ঢাকা, শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩২, ০৩ মে ২০২৫, ০৫ জিলকদ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়ালে চীনের ভূমিকা কী হবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩:২৩, মে ৩, ২০২৫
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়ালে চীনের ভূমিকা কী হবে?

পহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ভারত হামলা চালাতে পারে।

এই উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে চীনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পাকিস্তান-চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এখন  প্রশ্ন উঠছে— ভারত কি চীনের প্রতিক্রিয়ার কথা মাথায় রেখে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে?

চীন অবশ্য এরইমধ্যে জানিয়েছে, তারা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। সম্প্রতি পাক উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে আলাপের সময় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানান।

হামলার পরদিনই চীন এই ঘটনার নিন্দা জানায়। ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চীনের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে আর তারা পাকিস্তানকে কতটা সহায়তা দিতে পারে, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি তা জানার চেষ্টা করেছে।  

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পহেলগাম হামলা নিয়ে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে আলাপে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই নিরপেক্ষ তদন্তের পক্ষে মত দেন।  

চীন মনে করে, এই সংঘাত ভারত-পাকিস্তান কারো জন্যই ভালো নয়, বরং এটি আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকি।

পহেলগামে হামলায় যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা অস্বীকার করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবার সবসময়ে তাদের পাশে থাকার জন্য চীনকে ধন্যবাদও জানিয়েছে।  

বেইজিংয়ের তাই হে ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো আইনার ট্যাঙ্গেনের কথা হলো, কোনো প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানের ওপর অভিযোগের আঙুল তুলছে। কিন্তু অভিযোগের সত্যতার জন্য তো পাকাপোক্ত প্রমাণের দরকার।  

ভারতের হুমকি অনুযায়ী, পানি বন্ধ হলে দুটি দেশের মধ্যে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়বে। ট্যাঙ্গেনের মত, শান্তি বজায় রাখার একমাত্র পথই হল পহেলগাম হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত করা। এই প্রক্রিয়ায় তুরস্ক ও ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোকেও যুক্ত করা যেতে পারে।

পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রয়েছে। পাকিস্তানে বিপুল বিনিয়োগ ছাড়াও দেশটি নিয়মিত আর্থিক সহায়তা ও আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে।

অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পাকিস্তানের জন্য চীন এক বড় ভরসা। দেনা মেটানো, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের  চাপ সামলানো কিংবা প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতায় সব সময় পাশে থেকেছে চীন। তবে পাকিস্তানে চীনা নাগরিকদের ওপর হামলা এবং নিরাপত্তা সংকট বেইজিংয়ের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক তসনিম আসলামের কথায়, এই অঞ্চলে শান্তি বজায় থাকলে মূলত চীনের স্বার্থই পূর্ণ হবে। চীনের দরকার নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ নিরাপদে রাখা।

পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্কের ওপরে গভীরভাবে নজর রাখা কায়েদ-এ-আজম ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুহম্মদ শোয়েবের কথা হলো, চীন সবসময়ই নিরপেক্ষতা বজায় রাখে আর ভারত ও পাকিস্তান– দুই পক্ষকেই সংযত থাকতে বলে থাকে।

তার কথায়, এখনো চীন সেটিই করছে। চীনের একটা বাধ্যবাধকতা হলো যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক-যুদ্ধে ফেঁসে আছে, তাই তারা ভারতের সঙ্গে নতুন কোনো ফ্রন্ট খুলতে চাইবে না।

এই অধ্যাপক ব্যাখ্যা করেন, চীনের বাণিজ্যের একটা বড় অংশীদার ভারত, তাই ভারতের সঙ্গে চীন সবসময়েই মজবুত সম্পর্ক রাখতে চায়। তবে চীন কখনো খোলাখুলি তাদের বক্তব্য প্রকাশ করবে না, তারা সবসময়ের মতোই আকার-ইঙ্গিতে নিজেদের অবস্থান বুঝিয়ে দেবে।  

কূটনৈতিক ফ্রন্টে চীন কীভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করছে, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অধ্যাপক শোয়েব বলছিলেন, চীনের কাছ থেকে পাকিস্তান এই সুবিধাই নিয়েছে। যেভাবে ২০১৯ সালে পুরো বিশ্ব পাকিস্তানের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, এবার আর সেটি হয়নি।

চীনের কাছ থেকে পাকিস্তান কী কী আশা করে- এ নিয়ে বলতে গিয়ে অধ্যাপক শোয়েব বলেন, পাকিস্তানের নীতি নির্ধারকেরা ভালো করেই জানেন, চীন তাদের পেছনে থেকে যুদ্ধ করবে না বা সরাসরি যুদ্ধে শামিলও হবে না।

‘যদি পরিস্থিতি এক বছর আগের মতো থাকত তাহলে হয়ত চীন ভারতের সঙ্গে সীমান্তে কিছু না কিছু করত যাতে ভারতের কাছে এই বার্তা পৌঁছায় যে তাদের দুটি সীমান্তে যুদ্ধ করতে হবে,’ বলছিলেন অধ্যাপক শোয়েব। তার মতে, এখন চীন-ভারত সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে।

তার কথায়, কৃত্রিম উপগ্রহের জন্য চীনের ওপরে নির্ভর করতে হয় পাকিস্তানকে, যার মধ্যে আবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তথ্য আদান-প্রদান। যদি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, তাহলে এসব বিষয়ে চীন ধোঁকা দেয় না।

‘বাইডু’-র উদাহরণ টেনে তিনি বলছিলেন, আমরা বিশ্বের প্রথম দেশ, যাদের বাইডু সিস্টেমসের সামরিক ব্যবহারের ক্ষমতা আছে। ‘বাইডু' চীনের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্থা, যারা সার্চ ইঞ্জিন, স্বয়ংচালিত গাড়ি ও ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের পরিষেবা দিয়ে থাকে।  

অধ্যাপক শোয়েব বলছিলেন যে ভারতীয় জাহাজ ও সেনাবাহিনীর গতিবিধি সংক্রান্ত তথ্যের জন্য পাকিস্তানকে চীনের ওপরে নির্ভর করতে হবে।

বিভিআর ক্ষেপণাস্ত্রের জন্যও পাকিস্তান চীনের ওপর নির্ভরশীল। বিভিআর বা বিয়ন্ড ভিজুয়্যাল রেঞ্জ প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকেও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম।

অধ্যাপক শোয়েবের কথায়, বিগত পাঁচ বছরে পাকিস্তানের কাছে যত অস্ত্র এসেছে, তার প্রতি পাঁচটির মধ্যে চারটিই চীনের। ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হলে এসব অস্ত্রই ব্যবহৃত হবে।

অন্যদিকে আইনার ট্যাঙ্গেনের মতে, চীন পাকিস্তানকে বিভিআর প্রযুক্তিতে বানানো পিএল ১৫ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে, কিন্তু সেটা আগেই সম্পাদিত একটি চুক্তির অধীনে। সাম্প্রতিক ঘটনার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

এই বিশ্লেষকের কথা হলো, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। এই বাস্তবতাই হয়তো সরাসরি যুদ্ধ থেকে দুই দেশকে বিরত রাখছে।

বিবিসি অবলম্বনে

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।