ভারতে এ মুহূর্তে খবরের শিরোনামে সঞ্জনা জাটভ নামের এক গৃহবধূ। রাজস্থানের ছোট্ট একটি গ্রামের বাসিন্দা তিনি।
এর কারণ, ভারতের সদ্য অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে ভরতপুর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এই গৃহবধূ। প্রত্যন্ত গ্রামের এক গৃহিণী এখন এমপি।
এটাই একমাত্র কারণ নয়; ভারতের সব থেকে কম বয়সী সংসদ সদস্যের তালিকায় প্রথমে উঠেছে সঞ্জনার নাম। তার বয়স এখন ২৫ মাত্র।
বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মার জেলায় তার দলের প্রার্থী তথা সাবেক এমপি রামস্বরূপ কোলিকে হারিয়েছেন সঞ্জনা। তিনি ছিলেন কংগ্রেসের প্রার্থী।
সঞ্জনার বাড়ি রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে আলওয়ার জেলার সমুচী নামক গ্রামে।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সঞ্জনা জাটভের জন্ম ১৯৯৮ সালের ১ মে ভরতপুর জেলার ভুসাওয়ার গ্রামে। ২০১৬ সালে বিয়ের পর সমুচী গ্রামে স্বামীর সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। তার স্বামী কাপ্তান সিং রাজস্থান পুলিশে কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। স্বামীর উৎসাহে বিয়ের পরে স্নাতক হন সঞ্জনা। এরপরে এলএলবি ডিগ্রিও অর্জন করেন।
তার ইচ্ছা ছিল সরকারি চাকরি করার। আর তার স্বামীর ইচ্ছা ছিল স্ত্রী রাজনীতির মাঠে নামুক।
স্বামীর সহায়তায় পড়াশোনা শেষে রাজনীতিতে যোগ দেন সঞ্জনা। মামাশ্বশুর ছিলেন গ্রামপ্রধান। তার হাত ধরেই রাজনীতির মাঠে পা রাখেন সঞ্জনা। আলওয়ার জেলা পরিষদের সদস্য হন। আর সেই জেলা পরিষদের সদস্য এখন বসবেন ভারতের সংসদ ভবনে।
তবে সফলতা হেসেখেলে আসেনি। বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয় তাকে। যে কষ্ট সইতে না পেরে সঞ্জনার বাবা মারা যান।
গত বিধানসভা নির্বাচনে আলওয়ারের কাঠুমার আসন থেকে চারবারের বিধায়ক বাবুলাল বৈরওয়ার টিকিট কেটে দিয়ে সঞ্জনা জাটভকে প্রার্থী করেছিল কংগ্রেস দল। নির্বাচনে তিনি মাত্র ৪০৯ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।
হাল ছাড়েননি সঞ্জনা। বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পরও লোকসভায় কংগ্রেসের প্রার্থী হন। হারান বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থীকে।
বিবিসি বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে সঞ্জনা জাটভ বলেন, ‘জনগণ আমাকে অনেক ভালবাসা আর সাহস জুগিয়েছে। বিধানসভা ভোটে হেরে গেছি বলে মনেই হয়নি। দলও মনে করেনি যে আমি একজন পরাজিত প্রার্থী ছিলাম। তাই আমাকে এমপি টিকিট দিয়েছে। দলের বিশ্বাসের কারণেই আমি আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছি। ’
তাই বলে ক্ষমতাসীন দলের হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারানো?
সঞ্জনার ভাষ্য, ‘আমি তো তাকে (রামস্বরূপ কোলি) পরাজিত করিনি, জনগণ হারিয়েছে তাকে। তিনি শুধু তার নিজের জেলায় নয়, তার নিজের আটারি গ্রামেও পরাজিত হয়েছেন। সেখানেও আমি বেশি ভোট পেয়েছি। ’
সঞ্জনার কর্মব্যস্ততা এখন অনেক বাড়বে। দুই সন্তানের মা এই নবনির্বাচিত এমপি বললেন, ‘আমি যখন রাজনীতির কাজে যাই, তখন শাশুড়িই সন্তানদের দেখাশোনা করেন। তবে আমি কিন্তু ঘরের কাজও করি আবার রাজনীতিও করি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৪
এসএএইচ