ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
ইউক্রেন নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত পুতিন

৩০৫ দিনে গড়িয়েছে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন। এতদিনে গেছে বহু প্রাণ, ক্ষতি হয়েছে লাখো কোটি অর্থ।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এখন বলছেন তারা হার মানবেন না। বিশ্বের বহু রাষ্ট্র দুই দেশের সংকট নিরসনে একাট্টা। এখন আবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলছেন ইউক্রেন নিয়ে তিনি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।

নিজ দেশের একটি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। যদিও তার এ কথা পুরনো। এর আগেও পুতিন নিজে ও ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসার ব্যাপারে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছিলেন।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, আমরা গ্রহণযোগ্য সমাধানের বিষয়ে জড়িত প্রত্যেকের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত, কিন্তু এটি তাদের উপর নির্ভর করে। আমরা তারাই, যারা আলোচনা করতে কখনও অস্বীকার করিনি।

তিনি বলেন, ইউক্রেনে চলা অভিযানের ব্যাপারে আমরা সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কিন্তু কিয়েভ ও তার পশ্চিমা সমর্থকরা আলোচনায় বসতে অস্বীকার করেছিল।

রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমরা যা করছি তা সঠিক। আমাদের জাতীয় ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা করছি। আমরা সঠিক পথে কাজ করছি। কারণ, আমাদের নাগরিকদের রক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

এ সময় রাশিয়াকে ‘ছিন্ন’ করে ফেলাই পশ্চিমের লক্ষ্য বলে তিনি মন্তব্য করেন। রোববার প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে তাকে আরও বলতে শোনা যায়, তাদের পরিকল্পনার মূলে রয়েছে আমাদের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নীতি। তারা ঐতিহাসিক রাশিয়াকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে চায়। তারা সবসময় ‘বিভক্ত ও জয়’ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য অন্যকিছু; রাশিয়ার জনগণকে একত্রিত করা।

ইউক্রেনে মার্কিন প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন রুশ প্রধান। তিনি বলেন, আমি শতভাগ আত্মবিশ্বাসী, আমাদের সেনাবাহিনী পেন্টাগনের সবচেয়ে উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করবে। অবশ্যই আমরা এটি ধ্বংস করব। উল্লেখ্য, যুদ্ধে টিকে থাকতে ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট মিসাইল পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

এর আগে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) ইউক্রেনের সংঘাতকে যুদ্ধ বলে স্বীকার করেন পুতিন। তিনি বলেছিলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো এ যুদ্ধের অবসান ঘটানো। এ জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হোক, তা আমরা নিশ্চিত করতে চাই, আর তা যত দ্রুত হয়, ততই মঙ্গল।

আগ্রাসনের ৩০৫ দিনে (রোববার, ২৫ ডিসেম্বর) কিয়েভসহ পুরো ইউক্রেনীয় অঞ্চল জুড়ে বিমান হামলার সাইরেন বেজেছে। তবে, কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। কর্মকর্তারা বলছেন, সাইরেনের শব্দ বন্ধ হওয়ার পর ‘সবকিছু ক্লিয়ার’ করে দেওয়া হয়েছে।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহানাত এর আগে তাদের জাতীয় টেলিভিশনকে জানান, রুশ সামরিক জেটগুলো কার্যত চব্বিশ ঘণ্টা ধরে তাদের আকাশে উড়ে চলেছে। তারা প্রস্তুতি বাড়িয়েছেন। যত কিছুই হোক, পরিস্থিতি অবশ্যই তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে।

ইউরি ইহানাত যে সুরে কথা বলেছেন, দিন কয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে সে কথাই বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, সমস্ত প্রতিকূলতার বিপরীতে ইউক্রেনের পতন হয়নি। হবেও না। ইউক্রেন কখনও আত্মসমর্পণও করবে না। লড়াইয়ে আমরা রাশিয়াকে পরাজিত করেছি। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র সফরকালীন কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে তিনি কথাগুলো বলেন।  

বড়দিন উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছাও জানান জেলেনস্কি। স্থানীয় সময় শনিবার এক ভিডিও বার্তায় জনগণকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি রাশিয়ার আক্রমণের মুখে সবাইকে ধৈর্য ধরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের শুরু থেকে আমরা কত কী না সহ্য করে এসেছি। রাশিয়ার আক্রমণ, হুমকি, পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুঁশিয়ারি, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আরও কত কী! আমি জানি, ঠিক তেমনই আমরা এই শীতটাও কাটিয়ে দেব। কারণ আমরা জানি, আমরা লড়াইটা কীসের জন্য লড়ছি।

অক্টোবর থেকে রাশিয়ার ক্রমাগত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বড় শহরগুলোয় মানুষ আলো (রাতে), পানি ও তাপ ছাড়াই দিন কাটাচ্ছে। এসব তথ্য তুলে ধরে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, সম্পূর্ণ অন্ধকারেও, আমরা একে অপরকে শক্তভাবে আলিঙ্গন করার জন্য খুঁজে পাব। যদি তাপ না থাকে, তবে আমরা উষ্ণতার জন্য একে অপরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য আলিঙ্গন করব। আমরা সবসময়ের মতো হাসব ও খুশি হব। একটি পার্থক্য আছে- আমরা কোনো অলৌকিক ঘটনার জন্য অপেক্ষা করব না, যেহেতু এ যুদ্ধ আমরা নিজেরাই লড়ছি।

ভিডিও বার্তার কিছুক্ষণ আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেলেনস্কি খেরসনে হামলার ছবি প্রকাশ করেছিলেন। ছবিতে রাস্তায় জ্বলন্ত গাড়ি, ভাঙা জানালা ও মৃতদেহ দেখা যায়।

ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়ত ছবিগুলোকে ‘সংবেদনশীল’ হিসেবে চিহ্নিত করবে। তবে এটি সংবেদনশীল বিষয়বস্তু নয়। এটি ইউক্রেন ও ইউক্রেনীয়দের বাস্তব জীবন।

সূত্র: আল জাজিরা লাইভ আপডেট

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।