ঢাকা, শনিবার, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন

মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়েছিলেন তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী-কন্যা, দুর্নীতির অভিযোগে প্রত্যাখ্যান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৫
মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়েছিলেন তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী-কন্যা, দুর্নীতির অভিযোগে প্রত্যাখ্যান শাহীন সিদ্দিক, তারিক সিদ্দিক ও এ দম্পতির মেয়ে বুশরা সিদ্দিক (বাঁ থেকে)

ইউরোপের দেশ মাল্টার নাগরিকত্ব পেতে ২০১৩ ও ২০১৫ সালে মোট দুইবার আবেদন করেছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক। তবে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

অর্থপাচার, দুর্নীতি, প্রতারণা ও ঘুষের অভিযোগ থাকায় তার নাগরিকত্বের আবেদন দুইবারই প্রত্যাখ্যান করেছে মাল্টার একটি অভিবাসন সংস্থা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

শাহীন সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপি ও সরকারের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের চাচি। এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী। তারিক আহমেদ সিদ্দিক ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন।

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে মাল্টার নাগরিকত্ব–বিনিয়োগ প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্বে থাকা হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স নামে একটি সংস্থা শাহীন সিদ্দিকের আবেদন ফিরিয়ে দেয়। এই সংস্থাটি সেসময় বিদেশি নাগরিকদের মাল্টার নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে কাজ করত।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে আসা এ সংক্রান্ত নথিপত্রের তথ্য অনুযায়ী, শাহীন সিদ্দিক ঢাকায় ‘প্রচ্ছায়া’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপারসন ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘অবৈধভাবে সরকারি জমি দখলের’ অভিযোগ ছিল।

২০১২ সালে ‘প্রচ্ছায়া’ সংস্থার নামে শাহীন সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ঢাকায় মূল্যবান জমি দখলের অভিযোগ ওঠে। ২০১৬ সালে তিনি এসব জমি বিক্রি করে দেন। অভিযোগ আছে, তিনি তার স্বামী তারিক সিদ্দিকের ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব জমি দখল করেন এবং সুযোগ বুঝে বিক্রি করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মাল্টার ওই অভিবাসন সংস্থা শাহীন সিদ্দিকের আবেদন ফিরিয়ে দেন।

যে কারণে ২০১৫ সালের মার্চে চতুরতার সঙ্গে প্রচ্ছায়ার কথা উল্লেখ না করে নিজেকে ‘দ্য আর্ট প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড’–এর মালিক হিসেবে আবেদন করেন। এবার শাহীন সিদ্দিক নিজের ও মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের জন্য মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদন করেন।  

টিউলিপ সিদ্দিকের আপন চাচাতো বোন বুশরা। মাল্টার জন্য দ্বিতীয়বার আবেদনে তাকে ইংল্যান্ডের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি লন্ডনে স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা করছিলেন। বুশরা ‘প্রচ্ছায়া’-এর পরিচালক হিসেবেও কাজ করতেন।

ওই আবেদেনের প্রেক্ষিতে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের একজন কর্মচারী এক ই–মেইলে জানান, মাল্টা কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আরও তথ্য চাচ্ছে।

যাচাই-বাছাই শেষে ওই বছরের শেষ দিকে শাহীন সিদ্দিকের দ্বিতীয় আবেদনও বাতিল করা হয়েছে। মাল্টা সরকারের একটি গেজেটে নিশ্চিত করা হয়, শাহীন সিদ্দিক ও তার মেয়ে বুশরা কেউই নাগরিকত্ব পাননি।

নথিতে বলা হয়েছে, আবেদন ফর্মে শাহীন সিদ্দিক তার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের একটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য জমা দেন। তার ওই অ্যাকাউন্টে তখন ২৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার ছিল। যা আবেদনের মাত্র দুই মাস আগে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস সম্পর্কে নথিতে কোনো কিছু উল্লেখ ছিল না।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের মুদ্রা বিধি অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি তার ব্যাংক হিসাব থেকে বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে নিতে পারেন না। ’

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৫
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ