পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে পাল্টা অভিযান চালিয়েছে ভারত। এই সামরিক অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’।
৩৫ বছর বয়সী কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ভারতের সেনাবাহিনীর অন্যতম শীর্ষ নারী কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি কর্মরত সিগন্যাল কর্পসে, যা সেনাবাহিনীর সামরিক যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক্স সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। তিনি সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ একাধিক অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেনা জীবনের শুরুতেই তিনি ইতিহাস গড়েছেন।
২০১৬ সালে তিনি প্রথমবারের মতো খবরের শিরোনামে আসেন, যখন সোফিয়া একজন নারী হিসেবে প্রথমবারের মতো ভারতের পক্ষে একটি আন্তর্জাতিক সামরিক মহড়ায় নেতৃত্ব দেন। পুণেতে অনুষ্ঠিত এই মহড়ায় ১৮টি দেশের সেনাবাহিনী অংশ নেয়। যার মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, জাপানের মতো প্রভাবশালী দেশ। মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল শান্তিরক্ষার প্রস্তুতি। সেখানে ৪০ সদস্যের ভারতীয় সেনাদলের নেতৃত্বে ছিলেন সোফিয়া। ওই মহড়ায় নেতৃত্বদানকারী একমাত্র নারী ছিলেন তিনিই। সেই সময় তার পদবি ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে সোফিয়ার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ এবং পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রী। কর্নেল সোফিয়া ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে ভারতীয় সেনারা পাকিস্তান ও দেশটির অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন ‘জঙ্গি’ ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করেছে।
ভারতের সেনাবাহিনীর ভাষ্যমতে, পাকিস্তানের অন্তত নয়টি জায়গায় এই অভিযান চালানো হয়, যেখানে জঙ্গিদের ঘাঁটি সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সাধারণ নাগরিকদের যেন ক্ষতি না হয়, সে বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে বলে জানায় সেনাবাহিনী। পাকিস্তান সরকার আটজন নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। সীমান্ত এলাকায় এখনো গোলাগুলি চলছে।
সোফিয়া কুরেশির শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত অভিজ্ঞতাও বিস্তৃত। ২০০৬ সালে তিনি কঙ্গোয় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই অভিজ্ঞতাই পরবর্তীকালে তাকে আন্তর্জাতিক মহড়ায় নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। একজন সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশের একাধিক শান্তিরক্ষী প্রশিক্ষকের মধ্যে থেকে সোফিয়াকে বাছাই করা হয়েছিল তার দক্ষতার ভিত্তিতে।
তার পারিবারিক ইতিহাসেও সেনাবাহিনীর দৃঢ় উপস্থিতি রয়েছে। তার দাদা ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য, এবং তার বিয়েও হয়েছে এক সেনা পরিবারে।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে একটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৮ জন পর্যটক নিহত হন। অভিযোগ রয়েছে, হামলাকারীরা প্রথমে পর্যটকদের ধর্মপরিচয় যাচাই করে তারপর টার্গেট করে হত্যাকাণ্ড চালায়। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে এর প্রতিক্রিয়ায় অপারেশন সিঁদুর পরিচালনা করে।
এমজে