ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২৬ জিলহজ ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

কুয়েটের তিন শিক্ষার্থীর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সহায়ক চশমা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৪
কুয়েটের তিন শিক্ষার্থীর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সহায়ক চশমা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের প্রতিকূলতা দূর করতে আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক যন্ত্র। এসব যন্ত্রের সাহায্যে অন্ধ মানুষদের পৃথিবীর আলো দেখানো সম্ভব হয়েছে।



এবার তাদের জন্য নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) চতুর্থ বর্ষের তিন শিক্ষার্থী। তারা হলেন- মো. মোস্তফা কামাল, আবু ইবনে বায়েজিদ (ইমন) এবং নাজমুল হাসান।

এক বছর আগে দৃষ্ঠিপ্রতিবন্ধীদের জন্য তাদেরই আবিষ্কৃত বিশেষ চশমাটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। সেখানেই থেমে থাকেননি তারা, গবেষণাকে বহুদূর এগিয়ে নিতে সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক আরো একটি বিশেষ চশমা। অন্ধদের চলাফেরার বাধাবিঘ্ন দূর করতে চশমায় ব্যবহার করা হয়েছে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আধুনিক সব প্রযুক্তি। স্মার্টফোন অ্যাপ, সময় ও অবস্থান নির্ণয়, আবহাওয়া সংবাদসহ আরও উন্নত সব প্রযুক্তির সম্মিলনে তৈরি করেছেন অসাধারণ এ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস।

চশমার আদলে তৈরি এ যন্ত্রটি সম্পর্কে বাংলানিউজকে তারা বলেন, অন্ধদের সহযোগিতায় এ ধরনের উন্নত প্রযুক্তি বিশ্বে এটিই প্রথম। চশমাটি এক সঙ্গে যেমন কার্যক্ষম তেমনই সাশ্রয়ী। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা চশমাটিকে ব্যবহার করতে পারবেন চলার পথের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গাইড হিসেবে।

উদ্ভাবক দলের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শেখ সাদি। তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কল্পনা থেকে চশমাটি বাস্তবে রূপ নেয়।
 
বুধবার বিকেলে চশমাটি সম্পর্কে কুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, দেশের বাইরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষদের নিয়ে গবেষণা হলেও, এ ধরনের স্বয়ংসম্পূর্ণ যন্ত্র আবিষ্কার বিশ্বে এই প্রথম। আগে এতো হালকা ও ব্যবহারবান্ধব যন্ত্র আবিষ্কার করা হয়নি। ব্যবহারের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করলে প্রাথমিক অবস্থায় চশমাটি বেশ ভালো কাজ করছে। তবে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে, খরচ কমিয়ে একে আরও ব্যবহারবান্ধব ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নত করা সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ ধরণের উদ্ভাবনী কাজে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান কুয়েট ভিসি।

চশমাটির বিশেষত্ব হলো এটি চারপাশের সব বস্তু এবং পথের সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করে ব্যবহারকারীকে সঙ্গে সঙ্গে অবহিত করবে। ব্যবহারের সুবিধার্থে এবং বাইরের কোলাহল থেকে মুক্ত রাখতে চশমায় শব্দের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে ভাইব্রেশন। যা আগে আবিষ্কৃত চশমার তুলনায় আরও বেশি কার্যকর।

চশমাটি দিয়ে প্রায় তিন মিটার দূর পর্যস্ত বস্তুর অবস্থান নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায় জানিয়ে তারা বলেন, চশমাটি দিন-রাত ও সব আবহাওয়ায় ব্যবহার উপযোগী।

চারপাশের বস্তু শনাক্ত করতে চশমাটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আলট্রাসনিক সাউন্ড সেন্সর। পথের প্রতিবন্ধকতা নির্ণয় করতে ব্যবহার করা হয়েছে ক্যামেরা। ডাটা প্রসেসিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ‘পিআইসি’ সিরিজের মাইক্রোকন্ট্রোলার।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সুবিধার্থে চশমাটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ভয়েস ইন্সট্রাকশন। চশমার শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সাধারণ মোবাইল ব্যাটারি, যা একবার চার্জ দিলে ব্যবহার করা যাবে দশ-বারো ঘণ্টা। এমনকি চার্জ শেষ হয়ে গেলেও বিশেষ ক্যাবল ইন্টারফেসের মাধ্যমে এটি মোবাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করে সচল রাখা যাবে বাড়তি কয়েক ঘণ্টা। চশমাটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের আরও সবল ও স্বাবলম্বী করে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করেন উদ্ভাবকরা।

চশমাটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি হলেও ব্যবহার করা যাবে আরও অনেক ক্ষেত্রে। নিরাপত্তা কাজেও এটি রাখতে পারবে সক্রিয় ভূমিকা। আকৃতি ছোট হওয়ায়, বিভিন্ন ধরনের রোবোটিক প্লাটফর্মেও এটিকে সংযুক্ত করা যাবে নির্বিঘ্নে।

যেকোনো তলের মসৃণতা নির্ণয়ে চশমাটির সাফল্য শতভাগ বলে জানান মোস্তফা, ইমন এবং নাজমুল।

আশার কথা এই, চশমাটির ক্রয়মূল্য হবে সবার হাতের নাগালে। কারণ এর জন্য ব্যয় হয়েছে মাত্র চার হাজার টাকা। তবে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হলে এর খরচ আরো কমে আসবে বরে জানান তারা।

মো. মোস্তফা কামাল, আবু ইবনে বায়েজিদ ইমন পড়াশোনা করছেন কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এবং নাজমুল হাসান পড়াশোনা করছেন তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগে। তিনজনেই চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। হার্ডওয়্যার ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।

তিনজনেই ক্যাম্পাসে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রতিভার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন। উন্নতপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশ ও দেশের মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন তাদের চোখে। পর্যাপ্ত সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ও আধুনিক গবেষণায় নিজেদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বলে তাদের বিশ্বাস। ‍

বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র ও অনুন্নত দেশে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছেন তারা। প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা পেলে উদ্ভাবন ক্ষেত্রকে আরও সম্প্রসারিত করা যাবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ ব্যাপারে শুধুমাত্র প্রয়োজন সরকার ও গবেষণাবান্ধব প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা।

বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।