আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ সরকারি দায়িত্ব থেকে বিদায় নিলেন ইলন মাস্ক। ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে বিদায় জানানোর সময় মাস্কের পরনে ছিল একটি কালো ‘ডজ’ লেখা টুপি এবং একটি ‘ডজফাদার’ লেখা টি-শার্ট।
এই সময় মাস্ক বলেন, আমি প্রেসিডেন্টের বন্ধু ও পরামর্শদাতা হিসেবে যুক্ত থাকতে চাই এবং জানান ডজ প্রকল্পের অধীনে তিনি যে ১ ট্রিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা এখনো বাস্তবায়নযোগ্য।
প্রেসিডেন্ট মাস্ককে পাশে রেখে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, সে আসলে ছাড়ছে না, আমার মনে হয় ও ফিরেফিরে আসবে। এ সময় ডজ প্রকল্পকে মাস্কের ‘নিজস্ব সৃষ্টি’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিকতা আইনের অনুযায়ী, বিশেষ সরকারি কর্মচারীরা এক বছরে (৩৬৫ দিনে) ১৩০ দিনের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।
তবে বাইরের এই বন্ধুত্বপূর্ণ ছবির আড়ালে তাদের নীতিগত দূরত্ব এখন অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
গত সপ্তায় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক হাউসে পাস হওয়া ‘ডেমস্টিক পলিসি বিল’ নিয়ে সমালোচনা করেন। যদিও এই বিলটিকে ট্রাম্পের মূল এজেন্ডার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, আমি হতাশ। এই বিল বাজেট ঘাটতি না কমিয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে ডজ টিমের কাজের প্রতি অগ্রাহ্যতা প্রকাশ পায়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিলটিকে ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ বা একটি বড় সুন্দর বিল হিসেবে সম্বোধন করেছেন। এই প্রসঙ্গে মাস্ক রসিকতা করে বলেন, একটা বিল বড় হতে পারে, অথবা সুন্দর হতে পারে—দুটো একসঙ্গে হতে পারে না।
মাস্কের এই মন্তব্য ইতোমধ্যে রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পল-এর সমর্থন পেয়েছে। পল বলেছেন, মাস্ক ঠিক বলেছেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমরা এই বিল নিয়ে আরও আলোচনা করব। কিছু অংশ নিয়ে আমি খুশি নই, তবে কিছু নিয়ে দারুণ খুশি। এভাবেই এসব হয়।
এটাই মাস্ক ও ট্রাম্পের মধ্যে একমাত্র নীতিগত ফারাক নয়। ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়েও ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন মাস্ক। টেসলার যন্ত্রাংশ উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও চীন থেকে আমদানি হয়— এ কারণেই মাস্ক বরাবরই ‘মুক্ত বাণিজ্য ও কম শুল্ক’-এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘শূন্য-শুল্ক ব্যবসা’ চালুর আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে শূন্য শুল্কনীতি বাস্তবায়নের জন্য মাস্কের সরাসরি অনুরোধ সত্ত্বেও ট্রাম্প বাণিজ্য বাধা আরও বাড়িয়ে চলেছেন।
এই উত্তেজনার মধ্যেই ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো মাস্ককে নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, সে আসলে গাড়ি নির্মাতা নয়, গাড়ি সংযোজক মাত্র। মাস্ক কড়া জবাব দিয়ে নাভারোকে ‘মূর্খ বা বোকা’ বলে আখ্যা দেন এবং প্রমাণস্বরূপ ২০২৩ সালের কেনেলি ব্লু বুক-এর একটি রিপোর্ট পোস্ট করেন, যেখানে বলা হয়েছে—টেসলার গাড়িগুলোর অধিকাংশ যন্ত্রাংশ যুক্তরাষ্ট্রেই তৈরি হয়।
রাজনীতিতে প্রবেশ করে ব্যক্তিগত ও আর্থিক দিক থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাস্ক। ওয়াশিংটন পোস্ট-এবিসি নিউজের এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনে মাস্কের কাজের প্রতি বেশিরভাগ আমেরিকান অসন্তুষ্ট। পাশাপাশি তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত বছর ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের পেছনে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার পর মাস্কের সম্পদ কয়েক বিলিয়ন ডলার কমে গেছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে টেসলার বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।
তবু ধারণা করা হচ্ছে, মাস্ক ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা হিসেবেই থেকে যাবেন— অবশ্য তা হবে অনানুষ্ঠানিকভাবে। তবে এটিও স্পষ্ট হচ্ছে যে একসময়ের সুসম্পর্ক এখন ধীরে ধীরে নীতি ও অবস্থানের প্রশ্নে দূরত্বের দিকে এগোচ্ছে।
এমএম