ঢাকা, সোমবার, ২৪ চৈত্র ১৪৩১, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

গাজায় ১৫ চিকিৎসাকর্মীকে গুলি করে হত্যায় ‘ভুল’ স্বীকার ইসরায়েলের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৫
গাজায় ১৫ চিকিৎসাকর্মীকে গুলি করে হত্যায় ‘ভুল’ স্বীকার ইসরায়েলের

গাজায় ১৫ চিকিৎসাকর্মীকে গুলি করে হত্যায় ‘ভুল’ স্বীকার করল ইসরায়েল। ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, দক্ষিণ গাজার ওই ঘটনায় তাদের সৈন্যরা ভুল করেছে।

গত ২৩ মার্চ এই হত্যার ঘটনা ঘটে।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) অ্যাম্বুলেন্সের একটি বহর, জাতিসংঘের একটি গাড়ি ও গাজার সিভিল ডিফেন্সের একটি ফায়ার ট্রাক রাফাহর কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণের শিকার হয়।

প্রথমে ইসরায়েল দাবি করেছিল, এই বহরটি অন্ধকারে কোনো হেডলাইট বা ফ্ল্যাশিং লাইট ছাড়াই ‘সন্দেহজনকভাবে’ এগিয়ে আসায় তাদের সৈন্যরা গুলি চালায়। এ ছাড়া বলা হয়, গাড়িগুলোর চলাচলের বিষয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো সমন্বয় করা হয়নি।

তবে নিহত এক চিকিৎসাকর্মীর মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গাড়িগুলোর লাইট জ্বালানো ছিল এবং তারা আহতদের সহায়তা করতে ঘটনাস্থলে যাচ্ছিল।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী আইডিএফ দাবি করেছিল, নিহতদের মধ্যে অন্তত ছয়জন হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যদিও, নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে কোনো প্রমাণ দেয়নি আইডিএফ। সেই সঙ্গে আইডিএফ স্বীকার করেছে, সৈন্যরা গুলি চালানোর সময় গাড়ি বহরে থাকা মানুষেরা নিরস্ত্র ছিলেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের শেয়ার করা ভিডিওটিতে দেখা যায়, গাড়িগুলো সড়কে দাঁড়িয়ে ছিল, তারপর ভোর হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কোনো সতর্কতা ছাড়াই গুলি ছোড়া শুরু হয়।

ফুটেজটি পাঁচ মিনিটের বেশি চলতে থাকে, এবং আহত কর্মী রাদওয়ান নামে একজন প্যারামেডিককে তার শেষ প্রার্থনা করতে শোনা যায়। তারপর ইসরায়েলি সৈন্যদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়, সে সময় তারা গাড়িগুলোর কাছে এগিয়ে আসছিল।

শনিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের ব্রিফ করে বলেন, সৈন্যরা আগে তিনজন হামাস সদস্য বহনকারী একটি গাড়িতে গুলি চালিয়েছিল।

যখন অ্যাম্বুলেন্সগুলো মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে এলাকার কাছে পৌঁছায়, তখন বিমান নজরদারি মনিটর থেকে স্থলে থাকা সৈন্যদের সতর্ক করা হয়, একটি গাড়িবহর ‘সন্দেহজনকভাবে এগিয়ে আসছে’।

অ্যাম্বুলেন্সগুলো হামাসের গাড়ির পাশে থামায়, সৈন্যরা মনে করেছিল যে তারা হুমকির সম্মুখীন, এবং এজন্য তারা গুলি চালিয়েছিল। যদিও জরুরি কর্মীদের কারো কাছে অস্ত্র ছিল, তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এখন ইসরায়েল তাদের আগের দাবি ভুল বলে স্বীকার করেছে, যেখানে তারা দাবি করেছিল যে গাড়িগুলো আলো ছাড়া এগিয়ে এসেছিল। রিপোর্টে ওই ঘটনায় জড়িত সৈন্যদের দায়ী করা হয়েছে।

জরুরি চিকিৎসাকর্মী আশরাফ আবু লাবদার বাবা বলেছেন যে তাকে ‘ঠান্ডা মাথায়’ হত্যা করা হয়েছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় যে, গাড়িগুলোর অবস্থান স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছিল এবং প্যারামেডিক কর্মীরা রিফ্লেকটিভ হাই-ভিউজ ইউনিফর্ম পরে ছিলেন, অর্থাৎ অনেক দূর থেকে প্রতিফলিত হয় এমন পোশাক পরে ছিলেন।

কর্মকর্তারা জানান, সৈন্যরা ওই ১৫ জন মৃত কর্মীর মরদেহ বালি দিয়ে চাপা দিয়েছিল, যাতে সেগুলো বন্যপ্রাণী থেকে রক্ষা পায়, পরের দিন রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য গাড়িগুলি সরিয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

ঘটনার এক সপ্তাহ পরও তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি কারণ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, নিরাপদভাবে এলাকায় চলাচল করতে পারেনি বা ঘটনাস্থলটি শনাক্ত করতে পারেনি।

যখন একটি সহায়ক দল মরদেহগুলো খুঁজে পায়, তখন তারা রেফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোনও পায়, যেখানে ঘটনার ফুটেজ ছিল।

কিছু কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই জরুরি চিকিৎসাকর্মীদের হাতকড়া পরানো হয়েছিল। তবে, ওই দাবি অস্বীকার করে ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তারা বলেছেন, মৃত্যুর আগে কোনো মেডিকেল কর্মকর্তাকে হাতকড়া পরানো হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২৫

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।