতে পানির লেভেল কোন পর্যায়ে উঠেছে -এটা প্রজেক্ট ডিভাইস বলে দিতে পারতো। সময় মত পানির পাম্প অটো অন-অফ হতো।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এবার কথা হয় নাবিলের সঙ্গে। আপাতত শিক্ষকতায় যোগ দিলেও বেশিদিন এ পেশায় থাকার ইচ্ছে নেই।

ভারতের বিজ্ঞানী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের এক বড় ফ্যান নাবিল। তার মতই মিলিটারি টেকনোলজি নিয়ে নাবিলের আগ্রহ বেশি। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর জন্য প্রতিবছর অনেক যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে কিনে আনতে হয়। নাবিলের ইচ্ছা সেই যন্ত্রপাতি দেশে তৈরি করবেন।

‘মিলিটারির কাজে যেসব টেকনোলজি লাগে আমাদের বাহিনীগুলোকে সেই টেকনোলজি দিয়ে স্বনির্ভর করার ইচ্ছা আমার। এক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন কমিউনিকেশন সিস্টেম ডেভেলপ করা যেতে পারে। সামরিক অস্ত্রের উন্নয়নের কাজ পেলে সেটা সানন্দে করবো।

প্রতিবন্ধীদের জন্যও বেশকিছু টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট তৈরি করার ইচ্ছা আছে যেগুলো বিদেশে এখন উচ্চ দামে বিক্রি হয়।

এছাড়া কৃষি টেকনোলিজি নিয়ে কাজ করারও আগ্রহ আছে তার। দেশে কম খরচে কৃষকের কাছে উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি তুলে দেবার জন্য অনেক কাজ করা যায় বলে মনে করেন নাবিল।

জীবনে আরও স্বপ্ন আছে। এপিজে আব্দুল কালামের যেমন ভক্ত তেমনি স্টিব জবসেরও বড় এক অনুরাগী নাবিল।

নাবিলের স্বপ্নযাত্রার পুরোটাই বাংলাদেশ নিয়েই। অন্য অনেকের মত দেশকে ফেলে বিদেশে গিয়ে প্রযুক্তিবিদ হিসেবে উন্নততর জীবন বেছে নিতে চান না। দেশে থেকে দেশের মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা নাবিলের।

‘আমার নিজের একটি বড় কোম্পানি থাকবে। যার দুইটা কাজ হবে--- একটা প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং অন্যটি একটি সমৃদ্ধ রিসার্চ এবং ডেভেলাপমেন্ট শাখা। যেখানে দেশের সবচেয়ে মেধাবী ছেলেদের নিয়ে একটি টিমওয়ার্ক চলবে। এরা নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের নেশায় মত্ত থাকবে।

এরই মধ্যে নাবিল তার স্বপ্নের কোম্পানির নামও ঠিক করে ফেলেছেন। নাবিলের ভাষায়, এই কোম্পানিতে শুধুমাত্র ব্রিলিয়ান্ট এবং প্যাশনিস্টরাই কাজ করবে। এর কয়েকটা দিক থাকবে যেমন, পাওয়ার সিস্টেম নিয়ে কাজ করা, ড্রোন নিয়ে কাজ করা, কম্পিউটার ও মোবাইল টেকনোলজি নিয়ে কাজ করা।

এর ফলে দেশে বাইরে থেকে এখন যে প্রযুক্তি আমদানি করে বিপুল টাকা ব্যয় করা হয় তা আর করতে হবে না। দেশেই তৈরি হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিপণ্য।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে নিজের জন্মস্থান বলে উল্লেখ করে নাবিল বলেন, ড্রোন নিয়ে একবার এই মেডিকেলের মাঠে এসে উড়িয়ে দেই। সবাই তখন বলেন, এত শত মাঠ থাকতে হাসপাতালের মাঠে কেন? আসলে আমার জন্ম হয়েছিলো এই হাসাপাতালে তাই একটা ইচ্ছে ছিলো যে, এখানে একদিন ড্রোন ওড়াবো। কিন্তু হায়, লোকে এটা ভালো চোখে দেখলো না!

নাবিলের বাড়ি হবিগঞ্জ সদরে। দাদার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে। হবিগঞ্জে নানার বাড়িতে শৈশব-কৈশোর কেটেছে তার। তবে নিজেকে সিলেটের সন্তান বলে পরিচয় দিতেই খুশি নাবিল। নাবিলের বাবা সৈয়দ মনিরুল হক একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। তিনি জনতা ব্যাংকে চাকুরি করতেন। মা আয়েশা বেগম গৃহিনী। ছোট ভাই সৈয়দ আশরাফুল হক নাহিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত ও নাট্যকলা বিভাগের ছাত্র। আর ছোট বোন সৈয়দা ফারজানা হক নাশিদ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।