ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

‘করের বোঝা টেলিকমখাতের প্রবৃদ্ধির পথে বাধা’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৮ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৯
‘করের বোঝা টেলিকমখাতের প্রবৃদ্ধির পথে বাধা’ টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠক

ঢাকা: জাতীয় বাজেটে টেলিযোগাযোগ খাতের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে প্রবৃদ্ধি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার (২৬ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিযোগাযোগ বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এ মত দেন তারা।
 
‘প্রস্তাবিত বাজেট: টেলিকমখাতের বাস্তবতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মোবাইল অপারেটরদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও এই খাতে করের বোঝা নিয়ে মতামত তুলে ধরেন।

টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাও এতে বক্তব্য রাখেন।
 
এবার বাজেটে মোবাইল সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া সিমের ওপর কর দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২০০ টাকা এবং মোবাইল কোম্পানির আয়ের উপর সর্বনিম্ন শুল্ক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও আমদানি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে স্মার্টফোনের।
 
টেলিযোগাযোগখাতে করারোপ নিয়ে রবির সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আসলে এটা আর সেবার পর্যায়ে থাকছে না। এটা একমাত্র ইন্ডাস্ট্রি যেখানে দু’টো রেগুলেটরি এজেন্ট কাজ করছে। যেটি অনাকাঙ্ক্ষিত।
 
‘আমাদের চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে, এয়ারটেল টিকতে পারেনি, প্রচুর লস দিয়ে এক্সিট করতে হয়েছে। সিটিসেল ন্যাচারাল ডেথে চলে গেছে। টেলিটকের সঙ্গে রাষ্ট্র আছে সেজন্য সারভাইব করে গেছে, যেটা আমরা বলি আইসিইউতে আছে। তিনটি কোম্পানির মধ্যে আরেকটি কোম্পানি ন্যাচারাল ডেথে যদি যায় তাহলে জনগণের অবস্থা কী হবে, সরকারে অবদান রাখাএই ইন্ডাস্ট্রির কী অবস্থা হবে?’
 
ন্যূনতম ২ শতাংশ ট্যাক্স আরোপ নিয়ে তিনি বলেন, এ বছর আমরা ৫০-৬০ কোটি টাকা প্রফিট করতে পারবো বলে আশা করেছিলাম। এই বাজেটে মিনিমাম ট্যাক্স দিতে হবে ১৫০ কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে নেট লস গুনতে হবে ১০০ কোটি টাকা। এটা কীভাবে যৌক্তিক হতে পারে আমার বোধগম্য না।
 
রবির এই শীর্ষ কর্মকর্তা আরো বলেন, ২১ বছর ব্যবসা করার পরেও মুনাফা করার চেহারা দেখছি না, যখনই স্বপ্ন দেখি তা কোনো একটা অ্যাকশনের মাধ্যমে আটকে যাচ্ছে। বুঝতে হবে আসলেই পরিস্থিতি খুব খারাপ।
 
‘আমরা পুরোপুরি বিশ্বাস করি ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে। টপ লেভেলে যে ডিরেকশন দেওয়া হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা ও মন্ত্রী থেকে যে নির্দেশনা তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ’
 
রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের ডিজিএম সাইফুর রহমান খান বলেন, টেলিকমখাতে বিভিন্ন কর ও শুল্ক আরোপের ফলে লোকসানের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এতে আমাদের মতো ছোট কোম্পানির জন্য টিকে থাকা কঠিন হবে।
 
পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে আয়করের দিকে সরকারের বেশি নজর দেওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন বাংলালিংকের হেড অব ট্যাক্স সারোয়ার হোসেন খান।
 
গ্রামীণফোনের ডিরেক্টর ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতের মধ্যে আমরাই প্রথম পুঁজিবাজারে প্রবেশ করি। এজন্য করপোরেট ট্যাক্সের ওপর ১০ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়া হয়। আর পুঁজিবাজারে যাওয়ার তিন বছরের মাথায় কর রেয়াত ৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে অন্য কোম্পানি পুঁজিবাজারে যেতে নিরুৎসাহিত হবেন।
 
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম বলেন, প্রস্তাবিত ট্যাক্স বাস্তবায়িক হলে সরকার তিন হাজার কোটি টাকা বেশি পাবে। সরকার যদি সিম ট্যাক্স না বাড়ায় তাহলে এই খাতের সরকার ট্যাক্স পেত ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি।
 
এমটবের সাবেক মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতে ১০ শতাংশ সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বের কোথাও নেই। সেই সঙ্গে সিম ট্যাক্স এই খাতের প্রবৃদ্ধিকে থামিয়ে দিচ্ছে।
 
মোবাইল ফোন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে যে সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাবে বলে সরকার ঘোষণা দিয়েছে সেখানেই করের বোঝা চাপানো হচ্ছে। এই খাত থেকে করের বোঝা কমানো উচিত।
 
করারোপের বিষয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একার নয় জানিয়ে সংস্থার সদস্য (কর জরিপ ও পরিদর্শন) মেফতাহ উদ্দিন খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সমন্বয় করেই কর কিংবা ভ্যাটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটি এককভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিদ্ধান্ত নয়।
 
বর্তমানে স্ম্যার্টফোনের সুফলের চেয়ে কুফলও বেশি দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুব বেশি স্ম্যার্টফোনের দরকার নেই। আমরা স্বর্ণের ডিমপাড়া হাঁস মেরে ফেলতে চাই না, যেভাবেই হোক একে বাঁচিয়ে রাখবো।
 
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, টেলিটকের মতো প্রতিষ্ঠানকে রাখি বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এছাড়া সরকারের কিছু কাজ টেলিটক করে। সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হলেও তাকে কর, ভ্যাট দিতে হবে। নতুবা সরকার পরিচালনা করা যাবে না।
 
টিআরএনবি সভাপতি মুজিব মাসুদের সভাপতিত্বে বৈঠকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল আনোয়ার খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআরএনবির ট্রেজাজার শামীম জাহাঙ্গীর। টিআরএনবির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৯
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।