ঢাকা, শনিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

হার্ভার্ডের মামলায় ‘তুরুপের তাস’ হতে পারে এক ‘সাদামাটা’ আইন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
হার্ভার্ডের মামলায় ‘তুরুপের তাস’ হতে পারে এক ‘সাদামাটা’ আইন গাজাসহ ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার থেকেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থায়ন স্থগিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মামলা দায়ের করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছে, সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে ট্রাম্প সরকারের অন্যায্য চাপের কাছে নতি স্বীকার না করায় তাদের ওপর ওই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তহবিল স্থগিত করার আগে হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ইহুদি-বিরোধী, চরম বামপন্থী প্রতিষ্ঠান’ বলে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, ‘তারা এমন শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে যারা আমাদের দেশটাকে ছিঁড়ে ফেলতে চায়। ’

গাজাসহ ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার থেকেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। মানবাধিকার রক্ষায় এখানকার শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।  মনে করা হচ্ছে, মূলত এ কারণে হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ অর্থায়ন স্থগিত করা হয়েছে।

মামলায় হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ বলেছে, কেন্দ্রীয় অনুদানের ওপর যে শর্ত আরোপ হয়েছে এবং অর্থায়ন স্থগিত করা হয়েছে, তা অবৈধ এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচ্য। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই ‘আইভি লিগ’ (উচ্চমানের আট প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়) প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ করা। হার্ভার্ডের দাবি, ট্রাম্প প্রশাসন সরকারি নীতিমালা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ফেডারেল নিয়ম মেনে চলছে না।

এক্ষেত্রে তারা ১৯৪৬ সালে প্রণীত এক সাধারণ আইন—অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ প্রসিডিউর অ্যাক্ট (এপিএ) টেনে আনছে। তারা বলছে, এই আইন অনুসারে যেকোনো সর্বোচ্চ সংস্থার ‘ইচ্ছাকৃত, খামখেয়ালিপূর্ণ, ক্ষমতার অপব্যবহারমূলক বা অন্য কোনোভাবে আইনের পরিপন্থী’ হিসেবে এই পদক্ষেপকে অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করা উচিত আদালতের।

আইনি লড়াইয়ে তারা এপিএ ১৯৪৬ টেনে আনায় এখন এই আইন নিয়েই সবার মধ্যে আলোচনা। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হার্ভার্ডের এই লড়াইয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এপিএ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের আমলে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর ব্যাপক প্রসার সামলাতে যখন সরকার হিমশিম খাচ্ছিল, তখন এই আইন পাস করা হয়।  

প্রশাসন ও সংবিধান বিষয়ক অধ্যাপক ডেভিড এ. সুপার বলেন, ‘অযৌক্তিক, আবেগপ্রবণ বা অমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে সংস্থাগুলোকে রক্ষার উদ্দেশে এ আইন প্রণীত হয়। কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়া নয়, বরং নির্বাহী শাখার আইন মেনে চলা এবং পদক্ষেপ নেওয়ার আগে প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি বিবেচনা নিশ্চিত করা এর মূল্য লক্ষ্য। ’

এপিএর আওতায় প্রতিটি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা সিদ্ধান্তের ওপর শুনানি দরকার না হলেও কোনো যুক্তি ছাড়াই যেন সংস্থাগুলি তাদের প্রক্রিয়া বা পদক্ষেপ হঠাৎ পরিবর্তন না করে ফেলে, সেটা বলেছে এ আইন।

হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের যুক্তি হলো, কথিত ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অজুহাতে ফেডারেল মেডিকেল ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার তহবিল স্থগিত করা একেবারেই কাণ্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত। তাছাড়া কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়া প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়ায়ও এটি হয়নি।

ডেভিড এ. সুপার বলেন, ‘সরকারি সংস্থাগুলোকে তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। যদি তারা বলে যে তারা আগে সতর্কবার্তা দেবে, তবে তাদের সেই সতর্কবার্তাটি দিতেই হবে। তারা এটা বলতে পারে না যে, আমরা রেগে গেছি, তাই আমরা সতর্কবার্তা না দিয়েই পদক্ষেপ নেব। ’

এপিএর বিভিন্ন ধারা হাভার্ডের জন্য আইনি লড়াইকে সহজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশনের প্রেসিডেন্ট টেড মিচেল বলেন, ‘হার্ভার্ড পুরোপুরি সঠিক কাজ করেছে। তারা একটি অত্যন্ত সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবং তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো—আমি মনে করি—তারা খুবই শক্তিশালী যুক্তি তুলে ধরেছে যে কেন এই ধরনের কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ সহ্যসীমার বাইরে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২২১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।