ইসরায়েল ও হামাসের সংঘাতের মধ্যে সৌদি আরবে সফর করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন। গত শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাতে রিয়াদে পৌঁছান তিনি।
রোববার (১৫ অক্টোবর) কাতারের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সালমান-ব্লিঙ্কেনের বৈঠকের ব্যাপারে তথ্য দেয়। খবরে বলা হয়েছে, বৈঠক শেষ করে হোটেলে ফিরে একটি বার্তা সংস্থার কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেন ব্লিঙ্কেন।
তিনি বলেন, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে রিয়াদে আমার বৈঠকটি ‘খুব ফলপ্রসূ’ হয়েছে। ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধ ও তাদের সহায়তা বিষয়ক কিছু প্রশ্নের উত্তরও দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ব্লিঙ্কেন যে হোটেলে অবস্থান করছেন সেখানেই তার সফর দলের অন্যান্যরা অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সৌদির ডি ফ্যাক্টো শাসকের সঙ্গে তাদের মন্ত্রীর বৈঠকটি এক ঘণ্টারও কম সময় স্থায়ী হয়েছিল।
সৌদি আরবে ব্লিঙ্কেনের এ সফরটিকে ইসরায়েলের পক্ষে সমর্থন বাড়ানোর লক্ষ্য বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। কেননা তিনি সৌদি আসেন ইসরায়েল হয়ে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মূল উদ্দেশ্য হলো সংঘাত যাতে অন্যত্র ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। আরব রাষ্ট্রগুলোকে সংযত রাখা ও দেশগুলো যাতে হামাসের নিন্দা করে সেটি সমন্বয় করা।
তবে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রয়াসের ব্যাপারে পূর্বের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করছে সৌদি আরব। বার্তা সংস্থা এএফপি সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে জানাচ্ছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের উদ্যোগ আপাতত স্থগিত রাখবে সৌদি আরব।
গাজায় হামলা; বিশেষ করে সাধারণ নাগরিকদের ওপর আগ্রাসনের বিষয়ে ইসরায়েলের সমালোচনা করেছে সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
গত শনিবার হামাসের হামলার আগ পর্যন্ত ইসরায়েল ও সৌদি উভয় বলে আসছিল, তারা একটি চুক্তির দিকে অবিচলিতভাবে অগ্রসর হচ্ছে যা মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন আকার দিতে পারে। যদিও সৌদি আরব কখনোই ইসরায়লকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে দোষারোপ করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন গাজায় জাতিগত নিধনে সহায়তা করছেন ব্লিঙ্কেন। আল শাবাকা থিঙ্ক ট্যাঙ্কের জ্যেষ্ঠ নীতি বিশ্লেষক ও পডকাস্ট রিথিংকিং প্যালেস্টাইনের হোস্ট ইয়ারা হাওয়ারি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বৈঠকে অংশ নিয়ে গাজায় মানবিক করিডোর তৈরির ওপর জোর দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানানো হচ্ছে। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এটিকে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বের হয়ে যাওয়ার নিরাপদ পথ হিসাবে বর্ণনা করছেন। কিন্তু ভয়ের বিষয় হলো- এটি মোটেও মানবিক করিডোর নয়, বরং নির্বাসনের স্থায়ী পদযাত্রা।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল সরকার শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার সংক্রান্ত কোনো আন্তর্জাতিক কনভেনশনকে সম্মান করে না। তাই এমন কোনো প্রত্যাশা নেই যে, একবার বোমাবর্ষণ বন্ধ হয়ে গেলে ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে।
গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েল সফর করেন ব্লিঙ্কেন। সফরে গিয়ে ইসরায়েলকে সহায়তার জন্য মার্কিন কংগ্রেসে অপ্রতিরোধ্য দ্বিদলীয় সমর্থন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
একইসঙ্গে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন, কোনো রাষ্ট্র বা অ-রাষ্ট্রীয় কেউ যাতে ইসরায়েলে চলমান হামলা থেকে সুযোগ না নেয়। ইসরায়েলের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় তিনি ইসরায়েলকে সহায়তায় দেওয়া ইউএসএস ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার ও এর স্ট্রাইক গ্রুপের কথাও উল্লেখ করেন।
বেসামরিক লোকেদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা এড়াতে সম্ভাব্য সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি উল্লেখ করেছিলেন।
সৌদি সফর শেষে মিশর সফর করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে তিনি গাজাবাসীর জন্য মানবিক করিডর তৈরির বিষয়ে আলোচনা করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৩
এমজে