দিল্লির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুকে অভিশংসনের জন্য বিরোধীদের ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর দুই এজেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের জানুয়ারিতে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র)-এর নির্দেশে কিছু এজেন্ট মালদ্বীপের বিরোধী নেতাদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ শুরু করে। তাদের আলোচনার বিষয় ছিল সদ্যনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুকে ক্ষমতাচ্যুত করা।
‘ডেমোক্র্যাটিক রিনিউয়াল ইনিশিয়েটিভ’ নামে একটি নথি ওয়াশিংটন পোস্ট হাতে পেয়েছে, যেখানে উল্লেখ রয়েছে বিরোধী এবং মুইজ্জুর নিজের দলের কিছু নেতাসহ মোট ৪০ জন সংসদ সদস্যকে ‘ঘুষ’ দিয়ে তাকে অভিশংসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি নথিতে ১০ জন উচ্চপদস্থ সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা এবং তিনটি প্রভাবশালী অপরাধী গ্যাংকে অর্থ প্রদানের কথা বলা হয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা ৮৭ মিলিয়ন মালদ্বীপীয় রুপিয়া (প্রায় ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) দাবি করে, যা ভারতের কাছ থেকে সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করা হয়।
তবে মাসব্যাপী আলোচনা সত্ত্বেও ষড়যন্ত্রকারীরা মুইজ্জুর অভিশংসনের জন্য প্রয়োজনীয় ভোট জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়। এদিকে, ভারতও এই উদ্যোগে সরাসরি অর্থায়ন বা সমর্থন করার পদক্ষেপ নেয়নি।
বিষয়টি নিয়ে মালদ্বীপ ও ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রায় ২০ বারেরও বেশি কথা বলেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। এতে তারা জানতে পারেন, ভারত মালদ্বীপের প্রধান বিরোধী দল মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে (এমডিপি) শক্তিশালী করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে। কারণ চীন ইতোমধ্যে মুইজ্জু এবং তার মেন্টর সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
মুইজ্জুর নির্বাচনে জয়লাভের পর র-এর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা দুই ভারতীয় মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে মুইজ্জুকে উৎখাতের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেন। মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন শিরিশ থোরাট, যিনি একজন প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা এবং প্রাইভেট মিলিটারি কন্ট্রাক্টর। তিনি অতীতে ‘ইসলামী উগ্রবাদ’ দমন করতে মালদ্বীপে দিল্লিঘেঁষা প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশীদকে সহায়তা করেছিলেন। অপরজন ছিলেন সাভিও রোদ্রিগেজ, যিনি একজন প্রকাশক ও ভারতের শাসক দলের প্রাক্তন মুখপাত্র।
মুইজ্জু পরিবারের একজন উপদেষ্টা ওয়াশিংটন পোস্টেকে ‘র’-এর কর্মকর্তার ফোনকল ও বৈঠকের রেকর্ড দেন। যদিও সেগুলো তিনি কীভাবে সংগ্রহ করেছেন তা ব্যাখ্যা করেননি। থোরাট ও রোদ্রিগেজ আলাদাভাবে এই পরিকল্পনার অস্তিত্ব নিশ্চিত করলেও তারা দাবি করেন, তারা সরাসরি ভারত সরকারের পক্ষে কাজ করেননি।
তবে ‘র’-এর জড়িত থাকা বা ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ে এই পরিকল্পনা অনুমোদন হয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য মেলেনি।
যোগাযোগ করা হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওয়াশিংটন পোস্টের প্রশ্নের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। আর মুইজ্জুর সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪
এমএম