পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো দেখলে মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্র হলো সেই কথিত ‘ভালো ছেলেটি’, যার শত্রু সবাই। এখন ‘দুষ্টু ছেলে’দের হাত থেকে দেশটিকে রক্ষা করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গোল্ডেন ডোম— নামটি বাহারি। অত্যাধুনিক এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নাকি যুক্তরাষ্ট্রকে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি থেকেও রক্ষা করতে পারবে। অর্থাৎ, শব্দের চেয়েও পাঁচগুণ গতিতে ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত ঠেকাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি। বিশেষ ওই বর্ম দিয়ে পুরো যুক্তরাষ্ট্রকে ঢেকে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন ট্রাম্প। সেজন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ চেয়ে মার্কিন কংগ্রেসে হিসাবও তুলে ধরেছেন তিনি। সুরক্ষা ব্যবস্থাটি তৈরির রোডম্যাপ ঠিক করতে তিনি ৬০ দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন।
নাম শুনে নিশ্চয়ই ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমের কথা মনে এসেছে। কিন্তু দুটি ব্যবস্থার পার্থক্য নাকি হবে আকাশ-পাতাল। ইহুদিদের রক্ষাকবচটি স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য গড়া হয়েছিল। রাডার সিস্টেম দিয়ে পরিচালিত ওই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মাঝ আকাশে রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে ব্যবহার করে ইসরায়েলি সেনারা। তাও পুরো ইসরায়েলি ভূখণ্ডকে রক্ষা করা যায় না। ইদানীং আয়রন ডোমকেও ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের চোখের বিষ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস আর ইরান।
এখন আয়রন ডোমের চেয়েও শক্তিশালী করে গোল্ডেন ডোমকে তৈরি করা-ই যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা। রাডারের বদলে স্যাটেলাইটভিত্তিক সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দেশটি মহাকাশে ইনফ্রারেড লেজার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। পরিকল্পনা সফল হলে হাইপারসোনিক, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ, তিন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রকেই মাঝ আকাশে ধ্বংস করতে পারবে মার্কিন সামরিক বাহিনী। কৃত্রিম উপগ্রহ দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রের চলার পথ খুঁজে নিয়ে মাঝ আকাশে সেগুলো ধ্বংস করা হবে। লেজার অস্ত্র ব্যবহার করায় তা আয়রন ডোমের চেয়েও সস্তা হবে। এভাবে আকাশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেক ইঞ্চি মাটিকে সুরক্ষা দেবে ‘গোল্ডেন ডোম’।
এমন উচ্চাভিলাষী প্রকল্প নিয়ে ট্রাম্পের উঠে-পড়ে লাগার কারণ কী? রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি এখন ইরানের কাছেও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এসে গেছে। নতুন রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ওরেশনিক নিয়েও ভীতি বেড়েছে। নিরাপত্তার খাতিরে ওইসব অস্ত্রকে টপকাতে হবে। তাই মহাপ্রকল্প ‘গোল্ডেন ডোম’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এত তোড়জোড়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৫
এমএইচডি/আরএইচ