ঢাকা, রবিবার, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০১ জুন ২০২৫, ০৪ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কী আছে উইটকফের গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে? 

আন্তজার্তিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:৪৯, মে ৩১, ২০২৫
কী আছে উইটকফের গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে? 

গত দুই সপ্তাহ ধরে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইসরায়েলি শীর্ষ কর্মকর্তাদের, যার মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও উপদেষ্টা রন ডারমার এবং দোহায় ফিলিস্তিনি-আমেরিকান ব্যবসায়ী বিশারা বাহবাহের মাধ্যমে হামাস নেতাদের সাথে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন।  

শুক্রবার(৩০ মে) ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শীঘ্রই একটি অস্ত্রবিরতি এবং বন্দি মুক্তির চুক্তি সম্পন্ন করতে চলেছেন তিনি।

ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আমরা আপনাদের এ বিষয়ে আজ দিনের মধ্যেই, কিংবা হয়তো আগামীকাল জানাবো এবং আমাদের মনে হচ্ছে এর একটা সম্ভাবনা রয়েছে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন মার্কিন খসড়ায় মূলত ভাষাগত পরিবর্তন আনা হয়েছে, যাতে ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই সম্মত হয়। এতে হামাসকে স্থায়ী অস্ত্রবিরতির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, আর ইসরায়েলকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে যুদ্ধ শেষ করার কোনো আগাম বাধ্যবাধকতা নেই।

উইটকফের জিম্মি-মুক্তি ও যুদ্ধবিরতি জন্য আগের চুক্তিপত্রে যে ১৩টি ধারা ছিল তার মধ্যে রয়েছে: 

১. সময়সীমা: ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি। এই সময়ের জন্য ইসরায়েলের পূর্ণাঙ্গ ভাবে চুক্তি মেনে চলবে এমন নিশ্চয়তা দিচ্ছেন ট্রাম্প।

২. বন্দি মুক্তি:  ৫৮ জনের তালিকা থেকে হামাস ১০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে এবং ১৮ জন মৃতদেহ ফিরিয়ে দেবে। প্রথম দিন ৫ জীবিতকে মুক্তি ও ৯ জনের মৃতদেহ ফেরত দেবে। সপ্তম দিন বাকি ৫ জীবিতকে মুক্তি ও ৯ জনের মৃতদেহ ফেরত দেবে।

৩. মানবিক সহায়তা: হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরপরই গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া শুরু হবে। পুরো যুদ্ধবিরতির সময় এ সহায়তা চলবে, যা জাতিসংঘ ও রেড ক্রিসেন্টসহ সম্মত চ্যানেলের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।

৪. ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম: যুদ্ধবিরতি শুরু হলে গাজায় সব ইসরায়েলি আক্রমণাত্মক অভিযান বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা (আর জিম্মি ও বন্দি মুক্তির দিনগুলোতে ১২ ঘণ্টা) বিমান তৎপরতা (সামরিক ও নজরদারি) বন্ধ থাকবে।

৫.  ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পুনঃবিন্যাস: প্রথম জিম্মি মুক্তির পর, ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজা ও নেটজারিম করিডোরে মানবিক ত্রাণ বিতরণ মানচিত্র অনুযায়ী অবস্থান পরিবর্তন করবে। দ্বিতীয় মুক্তির পরে, দক্ষিণ গাজায় পুনর্বিন্যাস চলবে। চূড়ান্ত মোতায়েন লাইন চলমান আলোচনার মাধ্যমে কারিগরি দলগুলো ঠিক করবে।

৬. আলোচনা: প্রথম দিন থেকেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনার সূচনা হবে, যার মধ্যে থাকবে—জিম্মি ও বন্দি বিনিময়ের শর্ত, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, গাজার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কাঠামো।

৭. রাষ্ট্রপতির সমর্থন: ট্রাম্প এই অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিকে একটি স্থায়ী চুক্তিতে পরিণত করতে চেষ্টা করবেন এবং ন্যায়সঙ্গত আলোচনার জন্য জোর দেবেন।

৮. বন্দি মুক্তি: ১০ জীবিত জিম্মির বিনিময়ে, ইসরায়েল ১২৫ জন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি এবং ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর পর গ্রেপ্তার ১,১১১ জন গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে। ১৮ মৃতদেহের বিনিময়ে, ইসরায়েল ১৮০ গাজাবাসীর মৃতদেহ ফিরিয়ে দেবে। মুক্তি হবে একসঙ্গে, তবে জনসমক্ষে নয়—অর্ধেক প্রথম দিন, বাকি অর্ধেক সপ্তম দিনে।

৯. জিম্মি ও বন্দিদের অবস্থা প্রকাশ: দশম দিনে, হামাস বাকি জিম্মিদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য (জীবিত বা মৃত প্রমাণ, চিকিৎসা প্রতিবেদনসহ) দেবে। একইভাবে, ইসরায়েল ৭ অক্টোবরের পর আটক গাজাবাসীদের এবং তাদের হেফাজতে থাকা মৃতদেহের তথ্য দেবে। হামাস যুদ্ধবিরতির পুরো সময় জিম্মিদের সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

১০. চূড়ান্ত জিম্মি মুক্তি: যদি ৬০ দিনের মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা সফল হয়, তাহলে বাকি ৫৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। আলোচনা অসম্পূর্ণ থাকলেও, ন্যায়সঙ্গত আলোচনা চললে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে।

১১. নিশ্চয়তা: যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতার ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি ও যেকোনো বাড়তি সময়ের নিশ্চয়তা দেবে এবং চূড়ান্ত চুক্তির জন্য গঠনমূলক আলোচনা চালিয়ে যাবে।

১২. প্রধান আলোচক: যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ পুরো চুক্তির বাস্তবায়ন তত্ত্বাবধান করবেন এবং মাঠ পর্যায়ে আলোচনার নেতৃত্ব দেবেন।

১৩. ট্রাম্পের ভূমিকা: ট্রাম্প নিজে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করবেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্প প্রশাসন আলোচনা অব্যাহত রেখে একটি চূড়ান্ত চুক্তি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।  

সূত্র: ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ

এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।