ট্রাম্পের শুল্ক শুল্ক খেলায় তীব্র হচ্ছে বাণিজ্যযুদ্ধ। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ট্রাম্পের চাপানো শুল্কের জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ইইউ বলছে, তারা ২৬ বিলিয়ন ইউরো (২১ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড বা ২৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। খবর বিবিসির।
ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, তারা ১ এপ্রিল থেকে মার্কিন পণ্যের ওপর চলমান শুল্ক স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করবে এবং এপ্রিলের মাঝামাঝি নাগাদ নতুন পাল্টা ব্যবস্থার প্রস্তাব দেবে।
এক বিবৃতিতে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, আমরা অর্থবহ সংলাপে অংশ নিতে প্রস্তুত। আমি বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফচোভিচকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু করে আরও ভালো সমাধান খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিয়েছি।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হওয়ার ফলে এখন যুক্তরাষ্ট্রে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ব্যবসায়ীদের ২৫ শতাংশ কর গুনতে হবে। গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসেন ট্রাম্প। এরপর তিনি বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।
যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী জনাথন রেনল্ডস ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ ‘হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছে যুক্তরাজ্য।
এদিকে চীন জানিয়েছে, তারা নিজেদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বেআইনি বাণিজ্যনীতি’র কড়া সমালোচনা করেছেন।
২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি মেক্সিকো ও কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
যতদিন না ফেন্টানিল ও অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা যায়, ততদিন এই শুল্ক বহাল থাকবে বলেও জানান তিনি।
পরে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং চীনের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, এসব শুল্ক ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
৪ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প তার ঘোষণা থেকে পিছিয়ে যান এবং শেষ মুহূর্তে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউমের সঙ্গে ফোনালাপের পর কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপ ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করতে সম্মত হন।
৫ মার্চ রাত ১২টা ০১ মিনিটে কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক কার্যকর হয়। জবাবে কানাডা ও চীন পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এবং মেক্সিকো জানায়, শিগগিরই তারা প্রতিক্রিয়া জানাবে।
একদিন পর ট্রাম্প মেক্সিকোর জন্য ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাময়িকভাবে শুল্ক মওকুফের অনুমতি দেন। পরে সেই দিনই কানাডার ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে উভয় দেশের কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বহাল রাখার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
১১ মার্চ অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুৎ রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিলে ট্রাম্প পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে কানাডার স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করেন। তবে পরে তিনি তা আবার ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন। এতে ফোর্ডের পক্ষ থেকেও হুমকি প্রত্যাহার করা হয়।
সবশেষ ১২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে সব স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়, যা দেশটির সব বাণিজ্য অংশীদারকে প্রভাবিত করে। এর জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২৬ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৫
আরএইচ