ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

যে কারণে ফাঁসি হলো ইরানের সাবেক কর্মকর্তার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৩
যে কারণে ফাঁসি হলো ইরানের সাবেক কর্মকর্তার

যুক্তরাজ্যের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে সাবেক উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলীরেজা আকবরীকে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটির বিচার বিভাগ।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, আলীরেজা আকবরী ইরান ও ব্রিটেনের দ্বৈত নাগরিক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ‘পৃথিবীতে দুর্নীতি’ ও ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছিল। জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কাজ করায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

ইরানের বিচার বিভাগ একটি নিউজ আউটলেটের মাধ্যমে জানায়, গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তার ক্ষতি করার অভিযোগে আলীরেজা আকবরীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সেটি কার্যকর হয়েছে।

তেহরানের দাবি, আলীরেজা আকবরী এমআই-সিক্স থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ইরানের গোয়েন্দা পরিষেবাকে ব্যর্থ করে দিতে তিনি শেল কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অস্ট্রিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে গোয়েন্দা বৈঠকের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। নিজ দেশের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করায় তাকে নাগরিকত্ব দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল ব্রিটিশ সরকার।

আলীরেজা আকবরীকে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তিনি বলেছেন, এটি নিজস্ব জনগণের মানবাধিকারের প্রতি কোনো সম্মান না রেখে একটি বর্বর শাসক দ্বারা পরিচালিত নির্মম ও কাপুরুষতাপূর্ণ কাজ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি বলেছেন, এই বর্বর কাজটি সম্ভাব্য সবচেয়ে কঠোর ভাষায় নিন্দার দাবি রাখে। এটা অপ্রতিরোধ্য থাকবে না। ২০১৯ সালে আকবরীকে গ্রেফতারের পর তার মৃত্যুদণ্ডের রায় হলে ক্লিভারলি তা স্থগিতের আহ্বান করেছিলেন।

যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও আকবরীকে মৃত্যুদণ্ড না দিতে আহ্বান জানিয়েছিল।

আলীরেজা আকবরীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
২০২০ সালে তেহরানের কাছে একটি শহরে নিহত শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহসহ ইরানের কয়েক ডজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার তথ্য ফাঁসের অভিযোগ ছিল। মোহসেনকে হত্যার ঘটনায় ইসরাইলকে দায়ী করে ইরান। বলা হয়, গ্রেফতার হওয়ার আগে আকবরী তথ্যগুলো ফাঁস করেছিলেন।

ইরানের বিচার বিভাগের মতে, আকবরী ২০০৪ সালে দেশ ছাড়ার আগে পাঁচ বছর ধরে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০০৯ সালে, যুক্তরাজ্য তাকে ইরান ত্যাগ করার পরামর্শ দেয়। বেশ কয়েকবছর পর নিজের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দেশে ফেরেন তিনি। পরে গ্রেফতার হন ২০১৯ সালে। কিন্তু তিনি ঠিক কবে গ্রেফতার হয়েছিলেন, তা কখনেই বলেনি বিচার বিভাগ।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা আইআরএনএ আকবরীর ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ ভিডিও প্রকাশ করে।

ইরানের সাবেক সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির আমলে আলীরেজা দেশটির উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে ইরানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন খাতামি। এ ছাড়া ইরানের বর্তমান নিরাপত্তা প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলী শামখানির ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন আলীরেজা আকবরী।

ব্রিটিশ মিডিয়াকে আকবরী নির্দোষ ছিলেন বলে দাবি করে তার পরিবার। এ ছাড়া তিনি ইরানে ‘রাজনৈতিক খেলার’ শিকার হয়েছিলেন বলে মন্তব্য করে।

সূত্র: আল জাজিরা

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।