ঢাকা, বুধবার, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১১ জুন ২০২৫, ১৪ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

গাজায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে, সহায়তা কেন্দ্র ঘিরেই বেড়ে চলেছে হতাহতের সংখ্যা: রেড ক্রস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:২৪, জুন ১০, ২০২৫
গাজায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে, সহায়তা কেন্দ্র ঘিরেই বেড়ে চলেছে হতাহতের সংখ্যা: রেড ক্রস

ইসরায়েলি আগ্রাসনের চলছেই। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখন ‘চরমভাবে দুর্বল’ অবস্থায় রয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) গত রোববার এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলের টানা বোমাবর্ষণ ও অবরোধের মুখে গাজার হাসপাতালগুলো মারাত্মক চাপে পড়েছে। বিশেষ করে সহায়তা বিতরণকেন্দ্রগুলোর আশপাশে ইসরায়েলি হামলায় বাড়তে থাকা হতাহতের চাপ বহন করতে পারছে না চিকিৎসা ব্যবস্থা।

আইসিআরসি জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালকে ১২ বার ‘মাস ক্যাজুয়ালটি ইনসিডেন্ট’ বা গণহতাহতের জরুরি প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে হয়েছে। অধিকাংশ রোগীই গুলিবিদ্ধ বা বোমার স্প্লিন্টারে আহত হয়েছেন।

বিবৃতিতে সংস্থাটি আরও জানায়, সম্প্রতি আহত হয়ে আসা অধিকাংশ রোগীই বলেছেন, তারা সাহায্য বিতরণকেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন।

গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) উদ্যোগে গত ২৭ মে থেকে চালু হওয়া সহায়তা কেন্দ্রগুলোর আশপাশেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই ফাউন্ডেশনটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনপুষ্ট। গাজায় জাতিসংঘসহ অন্যান্য স্বাধীন ত্রাণ সংস্থাগুলোকে সরিয়ে দিয়ে তারা সরাসরি ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর আগে ১১ সপ্তাহ গাজা ছিল অবরুদ্ধ।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত জিএইচএফের সহায়তা কেন্দ্র ঘিরে হামলায় ১২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৭৩৬ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ৯ জন।

সর্বশেষ হামলায় রাফাহ শহরের আল-আলাম এলাকায় এবং কেন্দ্রীয় গাজার ওয়াদি গাজা ব্রিজের কাছে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালায় বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এতে নিহত হন ১৩ জন এবং আহত হন আরও ১৫৩ জন।

প্রত্যক্ষদর্শী আবদাল্লাহ নূর আল-দিন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, সকাল থেকেই মানুষ রাফাহর আল-আলাম এলাকায় জড়ো হচ্ছিল। ঘণ্টাখানেক পর মানুষ যখন সাহায্য কেন্দ্রের দিকে এগোতে শুরু করে, তখনই সেনারা গুলি চালায়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে মানুষ ‘এগিয়ে আসছিল’, যা সেনাদের জন্য ‘বিপজ্জনক’ হয়ে উঠেছিল, তাই গুলি চালানো হয়েছে।

অন্যদিকে জিএইচএফ দাবি করেছে, রোববার তাদের তিনটি কেন্দ্রের কোনো একটি নিয়েও কোনো ‘ঘটনা’ ঘটেনি।

রেড ক্রস বলছে, গাজার যে কয়টি হাসপাতাল এখনও কার্যকর, সেগুলোর আশপাশেও হামলা বাড়ছে। এতে হাসপাতালগুলোর মধ্যে রোগী স্থানান্তর কঠিন হয়ে উঠেছে এবং অনেক রোগী প্রয়োজনীয় ইনটেনসিভ কেয়ার বা বিশেষায়িত চিকিৎসা পাচ্ছেন না।

সংস্থাটি সতর্ক করেছে, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আরও প্রাণহানি অবশ্যম্ভাবী। পাশাপাশি হাসপাতাল, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও স্বাস্থ্যকর্মীদের রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

আইসিআরসি বলছে, চিকিৎসা কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ দিতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।