ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

যেভাবে ৩৮ বছর ক্ষমতায় কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৩
যেভাবে ৩৮ বছর ক্ষমতায় কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ফের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে কম্বোডিয়ায়। রোববারের এই নির্বাচনও ভোটারদের কাছে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তিই মনে হচ্ছে।

এই নির্বাচনে শক্তিশালী কোনো প্রতিপক্ষ নেই।  

দেশটির প্রায় সবাই জানেন কম্বোডিয়ান পলিটিকাল পার্টি (সিপিপি) আবারো জিতবে। বর্তমানে ৭০ বছর বয়সী হুন সেন ১৯৮৫ সাল থেকে কম্বোডিয়া শাসন করছেন।  

এক সময় খেমার রুজ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করলেও পরে তাদের পতনের আগে তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে ভিয়েতনামের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন হুন। ৩৮ বছর ধরে কম্বোডিয়ার ক্ষমতা ধরে রাখা হুন সেন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি করেন।

এই দীর্ঘ সময় ধরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে তিনি কম্বোডিয়ার ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে তার রাজনৈতিক বিরোধীদের কারাগারে পাঠিয়ে, নির্বাসিত করে বা তাদের সাথে আঁতাত করে ক্ষমতার শীর্ষে নিজের অবস্থান অক্ষুণ্ন রেখেছেন।

হুন সেনের জন্ম ১৯৫২ সালে এক কৃষক পরিবারে। নমপেনে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাছে শিক্ষা লাভ করেন তিনি। ষাটের দশকের শেষ দিকে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। সে সময় এক বন্দুকযুদ্ধে তিনি তার বাম চোখ হারান।

সত্তরের দশকের শেষদিকে পল পটের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনামলে হুন সেন খেমার রুজের একজন কমান্ডার ছিলেন। খেমার রুজের শাসনামলে কম্বোডিয়ায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ মারা যায়।

১৯৭৭ সালে তিনি ভিয়েতনামে পালিয়ে যান এবং খেমার রুজের বিরোধী সেনাদের সঙ্গে যোগ দেন। কম্বোডিয়ায় ১৯৭৯ সালে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করে ভিয়েতনাম। তখন তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেশে ফেরত যান। পরে ১৯৮৫ সালে ৩৩ বছর বয়সে তিনি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন।

১৯৯৩ সালের নির্বাচনে হুন সেন হেরে গেলেও পরাজয় মানতে অস্বীকার করেন। পরে ফুচিনচেপ পার্টির প্রিন্স নরোদম রানারিধের সঙ্গে সমঝোতা করে দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকেন।  

এরপর ১৯৯৭ সালে রক্তক্ষয়ী এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের ক্ষমতা দখল করেন এবং প্রিন্স রানারিধকে সাময়িকভাবে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন।

এশিয়ার দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি কম্বোডিয়া। জ্বালানির উচ্চমূল্য আর স্থির মজুরি এখানকার মানুষের মূল সমস্যা। এখানে দুর্নীতি প্রায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে গেছে, জনগণের কাছে জবাবদিহি নেই বললেই চলে। এর ওপর জমি দখল আর অপরাধের মাত্রা বাড়তে থাকায় মানুষের জীবন আরও অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।

২০১৭ সালে বিরোধী জোট শক্তিশালী হতে শুরু করায় হুন সেন ক্ষমতা হারানোর শঙ্কায় কঠোর হতে শুরু করেন। । সে সময় দেশটির দুই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ স্যাম রেইনসি আর কেম সোখার নেতৃত্বাধীন জোট কম্বোডিয়ান ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টি (সিএনআরপি) স্থানীয় নির্বাচনে বিপুল সংখ্যায় ভোট পায়। এই জোটই ২০১৩ সালের নির্বাচনে ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

চলতি বছরের নির্বাচনের আগে কয়েক মাস ধরে হুন সেন তার একমাত্র কঠিন প্রতিপক্ষ ক্যান্ডললাইট পার্টিকে বিভিন্নভাবে দমন করেন। নির্বাচনের আগে শেষ পর্যন্ত তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

এই নির্বাচন ঘিরে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন হুন সেনের ছেলে হুন ম্যানেট, যিনি পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন, তিনি ক্ষমতা নিলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

হান ম্যানলেট হুন সেনের তিন ছেলের মধ্যে সবচেয়ে বড়। তিনি কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধান। হুন সেনের অন্য দুই ছেলেও পার্টি ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।  

হুন সেনের পর তারা যেন ক্ষমতায় আসতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে তাদের তৈরি করছেন বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের। তবে হুন সেনের ছেলেদের মধ্যে কেউ ক্ষমতায় এলে যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তা মনে করেন না অনেক বিশেষজ্ঞ।

সূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৩
আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।