ঢাকা, রবিবার, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০১ জুন ২০২৫, ০৪ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কেন সবাই ইব্রাহিম ট্রাওরের কথা বলছে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:২০, মে ৩১, ২০২৫
কেন সবাই ইব্রাহিম ট্রাওরের কথা বলছে? ইব্রাহিম ট্রাওরে

বয়স মাত্র ৩৭, কিন্তু নেতৃত্বে একেবারে পরিপক্ব। ইব্রাহিম ট্রাওরে যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন অনেকেই ভাবেননি তিনি এতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন।

কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে তুলে ধরলেন এমন এক নেতার মতো, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া উপনিবেশবাদের কবল থেকে নিজের দেশকে মুক্ত করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ট্রাওরের কথা শুধু বুরকিনা ফাসোতেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গোটা আফ্রিকায়, এমনকি আফ্রিকার বাইরেও। অনেকেই মনে করেন, তিনি আফ্রিকার বীরদের পথেই হাঁটছেন। ভক্তরা তাকে তুলনা করেন বুরকিনা ফাসোরই আরেক কিংবদন্তি নেতা টমাস সাঙ্কারার সঙ্গে, যিনি ছিলেন একজন মার্কসবাদী বিপ্লবী এবং অনেকের চোখে ‘আফ্রিকার চে গেভারা’।

‘ট্রাওরের প্রভাব অনেক,’ বলছিলেন আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কন্ট্রোল রিস্কসের জ্যেষ্ঠ গবেষক বেভারলি ওচেং। তিনি বিবিসিকে বলেন, আমি এমনকি কেনিয়া থেকেও রাজনীতিক ও লেখকদের বলতে শুনেছি—এই তো সেই মানুষ, যাকে আমরা খুঁজছিলাম।

‘ট্রাওরের বার্তাগুলো এই সময়েরই। এখন অনেক আফ্রিকানই প্রশ্ন তুলছে—পশ্চিমাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? আর এত প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার পরও কেন তাদের মহাদেশে এখনো এত দারিদ্র্য?’

২০২২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর ক্যাপ্টেন ট্রাওরে ফ্রান্সের সঙ্গে পুরোনো ঔপনিবেশিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এর বদলে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ জোট গড়ে তোলেন—যার অংশ হিসেবে একটি রুশ প্যারামিলিটারি বাহিনীও বুরকিনা ফাসোতে মোতায়েন করা হয়। একইসঙ্গে তার সরকার বামঘরানার অর্থনৈতিক নীতির পথে হাঁটে।

এই নীতির আওতায় গঠন করা হয় রাষ্ট্রায়ত্ত খনি প্রতিষ্ঠান। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়— দেশটিতে ব্যবসা করতে চাইলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারকে ১৫ শতাংশ অংশীদারত্ব দিতে হবে। শুধু তাই নয়, তাদের শিখিয়ে দিতে হবে সেসব প্রযুক্তি ও দক্ষতা, যাতে দেশের লোকজন নিজেরাই একদিন সবকিছু পরিচালনা করতে পারে।

এই নিয়ম রুশ খনি প্রতিষ্ঠান নর্ডগোল্ডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়েছে, যাকে চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে বুরকিনা ফাসোর স্বর্ণ খাতে নতুন বিনিয়োগের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়।  

ট্রাওরে যাকে ‘বিপ্লব’ বলে আখ্যায়িত করছেন, তার অংশ হিসেবে দেশটি এখন চেষ্টা করছে নিজেদের খনিজ সম্পদ থেকে প্রকৃত লাভবান হতে। এই লক্ষ্যেই সামরিক সরকার প্রথমবারের মতো দেশের ইতিহাসে একটি স্বর্ণ পরিশোধনাগার (রিফাইনারি) নির্মাণ করছে এবং জাতীয় স্বর্ণ মজুত গড়ে তুলছে।

তবে পশ্চিমা মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর জন্য সময়টা কঠিন হয়ে উঠছে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সারামা রিসোর্সেস নামে একটি কোম্পানি বুরকিনা ফাসোর বিরুদ্ধে একটি মামলা করে, কারণ তাদের খনিজ অনুসন্ধানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছিল।

ট্রাওরের সরকার এরইমধ্যে লন্ডনের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানির মালিকানাধীন দুটি স্বর্ণ খনি জাতীয়করণ করেছে। গত মাসে জানানো হয়েছে, আরও বিদেশি মালিকানাধীন খনির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।  

দক্ষিণ আফ্রিকার ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক এনোক র‍্যান্ডি আইকিনস বিবিসিকে বলেন, ট্রাওরের এই র‍্যাডিক্যাল বা কড়া সংস্কার আফ্রিকাজুড়ে তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়েছে । তার ভাষায়, ‘ট্রাওরে এখন সম্ভবত আফ্রিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রপ্রধান। ’

ট্রাওরের জনপ্রিয়তা বাড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। এতে অবশ্য অনেক ভুয়া তথ্য বা পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে। এসব পোস্ট মূলত তার বিপ্লবী ইমেজকে শক্তিশালী করার জন্যই তৈরি।  

এক ভিডিওতে দেখা যায়, আর কেলি, রিয়ানা, জাস্টিন বিবার ও বিয়ন্সের মতো পরিচিত গায়ক-গায়িকারা ট্রাওরের জন্য গান গাইছেন। তবে গানটি তারা গাননি। এটি ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরি।  

বেভারলি ওচেং জানান, ট্রাওরে প্রথম আফ্রিকানদের নজর কাড়েন ২০২৩ সালে রাশিয়া-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে। সেখানে তিনি আফ্রিকান নেতাদের বলেন, ‘উপনিবেশবাদীরা দড়ি টানলে আমরা যেন পুতুলের মতো না নাচি। ’  ভাষণটি রুশ মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। এর মাধ্যমেই ট্রাওরের ‘সর্বআফ্রিকানবাদী’ ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে।

কিছুদিন আগেই ট্রাওরে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। সেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের নাৎসি জার্মানির ওপর জয়ের ৮০ বছর পূর্তি উদযাপন চলছিল। তিনি এক্স (টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, তিনি ও তার সঙ্গে প্রতিবেশী মালি ও নাইজারের সেনাপ্রধানরা এই জয়ের কথা শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তারা সন্ত্রাসবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেকোনো মূল্যে জিততে চান।

ওচেং বলেন, ট্রাওরের কথা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে প্রচারণা অনেক দূর-দূরান্তে ছড়িয়েছে। আফ্রিকান-আমেরিকান এবং ব্রিটিশ কৃষ্ণাঙ্গরাও তাকে অনেক পছন্দ করে। তিনি বলেন, যারা বর্ণবাদ, দাসপ্রথা এবং উপনিবেশবাদের শিকার হয়েছেন, তারা ট্রাওরের কথায় নিজেদের দেখতে পান।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আফ্রিকান-আমেরিকান গায়ক মিক মিলের কথা। তিনি গত বছর নিজের এক্স হ্যান্ডলে ট্রাওরের প্রশংসা করে লেখেন, তার “উৎসাহ ও হৃদ্যতা” ভালো লাগছে। তবে নাম ভুল করে ট্রাওরেকে বুরকিনা ফাসো লিখে সমালোচনার শিকার হন এবং পরে পোস্ট মুছে ফেলেন।  

কিন্তু ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ট্রাওরেকে ভালো চোখে দেখেন না। তিনি তাকে দেখেন ‘স্বঘোষিত সর্বআফ্রিকানবাদী এবং নয়া উপনিবেশবাদীদের মধ্যকার জটিল এক জোটের অংশ’ হিসেবে।  

এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ২০২৩ সালের এক ভাষণে রাশিয়া ও চীনের কথাও উল্লেখ করেছিলেন। আফ্রিকার যেসব দেশে ফরাসি উপনিবেশবাদ ছিল, সেসব দেশে এই দুই দেশ অভ্যুত্থানের চেষ্টা বা কূটনীতিক ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে, এমন অভিযোগই আনেন তিনি।

ট্রাওরের জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তিনি তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেননি— ১০ বছর ধরে চলা ধর্মীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিদ্রোহ দমন করতে পারেননি। এতে জাতিগত বিভাজন বেড়েছে, এবং এই বিদ্রোহের ধারা প্রতিবেশী দেশ বেনিন পর্যন্ত ছড়িয়েছে।

তার সেনা শাসন বিরোধী মতামতও কঠোরভাবে দমন করেছে। এর শিকার হয়েছে, বিরোধী দল, গণমাধ্যম ও নাগরিক বিভিন্ন সংগঠন। সমালোচকদের, বিশেষ করে চিকিৎসক এবং বিচারকসহ অনেককে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে শাস্তি হিসেবে।

কিংবদন্তি নেতা থমাস সাঙ্কারা ১৯৮৭ সালে নিহত হন। তার সততা ও আত্মত্যাগের জন্য অনেকে তাকে অনেক সম্মান করতেন। আজও তিনি আফ্রিকার অনেক মানুষের কাছে একজন আইকন।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আফ্রিকা বিভাগের উপ-পরিচালক রিনালডো ডেপাগনে বলছিলেন, ট্রাওরে এমন সমর্থন পাচ্ছেন কারণ ‘তিনি এমন একটি দেশের তরুণ নেতা, যেখানে জনসংখ্যার গড় বয়স মাত্র ১৭ দশমিক ৭ বছর। ’

তিনি বিবিসিকে বলেন, তিনি মিডিয়ার ব্যবহার খুব ভাল জানেন, এবং সাঙ্কারার পুনর্জন্ম হিসেবে নিজের জনপ্রিয়তা তৈরি করছেন। আর তিনি রাজনীতির কৌশলও জানেন — যুদ্ধে ভেঙে পড়া জাতিকে বিশ্বাস করাতে পারেন যে সামনে ভালো কিছু আসছে। এটিই তার বড় দক্ষতা।

সাঙ্কারা ১৯৮৩ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসেন।  ‘পিতৃভূমি বা মৃত্যু, আমরা জিতব!’ এই স্লোগান দিয়ে জাতিকে একত্রিত করেন। চার বছর পর আবার এক অভ্যুত্থানে নিহত হন। পরে বুরকিনা ফাসো ট্রাওরের ক্ষমতা দখলের আগ পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রভাবের মধ্যেই ছিল।

কফি আনান আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাবেক কর্মকর্তা ও ঘানার নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রফেসর কুয়েসি আনিং বলছিলেন, এই সামরিক নেতার জনপ্রিয়তা আফ্রিকার, বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকার রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিফলন।

আফ্রোব্যারোমিটারের ২০২৪ সালের জরিপে ৩৯টি দেশে গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন কমে যেতে দেখা যায়। অধ্যাপক আনিং বিবিসিকে বলেন, গণতন্ত্র তরুণদের কাছে আশা দিতে পারেনি। এটি চাকরি, ভালো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘একটি বিকল্প পথ দেখাচ্ছেন এবং ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ যুগের চেতনা আবারও ফিরিয়ে আনছেন। ’

জানুয়ারিতে ঘানার প্রেসিডেন্ট জন মাহামার অভিষেক অনুষ্ঠানে ট্রাওরেই যেন সব আলো কেড়ে নেন। যুদ্ধের পোশাক পরে, কোমরে পিস্তল ঝুলিয়ে যখন তিনি মঞ্চে হাজির হন।

অধ্যাপক আনিং বলেন, সেখানে ২১ জন রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু ট্রাওরে ঢুকতেই চারপাশ আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এমনকি আমার দেশের প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষীরাও তাকে অনুসরণ করতে শুরু করল।  

তিনি বলেন, ট্রাওরে আফ্রিকার কিছু নেতার সম্পূর্ণ বিপরীত এক ছবি তুলে ধরেন, যারা ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না, কিন্তু ভোট কারচুপি করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখেন।

ট্রাওরে বেশ স্টাইলিশ ও আত্মবিশ্বাসী। তার মুখে থাকে খোলামেলা অভিব্যক্তি আর হালকা এক হাসি। তিনি একজন সুবক্তাও বটে, এবং নিজেকে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবেই তুলে ধরেন।

রাশিয়ার মিত্র এই জান্তা সরকার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে— এমন ইঙ্গিত মিলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব ব্যাংকের ইতিবাচক মূল্যায়নে।

চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে এক বিবৃতিতে আইএমএফ জানায়, ‘জটিল মানবিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি‘ সত্ত্বেও ২০২৫ সালে বুরকিনা ফাসোর অর্থনীতি ‘মজবুত‘ থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।  

তারা বলেছে, দেশীয় রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে, সরকারি বেতনের খরচ নিয়ন্ত্রণে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয় বাড়াতে সরকার ‘প্রশংসনীয় অগ্রগতি‘ দেখিয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ২ শতাংশে। তবে দিনে ২ দশমিক ১৫ ডলারের কম আয়ে জীবনযাপন করা মানুষের হার প্রায় দুই শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশে।

এর পেছনে কৃষি ও সেবা খাতে ‘জোরালো প্রবৃদ্ধি’ বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের পরও ফ্রান্স ও আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক রয়ে গেছে শীতল।

সম্প্রতি ট্রাওরেকে নিয়ে এক বিতর্ক তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইকেল ল্যাংলি অভিযোগ তোলেন, তিনি দেশের স্বার্থে নয়, বরং তার জান্তা সরকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই বুরকিনা ফাসোর মজুত স্বর্ণ ব্যবহার করছেন।

এই বক্তব্যটিকে অনেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের কিছু আফ্রিকান মিত্রদের পুরনো ধারণার ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছেন—যেখানে তারা মনে করে, রুশ বাহিনী ট্রাওরেকে টিকিয়ে রেখেছে বুরকিনা ফাসোর স্বর্ণ খাতে অংশীদারত্ব পাওয়ার বিনিময়ে।  

এই অভিযোগ সরাসরি আঘাত হানে ট্রাওরের ভাবমূর্তিতে। কেননা তিনি ২০২৩ সালে ফরাসি সেনাবাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের দাবি করেছিলেন।

চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটির শুনানিতে জেনারেল ল্যাংলির এমন মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাওরের সমর্থকেরা। তারা মনে করেন, তাদের নায়কের গায়ে ইচ্ছেকৃতভাবে কলঙ্ক লেপন করা হচ্ছে।

উত্তেজনা আরও বেড়ে যায় যখন এর কিছুদিন পরই বুরকিনা ফাসোর জান্তা সরকার জানায়—তারা একটি অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিয়েছে। অভিযোগ ছিল, ওই ষড়যন্ত্রকারীরা প্রতিবেশী দেশ আইভরি কোস্টে অবস্থান করছিলেন। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা কমান্ডের প্রধান জেনারেল ল্যাংলি আইভরি কোস্ট সফর করেন।

আইভরি কোস্ট অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, তারা কোনো ষড়যন্ত্রে জড়িত নয়। অপরদিকে, ইউএস আফ্রিকা কমান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, জেনারেল ল্যাংলির সফর মূলত ছিল যৌথ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনার জন্য।  

এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে জান্তা সরকার বুরকিনা ফাসোর রাজধানীতে একটি বিশাল জনসভা আয়োজন করে। তাদের দাবি ছিল— ‘ঔপনিবেশিক শক্তি’ ও তাদের ‘দালালরা’ ক্যাপ্টেন ট্রাওরেকে হটানোর ষড়যন্ত্র করছে।

সেই সমাবেশে অংশ নিয়ে ওসিবি জোহান নামে সংগীতশিল্পী বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, কলিন পাওয়েল মিথ্যা বলেছিলেন, ফলে ইরাক ধ্বংস হয়েছিল। ওবামা মিথ্যা বলেছিলেন, ফলে গাদ্দাফি নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এবার তাদের মিথ্যা আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।

ট্রাওরেকে সমর্থন জানিয়ে লন্ডনসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে একই দিনে একাধিক সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  

এরপর তিনি সামাজিক মাধ্যমে ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় পোস্ট করে সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, একটি নতুন বুরকিনা ফাসো ও নতুন আফ্রিকার স্বপ্নে যারা আমার সঙ্গে ছিলেন, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

তিনি আরও লেখেন, একটি স্বাধীন, মর্যাদাপূর্ণ ও সার্বভৌম আফ্রিকার জন্য আমরা একত্রে, সংহতির মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া উপনিবেশিবাদকে পরাজিত করব।

তরুণ ক্যাপ্টেনের শেষ পরিণতি কী হবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে মালি ও নাইজারের সামরিক নেতাদের সঙ্গে মিলে তিনি নিঃসন্দেহে পশ্চিম আফ্রিকাকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন। এমনকি আরও কয়েকটি দেশ তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে ফরাসি বাহিনীকে নিজেদের দেশ থেকে সরে যেতে বলেছে।

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।