ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

অ্যাপের মাধ্যমে সুদের ব্যবসা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২১
অ্যাপের মাধ্যমে সুদের ব্যবসা ডিবির সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করেই ঋণ নিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে ঋণের আবেদন করলে টাকাও মেলে।

বিভিন্ন চার্জ বাবদ অগ্রিম টাকা কেটে নেওয়াসহ সপ্তাহের ব্যবধানে অতিমাত্রায় সুদসহ আসল আদায় করা হয়।

অ্যাপভিত্তিক ডিজিটাল মাইক্রোফাইন্যান্সের নামে অবৈধ সুদের ব্যবসা পরিচালনা করা এই প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (০৭ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার।

এর আগে মঙ্গলবার (০৫ অক্টোবর) ও বুধবার (০৬ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডি, বনানী এবং মিরপুর এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- ইমানুয়্যাল অ্যাডওয়ার্ড গোমেজ, আরিফুজ্জামান, শাহিনূর আলম ওরফে রাজীব, শুভ গোমেজ ও মো. আকরাম।

তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, নয়টি মোবাইল ফোন, নয়টি সিম কার্ড, চারটি ল্যাপটপ ও চারটি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই উদ্ধার করা হয়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, চক্রটি Tkala– Personal Loans Online (Tkala. Thala-0430 ), Cashman (Cashman-0514, Cashman-0326), RapidCash- Quick Online eLoans App, AmarCash-Personal Loans Online, Cashkash-Fast Loans Online, ও CashCash নামে কিছু অ্যাপ পরিচালনার মাধ্যমে জামানতবিহীন লোন দেওয়ার নামে মাত্রাতিরিক্ত সুদের কারবার চালিয়ে আসছিল। এসব অ্যাপ চীন থেকে পরিচালিত হয়।

কিছু চীনা নাগরিক বাংলাদেশি নাগরিকের সহায়তায় এসব অ্যাপের মাধ্যমে রমরমা সুদের ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। ফেইবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে।

তারা মূলত অর্থ সংকটে থাকা স্বল্প আয়ের লোকজন এবং বেকার ছাত্র-ছাত্রীদের টার্গেট করেন। গ্রাহকরা ঋণের আবেদন করার পর স্বল্প সুদের পরিবর্তে উচ্চহারে সুদ প্রদানের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন।

প্রতারণার শিকার এক ভুক্তভোগীর ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা একটি মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।  

ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকরা বিজ্ঞাপনে প্রদর্শিত লিংকে ক্লিক করেন কিংবা গুগল স্টোর থেকে অ্যাপগুলো ডাউনলোড করেন। বিভিন্ন বিষয়ে পারমিশন দিলে অ্যাপটি গ্রাহকের মোবাইলে ইনস্টল হয়ে যায়। এরপর গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র, ফোন নম্বর, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ফোন নম্বর ও তাদের ব্যক্তিগত তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।

চাহিদা অনুযায়ী আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাত্রাতিরিক্ত প্রসেসিং ফি নিয়ে এবং উচ্চ হারে সুদ নির্ধারণ করে স্বল্প সময়ের জন্য তিন থেকে সাতদিনের জন্য ঋণ দেওয়া হয়।

কোনো গ্রাহক ৩০০০ টাকার জন্য আবেদন করলে অনুমোদনের পর প্রসেসিং ফি বাবদ ৮১০ টাকা রেখে গ্রাহককে মাত্র ২১৯০ টাকা দেওয়া হয়। সাতদিন শেষে গ্রাহককে পরিশোধ করতে হয় মোট ৩ হাজার ১৮ টাকা। মেয়াদ শেষে অনাদায়ে প্রতিদিন হিসাবে গ্রাহককে উচ্চহারে সুদ দিতে হয়।

এছাড়া, অ্যাপ ফি বাবদ ১২০ টাকা, ডাটা অ্যানালাইসিস ফি ১৮০ টাকা, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১৫ টাকা এবং সুদ বাবদ পাঁচ টাকা কেটে রাখার যুক্তি দেখায়।

ঋণের পরিমাণ যতো বেশি হবে টাকা কেটে রাখার প্রবণতাও বেশি। এ ঋণের টাকা গ্রাহককে বিকাশ অথবা নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। এ লোভনীয় ঋণের ফাঁদে পরে অনেকে সর্বস্ব হারান।

এসব অ্যাপে ব্যক্তিগত তথ্য খোয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, চক্রটি সরকারি অনুমোদন ছাড়া থান্ডার লাইট টেকনোলজি লিমিটেড, নিউভিশন ফিনটেক লিমিটেড ও বেসিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নামে অ্যাপভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছিল। আইনগত অনুমোদন ছাড়াই তারা গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ করছে। গ্রাহকরা অ্যাপ ইনস্টল করার মাধ্যমে অ্যাপে গ্রাহকের অজান্তে ক্যালেন্ডারের ইভেন্ট পড়া, মোবাইল ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিও ধারণ, মোবাইলের কন্টাক্টস পড়াসহ মোবাইলের এক্সাক্ট লাইভ লোকেশন নির্ণয়, ফোনের স্ট্যাটাস এবং তথ্য সংগ্রহ, ফোনে সংরক্ষিত মেসেজ পড়া, পরিবর্তন করার অনুমতি নিয়ে নেয়। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের পারসোনাল ডাটা সিকিউরিটি চরম হুমকিতে পরে।

এক্ষেত্রে যেকোনো অ্যাপ ইনস্টল করার পর অথবা কোনো লিংকে প্রবেশ করার পর ব্যক্তিগত তথ্যাদি দেওয়ার আগে নিরাপত্তার বিষয়টি ভালোভাবে নিশ্চিত হতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য যেখানে-সেখানে শেয়ার না করার অনুরোধ জানান পুলিশের এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২১
পিএম/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।