ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

এমওইউ হচ্ছে, লাখ লাখ টাকা মাইনে পাচ্ছে গ্রাজুয়েটরা

বিশ্ববিদ্যালয়েও কোর্স চালাবে পিপলএনটেক

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৬
বিশ্ববিদ্যালয়েও কোর্স চালাবে পিপলএনটেক

ঢাকা: দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা আর স্রেফ ফ্রেশার বা শিক্ষানবিস হিসেবে নয় মিড লেভেল বা আপার লেভেলেই কাজ পেয়ে যাবে। ক্যাম্পাস থেকেই তাদের কম্পিউটার জ্ঞান নিশ্চিত করা হবে, যাতে কর্মক্ষেত্রে তারা অনেকটা দক্ষ হিসেবেই ঢুকতে পারে।

তার ফলে জব মার্কেট প্রতিনিয়তই পেতে থাকবে দক্ষ কর্মী। সার্বিকভাবে জাতীয় উন্নয়নে যা গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় এভাবেই নতুন কিছু উদ্যোগের কথা জানাচ্ছিলেন পিপলএনটেক’র সিইও প্রকৌশলী আবুবকর হানিপ।

পিপলএনটেক এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানই ছিলো, যা এখন পুরোদস্তুর একটি বাংলাদেশেরও প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে সুনাম ছড়িয়ে প্রায় বছর দেড়েক ধরে বাংলাদেশেও এর কার্যক্রম বিস্তৃত করেছেন আবু হানিপ।

স্বপ্ন ছিলো এদেশের ছেলে মেয়েরাও আন্তর্জাতিক মানের কম্পিউটার সফটওয়্যার জানবে, তাদের হাতেও তৈরি হবে বিশ্বমানের ওয়েবসাইট, তারাও কাজ করবে ইউরোপ আমেরিকার বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে, তাদেরও অফার আসবে সিক্সডিজিটের কাজের, আর সর্বোপরি দেশেও তারা ঢুকবে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে। দক্ষতার পরিচয় দেবে, দেশকে এগিয়ে নেবে।

আবুবকর হানিপের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে শুরু করেছে। ঢাকায় তার পিপলএনটেকের কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে কয়েক শ’ গ্রাজুয়েট বের হয়েছে যারা তাদের সফটওয়্যার টেস্টিং, ওয়েব ডিজাইনিং, প্রোগ্রামিংয়ের নিবিড় প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন দেশেই বড় বড় অংকের মাইনেতে কাজ করছেন। আর ডজন ডজন গ্রাজুয়েট অফার পাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাজের। ঘরে বসেই তারা পেয়ে যাচ্ছেন বছরে লক্ষ ডলার মাইনের কাজ করার সুযোগ।

এই সাফল্যেরই ধারাবাহিকতায় পিপলএনটেক তথা আবুবকর হানিফ নিয়েছেন নতুন উদ্যোগ। দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেকগুলোর সঙ্গেই তিনি এরই মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই করেছেন এই মর্মে যে, শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার কোর্সের অংশ হিসেবেই তিনি পড়াবেন এসব আধুনিক ও অ্যাডভান্সড কম্পিউটার প্রোগ্রামিং। তাতে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে তাদের আর দশ হাজার পনেরো হাজার টাকা মাইনের সামান্য চাকরি দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করতে হবে না। দক্ষ হিসেবেই তারা চাকরির বাজারে ঢুকবে। আর তাতে মিড লেভেল মানের মাইনে তারা পেয়ে যাবে।

স্বল্প বেতনের চাকরি একটি তরুণের মনকে ভেঙ্গে দেয়। কর্মক্ষেত্রে তারা তাদের পুরো মেধার প্রয়োগ ঘটাতে পারে না। একাধিক কাজ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু সেটা সার্বিকভাবে একটি দক্ষ কর্মশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাধা, বলেন আবু হানিপ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের চার বা পাঁচ বছরের কোর্সের শেষভাগে সহজেই তার অফার করা অ্যাডভান্সড কোর্সটি বুঝতে পারবে। আর তাতে তারা দক্ষ হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পন্ন করবে।

এরই মধ্যে প্রায় ডজন খানেক পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ সই হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে কাজ এগিয়ে চলছে। দুইটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোর্স শেষে জব মার্কেটেও ঢুকে পড়েছে। তবে সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে করা এমওইউ’র পর বেশ ভালো লাগছে, বলেন আবু হানিপ।

তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রচুর। তাদের এই অগ্রসর কম্পিউটার জ্ঞান নিশ্চিত করতে পারলে তা দেশকে উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল শিক্ষার্থীদের নয়, শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পিপলএনটেক।

আবুবকর হানিপ জানান, ট্রেইন দ্য টিচার্স (টিটিটি) নামের এই কর্মসূচি দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দক্ষ করে তোলা হচ্ছে যাতে তাদের হাতেই পরবর্তীতে এই অগ্রসর কম্পিউটার শিক্ষা পেতে পারে শিক্ষার্থীরা।

হানিপ জানান ঢাকা থেকে প্রশিক্ষিতরা এরই মধ্যে বড় বড় অংকের কাজ পাচ্ছে। এর মধ্যে ঘণ্টায় ২৫ ডলার মূল্যে কাজ পেয়েছেন ঢাকায় পিপলিএনটেক থেকে প্রশিক্ষিত মাহির আমিনুর রহমান নামে একজন। তার এই আয় বাংলদেশি মুদ্রায় ঘণ্টায় প্রায় ২০০০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে দিনে আট ঘণ্টা করে কাজ করলে তার আয় হচ্ছে ১৬ হাজার টাকা করে। আর মাসে তা দাঁড়াচ্ছে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি।

আবুবকর হানিপ বলেন, কাজের দক্ষতা বাড়লে এই অংক আরও অনেক বাড়বে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় ১৬ হাজার টাকা মাসিক বেতনই হতে পারে একজন ফ্রেশারের। সেই দিক থেকে একটি নিবিড় প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি তরুণ যদি দিনেই ১৬ হাজার টাকা আয় করতে পারে সেটা একটা দারুণ বিষয়।

আরেকটি দিক হচ্ছে, ছেলে মেয়েরা কেবল যে চাকরি করবে তা নয়, তাদের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছে যারা নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে যাচ্ছেন। ফলে তাদের আয় বেড়ে যাচ্ছে আরও কয়েকগুনে।

কথা হচ্ছিলো পিপলএনটেকের গ্রাজুয়েট শোয়েব মাহমুদের সঙ্গে। তার দক্ষতা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস তৈরিতে। তিনি দেশে থেকেই ফ্রিল্যান্সিং করছেন। দেশেরই বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাজ পেতে শুরু করেছেন। শোয়েব জানালেন, এখন আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। সামনে একটি গতিশীল উজ্জ্বল ভবিষ্যতই দেখতে পাচ্ছেন।

শোয়েব মাহমুদ বলেন, ‘সবচেয়ে বড় দিক পিপলএনটেক আমাকে পুরোপুরি বিনা খরচে স্কলারশিপ স্কিমের আওতায় এই প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাকে তৈরি করে দিয়েছে। ফলে আমরা আজ ভালো আছি... অনেকের তুলনায় অনেক বেশি ভালো আছি। ’

কথা হচ্ছিলো আরেক গ্রাজুয়েট আফরোজা আক্তার প্রভার সঙ্গে। তিনি পিপলএনটেক থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরপরই ঢাকায় একটি কোম্পানির ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কাজ শরু করেন উচ্চ বেতনে। প্রভা জানান, এটি একটি কার্যকর কোর্স যা আমাকে কেবল কাজই নয়, আত্মপ্রত্যয়ও দিয়েছে। প্রভাও পিপলএনটেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন স্কলারশীপ স্কিমের আওতায় সম্পূর্ণ বিনা খরচে।  

স্কলারশিপ একটি দারুণ দিক, বলেন আবুবকর হানিপ। তিনি বলেন, আমরা যখন বাংলাদেশে আসি তখনই ঘোষণা দিয়েছিলাম স্বল্প সামর্থের শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপ নিয়ে সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়বে। সেটাই চলছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমি ব্যবসা করতে আসি নি। সরকার যে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছে তার বাস্তবায়নে একটি আইটি শিক্ষিত তরুণ সমাজের সবচেয়ে বেশি দরকার। আর সে কাজটিই বাংলাদেশে করছে পিপলএনটেক। সরকার তার নিজস্ব প্রকল্পগুলোতে চাইলে পিপলএনটেক কে সম্পৃক্ত করতে পারে, এই আহ্বান জানিয়ে হানিপ বলেন, এতে দেশ উপকৃত হবে কারণ বিদেশে আমাদের অর্জিত জ্ঞান দেশের জন্য কাজে লাগাতে চাই।

পিপলএনটেকের যোগাযোগ: www.piit.us, phone: +8801611446699, +8801799446655
www.facebook.com/peoplentech

বাংলাদেশ সময় ১১৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।