বিশ্বজুড়ে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বাড়ছে। একটি অলাভজনক সংস্থা আটটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে কার্বাপেনেম প্রতিরোধী গ্রাম নেগেটিভ (সিআরজিএন) ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের প্রায় ১৫ লাখ ঘটনার খোঁজ পেয়েছে।
যে দেশগুলোর মধ্যে গ্লোবাল অ্যান্টিবায়োটিক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (জিএআরডিপি) নামের সংস্থাটির নতুন এই গবেষণা পরিচালনা করে তার মধ্যে আছে ভারত, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।
দ্য ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশগুলোতে মাত্র ৬.৯ শতাংশ রোগী উপযুক্ত চিকিৎসা পেয়েছেন। সিআরজিএন সংক্রমণ এবং চিকিৎসার চেষ্টা ভারতেই সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। গবেষণায় বিশ্লেষণ করা অ্যান্টিবায়োটিকের পূর্ণ ডোজের ৮০ শতাংশ ভারতেই সংগ্রহ করা হয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশটি আনুমানিক মোট সংক্রমিত রোগীদের মাত্র ৭.৮% চিকিৎসা করতে পেরেছে। এখানে অ্যান্টিবায়োটিকের একটি সম্পূর্ণ কোর্স বলতে ওষুধটির সম্পূর্ণ ডোজকে বোঝায়, যা একজন রোগীকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংক্রমণ সম্পূর্ণরূপে নিরাময়ের জন্য গ্রহণ করতে হয়।
গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরের বাইরে একটি বাড়তি স্তর থাকে। এটি অনেক অ্যান্টিবায়োটিক থেকে জীবাণুটিকে বাঁচিয়ে দেয়। পানি, খাদ্য, পরিবেশ এবং মানুষের অন্ত্রে সাধারণত গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। এগুলো মূত্রনালীর সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো সংক্রমণ ঘটায়।
আর কার্বাপেনেম হলো ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের একটি শ্রেণি। অনেক ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার গুরুতর সংক্রমণের চিকিৎসায় শেষ অবলম্বন এই অ্যান্টিবায়োটিক। অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করা ব্যাকটেরিয়াকে কার্বাপেনেম প্রতিরোধী গ্রাম নেগেটিভ (সিআরজিএন) ব্যাকটেরিয়া বলা হচ্ছে।
কার্বাপেনেমের মতো শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের সংস্পর্শে এলে কিছু ব্যাকটেরিয়া বিবর্তিত হয়ে সেই অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা প্রতিহত করার ক্ষমতা অর্জন করে। ব্যাকটেরিয়াগুলো তখন কার্বাপেনেম দিয়ে আর মারা যায় না। এগুলোই ‘সুপারবাগ’ হিসেবে পরিচিত। কারণ, এগুলোর সংক্রমণ নিরাময় করা খুব কঠিন হয়ে যায়।
সিআরজিএন ব্যাকটেরিয়া নবজাতক এবং বৃদ্ধদের জন্য মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে হাসপাতালের দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার রোগীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের সংক্রমণ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এসব সংক্রমণের চিকিৎসা করা কঠিন, এমনকি কখনো কখনো অসম্ভবও হয়ে ওঠে। কারণ সিআরজিএন ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকও কাজ করে না।
ভারতের চেন্নাই শহরের অ্যাপোলো হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল গাফফার বলেন, এই সংক্রমণগুলো সব বয়সের মানুষের জন্য একটি দৈনন্দিন বাস্তবতা। তিনি জানান, এমন রোগী প্রায়ই দেখা যায়, যাদের ক্ষেত্রে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করে না, আর তারা মারা যায়।
বিশ্ব অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে একই সময়ে দরিদ্র দেশগুলোতে সঠিক ওষুধ নাগালের বাইরে থাকায় মানুষ নিরাময়যোগ্য সংক্রমণে মারা যাচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি
এমএইচডি/এমএম