ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘সিনওয়ার আমার বাড়িতেই নিহত হন’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
‘সিনওয়ার আমার বাড়িতেই নিহত হন’ হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার

গাজা উপত্যকার এক ফিলিস্তিনি বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার তার ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িতেই ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হন।  

আশরাফ আবু তাহা নামে ওই ব্যক্তি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর প্রকাশ করা ড্রোন ফুটেজ দেখে তিনি আংশিক ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িটি চিনতে পারেন।

নিজের বাড়িতে এমন ঘটনা দেখে তিনি মর্মাহত হয়ে পড়েন। দক্ষিণ গাজার রাফায় ইবনে সেনা সড়কে তার বাড়ির অবস্থান।  

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলার মাস্টারমাইন্ড মনে করা হয় ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে। বুধবার তিনি ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত হন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করে বলেছে, সিনওয়ার নিহত হওয়ার আগে আংশিক ধ্বংস হয়ে যাওয়া ওই বাড়িটিতে ছিলেন।  
 
আবু তাহা বিবিসি অ্যারাবিকের গাজা লাইফলাইনকে বলেন, গত ৬ মে রাফার ওই বাড়ি ছেড়ে খান ইউনিসে যান তিনি। তখন ইসরায়েল সেখানে অবস্থানরত ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।

এরপর সেখানে হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে এ পর্যন্ত তার বাড়ির কোনো খবর তিনি পাননি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিনওয়ারের শেষ মুহূর্তের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে মেয়ে আবু তাহাকে দেখিয়ে বলেন, তাদের বাড়ি দেখা যাচ্ছে। তাহা নিজের মেয়ের কথা বিশ্বাস করতে পারেননি। এরপর তার ভাই নিশ্চিত করেন, বাড়িটি তারই।

তাহা বলেন, আমি পরে নিশ্চিত হই, এটি আমারই বাড়ি। সেখানকার চিত্র দেখি এবং আমি মর্মাহত হয়ে পড়ি। তিনি বলেন, তার কোনো ধারণাই নেই কেন সিনওয়ার সেখানে গিয়েছিলেন এবং কীভাবে তিনি ধরা পড়লেন। এর সঙ্গে আমার, ভাই ও ছেলেদের কোনো সম্পর্কই ছিল না।

আবু তাহার দেওয়া ছবি বিবিসি যাচাই করে দেখেছে, সিনওয়ার যে বাড়িতে নিহত হন, সেই তারই। যাচাই করতে গিয়ে বিবিসি ভেরিফাই ফুটেজে থাকা বাড়ির জানালার খিলান, দরজার বাইরের সাজসজ্জা ও আর্মচেয়ারের ছবি মিলিয়ে দেখেছে।

তবে বিবিসি স্বাধীনভাবে এটি নিশ্চিত করতে পারেনি, বাড়িটির মালিক আবু তাহা।

বিবিসি ইয়াহিয়া সিনওয়ার হত্যার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, যে বাড়িটিতে তাকে শেষবার দেখা গিয়েছিল, সেটি ছিল সেই এলাকায় আংশিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত কয়েকটি ভবনের একটি। ওই এলাকায় ইসরায়েল ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল।

গত মে মাসে রাফায় ইসরায়েলি হামলা ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে। হামলায় ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি পালিয়ে যেতে বাধ্য হন বলে জানায় জাতিসংঘ।

অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মতো স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হন। কারণ তারা গাজার অন্যান্য অংশ থেকে বিতাড়িত হয়ে তারা রাফা ও আশপাশের অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

আবু তাহা বলেন, ভাইদের সহযোগিতা নিয়ে তিনি রাফায় বাড়িটি নির্মাণ করেন। এটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল দুই লাখ শেকেল। যখন তিনি বাড়িটি ছেড়ে যান তখন এর অবস্থা ভালো ছিল।

তিনি তার বাড়ির কমলা রঙের সোফা এবং একটি কমলা রঙের ক্যাসেরোল পাত্রের কথা বর্ণনা করছিলেন, মনে করলেন সেগুলোকে শেষবার দেখেছিলেন যখন তিনি বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছিলেন।

তিনি বলেন, কিছু জিনিস আমার মা নিয়ে এসেছিলেন, আর সেগুলো আমার জন্য খুবই মূল্যবান, এগুলো শুধুই স্মৃতি।

“যা ঘটেছে, তা আমাকে গভীরভাবে মনঃক্ষুণ্ণ করেছে। যে বাড়িটি তৈরি করেছিলাম সেটি শেষ হয়ে গেছে। আমার সব সঞ্চয় হারিয়ে গেছে,” তিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহই আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
আরএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।