ঢাকা, শনিবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৪ জুন ২০২৫, ১৭ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ‘ভয়’ কেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩:২৬, জুন ১৪, ২০২৫
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ‘ভয়’ কেন?

ইরানে ইসরায়েলের হামলা ঘিরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়টি। ইসরায়েল চায় না ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করুক।

 

এরইমধ্যে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাত্তা না দিয়েই ইরানে হামলা চালিয়ে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানসহ বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে।

ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি চালানোর অনুমতি কেন দেওয়া হয় না?

ইরান বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ বেসামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য।  তারা জোর দিয়ে বলেছে যে তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাচ্ছে না।

ক্ষমতাধর কয়েকটি দেশ এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক তদারকি সংস্থা, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মতো সংস্থাগুলো এ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

২০০২ সালে ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনা পাওয়ার পর থেকে ইরানের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।

ইরানের এই কর্মকাণ্ড একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল, যা নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি) নামে পরিচিত। ইরানসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশ এই চুক্তিতে আগেই সই করেছিল।

চুক্তি অনুযায়ী, দেশগুলোকে সামরিক উদ্দেশ্য ছাড়া পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয় — যেমন চিকিৎসা, কৃষি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা এই চুক্তির অধীনে অনুমোদিত নয়।

নিচের রঙিন মানচিত্রে ইরানের বিভিন্ন ধরনের পারমাণবিক স্থাপনার অবস্থান দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে গবেষণা কেন্দ্র, ইউরেনিয়াম খনি ও রূপান্তর কেন্দ্র, একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কারখানা।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কতটা উন্নত?

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন বিদ্যমান পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে, তখন ইরান প্রতিশোধস্বরূপ চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ শর্তভঙ্গ করেছে। এই চুক্তি ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত।  

ইরান হাজার হাজার উন্নত মানের সেন্ট্রিফিউজ (পরিষ্কারক যন্ত্র) স্থাপন করে, যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। অথচ এই যন্ত্র স্থাপন জেসিপিওএর চুক্তি অনুযায়ী নিষিদ্ধ।

পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ইরানের মাত্র ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সর্বোচ্চ ৩০০ কেজি (৬০০ পাউন্ড) পর্যন্ত রাখার অনুমতি ছিল। এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম শুধুমাত্র বেসামরিক পারমাণবিক কর্মকাণ্ড ও গবেষণার জন্য যথেষ্ট, কিন্তু পারমাণবিক বোমার জন্য নয়।

২০২৫ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, ইরানের কাছে প্রায় ২৭৫ কেজি ইউরেনিয়াম ছিল যা তারা ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতায় মজুত করেছে। তাত্ত্বিকভাবে, যদি ইরান আরও বিশুদ্ধকরণের কাজ করে, তবে তা দেশটিকে অর্ধ ডজন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার ক্ষমতা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মনে করেন, ইরান মাত্র এক সপ্তাহে এই ইউরেনিয়ামকে অস্ত্র তৈরির উপযোগী পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। তবে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে তাদের এক বছর থেকে ১৮ মাস সময় লাগতে পারে।

কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, একটি মৌলিক বা সহজ ধরনের পারমাণবিক বোমা ছয় মাস বা তার কম সময়েও তৈরি করা সম্ভব।

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।